সারাদেশ

অন্যের নবজাতক শিশুকে নিজের ছেলে দেখিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন এক নারী!

  প্রতিনিধি ১৫ মে ২০২৩ , ৩:২২:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।ছেলে চাইছিলেন স্বামী,তাই অন্যের নবজাতক শিশুকে নিজের ছেলে দেখিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন এক নারী।

কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে স্বামীর সন্দেহ হয়; চাপে মুখে ওই নারী স্বীকার করেন যে সন্তানটি তার নয়।

এরপর স্বামী পুলিশকে ঘটনাটি জানালে পুলিশ আসল বাবা-মাকে খুঁজে এনে তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে দিয়েছে।

অন্যদিকে স্বামীর মন ভোলাতে যে নারী শিশুটিকে নিজের কাছে এনেছিলেন;সব ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এখন তাকে তালাক দিয়েছেন স্বামী।

সোমবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।এসময় হালিমা নামে ওই নারী,শিশুটির আসল বাবা-মাও ছিলেন।

সাত মাস পর শিশুকে প্রকৃত মায়ের কাছে তুলে দেওয়ার সময় হালিমা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “যেখানে থাকিস ভালো থাকিস।”

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার পেটের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার এই শিশুটিকে এনে মিথ্যা বলে লালন-পালন করেছি।অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”

এখন স্বামী ও ‘সন্তান’ দুটোই হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত ৪১ বছর বয়সী এই নারী বলেন, “অনেক খারাপ লাগছে। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হল,শিশুটিকেও পেলাম না।কী আর করব, ওকে (শিশুটি) দোয়া করা ছাড়া আর তো উপায় নেই।”

সাভার থানা পুলিশ ঘটনাটি জেনে হালিমাসহ ওই শিশুকে রোববার রাতে বিরুলিয়া থেকে উদ্ধার করে।শিশুটির বাবা-মার পরিচয় জানার পর নওগাঁ থেকে তাদের আনা হয়।

বিরুলিয়ায় স্বামী দেলোয়ারের সঙ্গে থাকতেন হালিমা।তার বাড়ি ঝালকাঠিতে।দেলোয়ার তার দ্বিতীয় স্বামী।আবার হালিমাও দেলোয়ারের দ্বিতীয় স্ত্রী।

পুলিশ জানিয়েছে,দেলোয়ারের আগের স্ত্রীর তিন মেয়ে রয়েছে,তাদের সবারই বিয়ে হয়েছে।আগের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর হালিমাকে বিয়ে করেন তিনি। হালিমারও তখন প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল।

ছেলের আশায় দেলোয়ার নতুন করে সংসার পেতেছিলেন জানিয়ে পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন,বিয়ের তিন মাস পর হালিমা স্বামীর বাড়ি থেকে ঝালকাঠিতে চলে গিয়েছিলেন। স্বামী দেলোয়ারকে বলেছিলেন যে তিনি গর্ভবতী,তাই এই সময় বাবার বাড়িতে থাকতে চান।

গত বছরের ৪ অক্টোবর হালিমা স্বামীকে খবর পাঠান যে তার একটি ছেলে হয়েছে।কয়েকদিন পরেই শিশুটিকে নিয়ে বিরুলিয়ার তালবাগে স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেন হালিমা। তবে সম্প্রতি দেলোয়ারের সন্দেহ হলে তিনি স্ত্রীকে চেপে ধরেন।তখন হালিমা স্বীকার করেন যে শিশুটি তাদের নয়। একে সে এনেছে নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে।

এরপর দেলোয়ার ঘটনাটি সাভার থানায় জানালে পুলিশ ওই শিশুর প্রকৃত বাবা-মাকে নওগাঁ থেকে খুঁজে বের করে বলে জানান আসাদুজ্জামান।

ওই শিশুর বাবা বগুড়ার সান্তাহারে এক চাতালে কাজ করেন। এই শিশু ছাড়াও ২৪ বছর বয়সী এক ছেলে এবং ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে তাদের।

ওই শিশুর মা বলেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম আর আমরা গরিব।এই সন্তান পালতে পারব না বলে ভুল বুঝিয়ে নওগাঁর এক ক্লিনিকের নার্সের মাধ্যমে হালিমাকে দিয়ে দেওয়া হয়।”

হালিমাও বলেন, নওগাঁর এক ক্লিনিকের নার্সের মাধ্যমে এই শিশু পেয়েছেন তিনি।শিশুটিকে পেতে অস্ত্রোপচার ও ওষুধের টাকাই শুধু দিয়েছেন তিনি।

“এই শিশু চুরি করে আনা হয়নি।তারা গরিব এবং তার মা অসুস্থ।তাই বুঝিয়ে নিয়ে এসেছি।”

নওগাঁয় যোগাযোগ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হালিমা সাংবাদিকদের বলেন,তার আগের স্বামীর বাড়ি নওগাঁ।

পুলিশ ওই ক্লিনিক এবং ওই নার্সের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “মূলত হালিমা তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে ভাগ নেওয়ার জন্য অপরের সন্তানকে তার স্বামীর ঔরসজাত সন্তান হিসেবে পরিচিত করেন।কিন্তু এই ধরনের একটি মিথ্যা গল্প সাজানোর কারণে দেলোয়ার হালিমাকে তালাক দিয়েছেন।”

আরও খবর

Sponsered content