সম্পাদকীয়

সাংবাদিকতা একটি চ্যালিঞ্জিং পেশা

  প্রতিনিধি ২ আগস্ট ২০২৩ , ১:৪৯:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ অর্থাৎ সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে যার কতোটুকু কি সম্ভব হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।আইনি কাঠামো দ্বারা সুরক্ষা না দিলে সাংবাদিক সমাজ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা নিগৃহীত হতে থাকবে,যার চরম পর্যায় বর্তমান অবস্থাকে বলা যায়। সঠিক পদ্ধতি ও ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারার কারনে এখন সাংবাদিকতা হয়েছে বানিজ্যিক কার্যক্রম।গ্ৰুপ অফ ইন্ড্রাষ্ট্রির অংশ হয়েছে মিডিয়ার দোকানদারী বানিজ্য। ফলে গুণীজনের প্রশ্ন: সাংবাদিক যদি ব্যবসায়ীর বেতনে চাকরে হয় তবে ব্যবসায়ীর ভুলভ্রান্তি,অন্যায় অনিয়ম কে তুলে ধরবে?চাকুরীজীবি চাকর কি কখনও তার কর্তৃপক্ষের দোষের কথা বলতে পারে?কারা সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ বা শত্রু ভাবে?

কারা সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ মনে করেন?

সহজ কথা হলো,যারা নিজেদের অন্যায় আড়াল করতে চায়, যারা অপরাধী- তারাই সাংবাদিককে ভয় পায় বা প্রতিপক্ষ ভাবে। কারণ,একজন সরকারি কর্মকর্তা,একজন পুলিশ, একজন ঠিকাদার,একজন অন্য যেকোনো পেশার মানুষ যখন অন্যায় করে,সেই অন্যায়টি একজন অন্য পেশার মানুষ দেখে ফেললে বা জেনে গেলে সেটি যত না ঝুঁকি তৈরি করে, একজন সৎ সাংবাদিক জেনে গেলে সেই ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।কারণ,একজন সৎ সাংবাদিককে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।

জার্নালিজম (Journalism) বা সাংবাদিকতা বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যারা খবর লেখেন বা আমাদের সাথে তুলে ধরেন তাদের কথা। মজার ব্যাপার এই যে সাংবাদিকতা ব্যাপারটা কিন্তু ঐ টুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে জড়িয়ে থাকে প্রচুর কর্মকান্ড, যেমন খবর এডিট করা, সাজিয়ে লেখা, প্ল্যান করা, ব্রডকাস্ট করা ইত্যাদি।

সাংবাদিকতার সংজ্ঞা । Definition of journalism by different authors…
সাংবাদিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লেসলি স্টীফেন বলেন, যে বিষয়গুলোর সম্পর্কে তুমি অজ্ঞ সে বিষয়গুলোর ওপর পারিশ্রমিক নিয়ে লেখাই হচ্ছে সাংবাদিকতা ।
B.N Ahuja তাঁর Theory and practice of journalism বইতে বলেছেন, “সাংবাদিকতা হল সামাজিক কার্যাবলির ঐ অংশ যেটি সমাজের সংবাদ এবং মতার্দশ প্রচারের সঙ্গে যুক্ত।”

সুতরাং, সাংবাদিকতা হল জীবন, সমাজ ও রাষ্টের গতি প্রকৃতি বর্ণনার একটি কৌশল । চিন্তা ধারার উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের ধারক ও বাহক হলো সাংবাদিকতা । আর একটি সংবাদপত্র হচ্ছে এক একটি দিনের ইতিহাস বা ঐ সমাজের প্রতিচ্ছবি । সাংবাদিকতা হচ্ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, বিনোদন প্রভৃতি বিকাশের মূল বাহন। বর্তমানে রেড়িও, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট প্রভৃত্তির কল্যাণে সাংবাদিকতা আগের মত কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাই বলা যায়, সাংবাদিকতা বর্তমানে মানুষের আচার-অনুষ্ঠান, কাজ-কর্মে প্রভাব বিস্তারকারী সবচেয়ে শক্তিশালী একটি উপাদানের নাম সাংবাদিকতা।।

‘‘সাংবাদিক’’ অর্থ এমন কোনো ব্যক্তি যিনি প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া বা বার্তা সংস্থার কাজে একজন সার্বক্ষণিক সাংবাদিক হিসাবে নিয়োজিত আছেন অথবা উক্ত মিডিয়া বা সংস্থার সম্পাদক,বার্তা সম্পাদক, উপ-সম্পাদক,সহকারী সম্পাদক,ফিচার লেখক, রিপোর্টার,সংবাদদাতা, কপি রাইটার,কার্টুনিস্ট, সংবাদ চিত্রগ্রাহক এবং সম্পাদনা সহকারী,এবং সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা,নির্ধারিত কোনো পদধারীগণও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন।তবে সাংবাদিককে জাতির বিবেক বলে গণ্য করা হয়। সে অর্থে সাংবাদিক একজন মহান ব্যক্তির পরিচয়।

একথা সকলের জানা যে সাংবাদিকতা (Journalism) অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পেশা এবং সাংবাদিক হওয়ার উপায় জানলে দারুণ এই পেশা দিয়ে আপনিও নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড করতে পারেন।একজন ভালো মানের সাংবাদিক হতে হলে অনেক মেধা,বৈষয়িক জ্ঞান,লেখাপড়া থাকতে হয়। তবে সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ন্যূনতম এইচএসসি পাশ হলেই চলে। আসলে সাংবাদিকতা কোনো আভিধানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই চলে না। একজন সাংবাদিকের মানসিক উচ্চতা দরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের।

আধুনিক ধারায় কার্যক্রমের ভিত্তিক সাংবাদিকের কিছু উদাহরণ:

১) সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিক;
২) অনুসন্ধানি সাংবাদিক;
৩) কৃষি সাংবাদিক;
৪) ক্রীড়া সাংবাদিক;
৫) বিনোদন সাংবাদিক;
৬) নাগরিক সাংবাদিক;
৭) সাংস্কৃতিক সাংবাদিক।

সাংবাদিক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা:

যদিও সাংবাদিকতা জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধা-ধরা কোন নিয়ম নেই, তবে নূন্যতম এইচএসসি পাশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। দেশের নামি ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো স্নাতক (অনার্স) বা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) চায়। কিছু ভালো মানের অনলাইন পোর্টালে অনার্স পড়ুয়াদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

তবে আপনি যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন, তাহলে শুধু সাংবাদিকতার ওপর ২ বছরের বিশেষায়িত কোর্স করতে পারেন। বর্তমানে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতার ওপর ডিগ্রী দিয়ে তাকে। পাশাপাশি আপনি চাইলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকেও একটি কোর্স করে নিতে পারেন।

সাংবাদিক হওয়ার উপায়:-

সাংবাদিকতা একটি চ্যালিঞ্জিং পেশা। তাই একজন অভিজ্ঞ ও সফল সাংবাদিক হতে হলে আপনাকে সৎ, সাহসী এবং নির্ভিক হতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে সৃজনশীল লেখনি শক্তি। আজ আমরা কোর্সটিকায় সাংবাদিক হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানবো। একজন সফল সাংবাদিক হতে চাইলে আপনার মধ্যে যে গুণাবলী থাকতে হবে, তা নিচে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হোলো:

১) সাহস: সাংবাদিকতার জন্য সবার প্রথমেই যা দরকার হয়, তাহলে সাহস; সৎ সাহস। আপনি যদি একজন ক্রাইম রিপোর্টার হয়ে থাকেন, তাহলে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনাকে অনেক প্রতিকূলতার সম্মূখীন হতে হবে। কখনো কখনো সরেজমিন তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে অপরাধিদের আক্রোশের শিকার হতে পারেন আপনি।

প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন মহল হতে ক্রমাগত হুমকি, সময় বিশেষ প্রাণনাশের হুমকিও আসবে। কিন্তু একজন সফল সাংবাদিক হতে হলে এসব হুমকিতে ভয় পেলে চলবে না। তাই আপনার ভেতরে যদি নির্ভিক এবং সৎ সাহস কাজ করে, তবেই আপনি সাংবাদিকতাকে জয় করতে পারবেন।

২) লেখনী শক্তি: আপনি যদি পেশাদার কোন গণমাধ্যমে কাজ করতে চান, তাহলে প্রতিদিনই আপনাকে নিত্য নতুন প্রতিবেদন লিখতে হবে। কিন্তু আপনার ভেতরে যদি সৃজনশীল লেখনী শক্তি না থাকে, তাহলে প্রতিদিন নতুন নতুন বিষয়ের ওপর আপনি লিখতে পারবেন না। তাই বিশ্লেষণধর্মী লেখা উপহার দেয়ার জন্য আপনার ভেতরে সৃজনশীল লেখনী শক্তি থাকা অত্যাবশ্যক।

ব্লগিং, সংবাদ সংস্থা বা অন্যান্য মিডিয়া আউটলেটের জন্য একজন ফ্রিল্যান্স লেখক হওয়া লেখালেখিতে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি উপায়। মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন জিনিসগুলো সম্পর্কে লিখুন এবং যে কোনও অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে একটি গল্প খুঁজে পাওয়ার আপনার ক্ষমতা প্রদর্শন করুন।

এতে করে আপনি আপনার সিভিতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত করতে পারবেন। সম্ভাব্যভাবে এটি আপনাকে একটি এন্ট্রি-লেভেলের চাকরি দিতে এবং সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ারের পথে সাহায্য করবে।

৩) উপস্থপনা: আপনি যে কেবল প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতা করবেন, তাই নয়; চাইল কোন টেলিভিশন চ্যানেলেও কাজ করতে পারেন। টেলিভিশনে কাজ করতে হলে আপনাকে ক্যামেরার সামনে আসতে হবে। আর ক্যামেরার সামনে আসতে হলে আপনার কথা বলার ভঙ্গি, শারীরিক ভাষা এবং শব্দচয়ন অত্যন্ত পরিপাটি হতে হবে।

ক্যামেরার সামনে আপনি নিজেকে যতটা সুন্দরভাবে উপস্থপন করতে পারবেন, আপনার প্রতিবেদনটিও ততটা চিত্তাকর্ষক হবে। ফলে আপনার কাজের প্রতিষ্ঠান তথা দর্শকদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

৪) যোগাযোগ ও সম্পর্ক: সংবাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের তাগিদে আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকতে হবে। যেমন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হতে পারে।

৫) নেটওয়ার্কিং: সম্পাদক, সংবাদ প্রতিবেদক এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। একজন পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার পথে আপনার কাজ করার সময় এই লোকেরা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং সহায়ক পরামর্শ দিতে পারে। আপনার নেটওয়ার্ক যত বড় হবে, রেফারেন্স হিসেবে আপনার নামটি তত বেশি মনে পড়বে।

সাংবাদিক হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা:

যদিও সাংবাদিকতা জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার বাধা-ধরা কোন নিয়ম নেই, তবে নূন্যতম এইচএসসি পাশ করাকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। দেশের নামি ও জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলো স্নাতক (অনার্স) বা স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) চায়। কিছু ভালো মানের অনলাইন পোর্টালে অনার্স পড়ুয়াদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

তবে আপনি যদি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে থাকেন, তাহলে শুধু সাংবাদিকতার ওপর ২ বছরের বিশেষায়িত কোর্স করতে পারেন। বর্তমানে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাংবাদিকতার ওপর ডিগ্রী দিয়ে তাকে। পাশাপাশি আপনি চাইলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকেও একটি কোর্স করে নিতে পারেন।

বানিজ্যিক সাংবাদিকতা সাংবাদিকদের করেছে ছোট থেকে আরো ছোট।একটি দেশের কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক, দার্শনিকরা হচ্ছেন জাতীয় সম্পদ।তা এখন ব্যবহার করা হয় ব্যবসায়ীর লাভ-লোকসানের হিসেবে!তবে এত সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গণমাধ্যম সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটিই পরিবেশন করবে,মানুষের এটিই প্রত্যাশা।কিন্তু গণমাধ্যম সব সময় সেটি পারে না। আবার সব সংবাদেরই যেহেতু পক্ষ-বিপক্ষ আছে,ফলে একটি খবর যখন কারও পক্ষে যায়, সেটি কারও বিপক্ষেও যেতে পারে।যখনই কারও বিপক্ষে যায়, তখনই তিনি গণমাধ্যমকে শত্রু বিবেচনা করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তিও মুহূর্তেই গণমাধ্যমকে শত্রু ভাবা শুরু করতে পারেন, যদি তার স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ পরিবেশিত হয়।

রাষ্ট্রও জানে তার সব কার্যক্রমে নজর রাখে গণমাধ্যম। ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের মতো গণমাধ্যমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে বা মামলা দিয়ে শায়েস্তা করা না গেলেও রাষ্ট্র এমন পরিস্থিতি তৈরি করে রাখতে চায়, যাতে গণমাধ্যম নিজেই নিজের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে পড়ে এবং সেই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে গিয়ে অন্যদিকে নজর দেয়ার সুযোগ না পায়।

উপসংহারে বলবো, বাংলাদেশের গণমাধ্যম কতটুকু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এ কথা বোধ হয় কেউই অস্বীকার করবেন না যে, এই সীমিত স্বাধীনতা ও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গণমাধ্যমই দেশকে টিকিয়ে রেখেছে। কারণ চারপাশে এত বেশি খারাপ লোকের আধিপত্য যে, তারা কেবল ক্যামেরাগুলোকেই ভয় পায়। না হলে বহু আগেই সবকিছু পেটের ভেতরে নিয়ে যেত। যেহেতু সবকিছু পেটের ভেতরে নিয়ে হজম করার পথে প্রধান অন্তরায় গণমাধ্যম, অতএব তারাই শত্রু,তারাই প্রতিপক্ষ।

আরও খবর

Sponsered content