সারাদেশের খবর

একবার বিদ্যুৎ গেলে আসার খবর থাকে না-রাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না!

  প্রতিনিধি ২৩ এপ্রিল ২০২৪ , ৯:১৩:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোলা জেলা প্রতিনিধি।।চলমান তীব্র তাপদাহের মধ্যেও চরম বিদ্যুৎ সংকট পোহাচ্ছেন ভোলাবাসী।বৈশাখের মাঝামাঝিতেও নেই বৃষ্টির দেখা। প্রখর রোদের দাপটে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী।তার ওপর লোডশেডিং আরও বাড়িয়েছে দুর্ভোগের মাত্রা।গরমে অস্বস্তির পাশাপাশি বিঘ্ন হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কল-কারখানার উৎপাদন।জেলায় ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট।প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রান্সফরমার,গ্রিড সাবস্টেশন ও টেকসই সঞ্চালন লাইনের অভাবে প্রয়োজনীয় লোড নিতে পারছে না বিতরণ বিভাগ।

ভোলা বিসিক শিল্প নগরীর খাল ফ্লাওয়ার মিলে সরেজমিনে দেখা যায়,শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় লোডশেডিংয়ের কারণে মিল বন্ধ।বিদ্যুৎ আসাতে বিলম্ব হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।গত দুমাস ধরে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা অলস সময় কাটাতে হচ্ছে তাদের।

মিল মালিক জামাল খান ও বিসিক শিল্প নগরীর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরদার জানান,বিদ্যুতের এমন সংকটের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিসিকের উদ্যোক্তারা।শ্রমিকরা দিনের নির্দিষ্ট সময় কাজ করেন।ওই সময়ের মধ্যে কারেন্ট না থাকলে তারা অলস সময় কাটান।কাজ কম হলেও বেতন-ভাতা একই দিতে হয়। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম কিন্তু একই। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করতে পারছে না মিল মালিকরা।

শুধু শহর নয়,ভোলার গ্রামেগঞ্জেও চলছে এমন বিদ্যুৎ সংকট। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে দিনের অর্ধেক সময় থাকতে হচ্ছে বিদ্যুৎবিহীন।

চর সামাইয়া ইউনিয়নের শান্তিরহাট ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন,একবার বিদ্যুৎ গেলে আসার খবর থাকে না।রাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

আব্দুল হামিদ নামে এক বৃদ্ধ বলেন,বিদ্যুৎ যদি এক ঘণ্টা থাকে তাহলে পরের দুই থেকে তিন ঘণ্টা থাকে না।প্রচণ্ড গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে।তীব্র এ গরমে এভাবে লোডশেডিং হতে থাকলে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ব।

শিখা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘এর আগে কোনো দিন এমন কষ্ট হয়নি।রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে বাচ্চারা গরমে কান্না শুরু করে দেয়।বাচ্চাদের সারা শরীর ঘামে ভিজে যায়। এভাবেই প্রতিদিন চলছে।আমরাতো বিদ্যুতের টাকা বাকি রাখি না,তাহলে এ লোডশেডিংয়ের দায় কার?’

নাদিম নামে এক যুবক বলেন,গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছি।রাতে ঘুমাতে পারছি না।ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে চার্জার ফ্যান কিনেছি।কিন্তু ঠিক মতো বিদ্যুৎ না থাকার কারণে সেই চার্জার ফ্যানও চার্জ দিতে পারছি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,জেলা সদরে ২০ মেগাওয়াট, বোরহান উদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলা সদরে ১০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে।এ ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে তারা ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে।এতে করে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে,পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ৯১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে তারা বোরহান উদ্দিন প্লান্ট থেকে ৬৮ থেকে ৭০ মেগাওয়াট ও রেন্টালের একটি ইউনিট থেকে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। এতে তাদের ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।এ ঘাটতি পূরণ করতে চলছে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিং। আর এ লোডশেডিংয়ে কবলে পড়ে চলমান তাপদাহের মধ্যে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের।ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা।

জেলা সদরের সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি গত ২৫ জানুয়ারি বন্ধের পর থেকে বোরহানউদ্দিনের পাওয়ার প্লান্ট থেকে লোড নিচ্ছেন ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু ৯০ মেগাওয়াট ধারণ ক্ষমতার একমাত্র ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রয়োজনের ১৩০ মেগাওয়াট লোড নিতে পারছে না।যার কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বিতরণকারী সংস্থাকে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি গ্রাহকদের।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব-এর জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. সুলাইমান বলেন,ভোলা থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু ভোলার গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।গ্রিড সাবস্টেশনসহ বিতরণের যেসব সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ জানান,২৫ জানুয়ারি রেন্টাল প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ার পর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সোর্স লাইন দিয়ে বোরহানউদ্দিন থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে।সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী লোড না পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের দূরত্ব বেশি হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক সময় লাইন বিচ্যুত হচ্ছে।

এছাড়া বোরহানউদ্দিন প্ল্যান্টের ২টি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে নষ্ট হয়ে আছে।এতে প্রয়োজনীয় লোড নেয়া যাচ্ছে না।নষ্ট ট্রান্সফরমারটি মেরামত করা হলে বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকটা কমে আসবে।ভোলা জেলায় কোনো গ্রিড সাবস্টেশন নাই।বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর মতো একই সমস্যার কথা বললেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. ইছাহাক আলী।বিদ্যুতের ঘাটতি কমাতে তিনি সাড়ে ৩৪ রেন্টাল প্লান্টটি দ্রুত সংস্কারের কথা বলেছেন।

জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন,রেন্টাল প্লান্টটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বোরহানউদ্দিন থেকে পুরাতন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।যার কারণে কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। ষৌএ সমস্যা সমাধানের জন্য সাড়ে ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল প্ল্যান্টটি সচল করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।ঝএছাড়া গ্রিড সাবস্টেশন দ্রুত নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

জেলার অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বোরহানউদ্দিন প্লান্টের দুটি ট্রান্সফরমারের একটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে বিকল হয়ে আছে।আর গ্রিড সাবস্টেশনের জন্য জেলা সদর ও চরফ্যাসন জমি অধিগ্রহণ করা হলেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি।

আরও খবর

Sponsered content