সারাদেশের খবর

লক্ষ্মীপুরে আ’লীগ নেতার কার্যালয় থেকে দেশীয় বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ২:০৭:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

রায়পুর (লক্ষীপুর) প্রতিনিধি।।লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে কিশোর নিহতের ঘটনায় হওয়া মামলার প্রধান আসামি বি এম শাহজালাল ওরফে রাহুলের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাচিয়া গ্রামের মিয়ার হাট বাজারের কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়।এ সময় দা,ছেনি,ছোরা,খেলনা অস্ত্রসহ দেশীয় বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রায়পুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী ও রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়ার নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।ওসি শিপন বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন,আওয়ামী লীগ নেতা বি এম শাহজালালের কার্যালয়ে চালানো অভিযানে বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আধিপত্য বিস্তার,মাছঘাটের দখল ও নদী থেকে বালু তোলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চর কাচিয়া গ্রামের মিয়ার হাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।এ সময় রাসেল হোসেন নামের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে (১৪) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার পর দুপুরের দিকে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বি এম শাহজালাল ও তাঁর চার সহযোগী জাকারিয়া রাকিব,মিনাজুল হক, মো. সোহাগ ও মো. সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।এলাকার ক্ষুব্ধ লোকজন এ সময় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে তাঁর ফাঁসি দাবি করেন।ক্ষুব্ধ লোকজনের একাংশ শাহজালালকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করে।শাহজালালের বিরুদ্ধে ধর্ষণ,চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে।

শাহজালালের লোকজনের সঙ্গে ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী নজরুল ইসলামের অনুসারীদের ওই সংঘর্ষ হয়।নিহত কিশোর রাসেল হোসেন ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের ভাতিজা।রাসেলের বাবার নাম মনির হোসেন ব্যাপারী।সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১০ জন।

সংঘর্ষে কিশোর রাসেল ঘটনাস্থলে নিহত হওয়ার পর শাহজালালসহ তাঁর পাঁচ অনুসারী মিয়ার হাট বাজারের ওই কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।পরে এলাকাবাসী কার্যালয়টি ঘেরাও করে।রাসেলের মৃত্যুর ঘটনায় মা ফাতেমা বেগম রায়পুর থানায় মামলা করেন।এতে শাহজালালকে প্রধান আসামি করাসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ার হাট বাজারে নিহত রাসেলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।পরে বাজারের কাছে ব্যাপারী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন,শাহজালালের দখল,চাঁদাবাজি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন লোকজন।কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।এ কারণে লোকজন গতকাল ক্ষুব্ধ হয়ে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলেন।পরে অবরোধ করে তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশের কাছ থেকে।

শাহজালালের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ;-স্থানীয় লোকজন জানান,যুবলীগ দিয়ে শাহজালালের রাজনীতি শুরু।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।তিন বছর আগে চর কাচিয়া গ্রামের মেঘনার সংযোগ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা শুরু করেন।এরপর মিয়ার হাটে নিজের নামে একটি মাছঘাট বসান তিনি। এ ঘাটে জেলেদের মাছ বিক্রি করতে বাধ্য করেন তাঁর লোকজন। বিক্রির ওপর কমিশনের নামে ১০-১২ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

এলাকাবাসী জানান,শাহজালালের জমি দখল ও চাঁদাবাজির কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। পাঁচ বছর আগে এক কিশোরীকে শাহজালাল তাঁর ঢাকার বাসায় কাজে নেন।এরপর ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন তিনি। এ ঘটনায় মামলা হলে কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন।

চর কাচিয়া গ্রামের আমিনুল আজিজের অভিযোগ, শাহজালাল তাঁর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।চাঁদা না পেয়ে তাঁর ওপর হামলা করা হয়।এ ঘটনায় ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি মামলা করেন।

আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা জানান,দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজীর সঙ্গে শাহজালালের সখ্য রয়েছে।তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন আবু সালেহ মো. মিন্টু ফরায়েজী।তিনি বলেন,একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন।

দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মোল্লা বলেন,এলাকায় মাছঘাটের নিয়ন্ত্রণ,তিন বছর ধরে মেঘনার সংযোগ নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু বিক্রি করছেন।চরের জমি দখলসহ সবকিছুতে শাহজালাল সব সময় প্রভাব বিস্তার করেন।

বিষয়টি একাধিকবার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জানিয়েছেন উল্লেখ করে মনির হোসেন বলেন,কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আরও খবর

Sponsered content