সম্পাদকীয়

তোর নাগরই তোকে আমাদের কাছে বিক্রি কইরা দিছে”

  প্রতিনিধি ২৫ অক্টোবর ২০২২ , ৩:২৭:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ছোটবেলায় কাঞ্চাসোনা বরণ দেখে দাদু তার নাতনীর নাম রাখে সুবর্ণা। সুবর্ণাকে গর্ভে রেখেই মৃত্যু হয় তার বাবার। জন্মের ঠিক দুইবছরের মাথায় তার নানা অনেকটা জোর করে তার মা কে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয় অন্যত্র। বড় হয়ে সুবর্ণা শুনেছে তার মা রূপবতী ছিলেন প্রচুর। তাই সন্তান আছে জেনেও একজন ধনী ব্যাক্তি সুবর্ণার মা কে বিয়ে করতে চাইলে সুবর্ণা নানা লোভে পড়ে মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেন৷ বিয়ের পর সুবর্ণার মা বিদেশ চলে গেলে দেশে আর কারও সাথে যোগাযোগ রাখেনি।

সুবর্ণার মায়ের চেহারা মনে নেই। চাচীরা বলে সে নাকি বাবার মত দেখতে হয়েছে। তার বাবাও নাকি অনেক সুন্দর ছিল। তবে চোখদুটো নাকি তার মায়ের মত।তবে সুন্দরী হলেও সুবর্ণাকে কেউ কখনো খুশি থাকতে দেখেনা। বেশিরভাগ সময় সে চুপচাপ কাটিয়ে দেয়। এ বছর ১৭ তে পা দিয়েছে সুবর্ণা।এসএসসি দিয়ে সে ভেবেছিল লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে তার।

তবে দাদু তাকে অনেকটা সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কলেজে ভর্তি করেন।এভাবেই একদিন কলেজের পাশে সোহানের সাথে ১ম দেখা তার।একটা ছেলে একটা পথশিশুকে মারছিল। এই সময় সোহান এসে তাকে বাঁচিয়ে নেয় এবং ছেলেটাকে বকাঝকা করে। এতে ছেলেটা রাগ দেখিয়ে চলে যায়।

এরপর সোহান বাচ্চাটাকে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে তার লেগেছে কি না।দূর থেকে এসব দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সুবর্ণা৷ এখনও কি এমন ভালো মানুষ হয়?এরপর কেটে গিয়েছে কয়েকদিন। সুবর্ণা হয়ত ভুলেই গিয়েছে প্রায় সেদিনের কথা।সেদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় যখন একটা ফাঁকা রাস্তা পার হচ্ছিল হঠাৎ সেই পথশিশুটা এসে সুবর্ণার হাত চেপে ধরে বলে, ” বাঁচান আপা। কয়দিন আগে আমারে এক পোলা মারছিল। তখন এক ভাই আমারে বাঁচায়। ভাই এত ভালো মানুষ যে সেদিনের পর থেকে আমারে নিজের কাছে রাইখা দিছে।

আমার জন্য ভাইয়ের বিপদে পড়তে হইলো।ওই পোলায় তার লোক নিয়া মারতাছে আমার ভাই রে।” বাচ্চাটার সাথে একটু এগিয়ে সুবর্ণা দেখে সেদিনের ছেলেটা দুজন ছেলেসহ সোহানকে মারছে তাদের যেতে দেখে সোহানকে ছেঁড়ে দিয়ে দৌড়ে পালায় তারা।ওরা গিয়ে সোহানকে ধরে।খুঁড়িয়ে হাটে সোহান৷ কোনরকম ধরে নিয়ে রিক্সায় তুলে দেয় সুবর্ণা। কেউ দেখে ফেলবে ভয়ে বাড়ি ফিরে ও। তবে দেখেনা কেউ।

এরপর কেটে যায় আরও তিনদিন।সুবর্ণা কলেজ যাওয়ার পথে সামনে এসে দাঁড়ায় সোহান৷ বলে, ” সেদিন ব্যথায় যন্ত্রনায় আপনাকে ধন্যবাদ দেয়া হয়নি।আপনি সেদিন সত্যি আমাকে বড় বাঁচা বাচিয়েছেন। এভাবেই কথা শুরু তাদের। সোহানকে যতই দেখত মুগ্ধ হত সুবর্ণা। কবে যে ভালোবেসে ফেলল নিজেই জানেনা।সোহান যে গরীব এতিম। নিজেই কাজ করে পড়ালেখা করে। এমন ছেলেকে যে তার পরিবার কখনোই মানবেনা।

কিন্তু এমন মানুষকে সে হারাবে কিভাবে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় দুজন মিলে দূরে কোথাও চলে যাওয়ার।একটা চিঠি লিখে গতরাতে যখন সে পালিয়ে আসে আর কারো জন্য না হোক দাদুর জন্য কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছিল তার।তবু শক্ত হয়ে বেড়িয়ে আসে। রাতের ফাঁকা পথ পেরিয়ে এসে দাঁড়ায় বড় রাস্তায়। দূর থেকে দেখে হেসে ফেলে সোহান। তার এতদিনের নাটক আর অভিনয় সফল হয়েছে। এরপর তাদের লালগাড়িতে সুবর্ণাকে তুলে নিয়ে যায় তাদের নরকপুরীতে।

“মাসী, সুবর্ণা মেয়েটা পালিয়েছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা “মাসীর দিকে তাকিয়ে বলল জাবিবা।সকাল সকাল এমন খবর শুনতে হবে ভাবেনি মাসী। সে রেগে বলল, “মানে? শালী না অজ্ঞান ছিল?” জাবিবা জানায়, গতকাল রাত তিনটায় জ্ঞান ফিরলে সে শাবানা খালাকে দেখতে দিয়ে এসেছিল কিন্তু খালা সকালে উঠে দেখে মেয়েটি নেই।

তোর নাগরই তোকে আমাদের কাছে বিক্রি কইরা দিছে” কথাটা শুনে চমকে উঠে সুবর্ণা।চোখ মুছে তাকায় সামনে থাকা অতি সাজসজ্জা করে থাকা মধ্যবয়সী মহিলার দিকে।মহিলা তাকে বলে,” কি রে বিশ্বাস হয়না।

এই দেখ” বলেই তার দিকে মোবাইলটা বাড়িয়ে দেয়। সুবর্ণা চেয়ে দেখে ভিডিওর দিকে। যেখানে সোহান বসে আছে সোফায়।একটুপর সেখানে দেখা গেল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে।সোহানের দিকে একটা টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে দিয়ে বলে ছুরি তো সেই সুন্দরী।

সাব্বাস সোহান।নাম কি রে ছুরির? সোহান বলল, ” সুবর্ণা মাইয়ার নাম,আর তোমারে তো আগেই কইছিলাম এইবার কড়া জিনিস দিমু। তবে ছুরি রে জালে ফাঁসাইতে কিন্তু অনেক কষ্ট হইছে আমার।এরপর ভিডিওতে কি হচ্ছিল দেখতে পায়না সুবর্ণা।মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে। চলবে——-

আরও খবর

Sponsered content