আরো

কক্সবাজারে ইলিশ মাছের সয়লাব তবুও দাম আকাশচুম্বী

  প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৩ , ২:১৯:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি।।নিষেধাজ্ঞাসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের জেলে পল্লীতে হাহাকার চলছিল।তবে গেল সপ্তাহ থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ায় সাগরে নেমেছে অগণিত মাছ ধরার ট্রলার,আর মাছ ভর্তি করে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে ফিশিং বোটগুলো।ঘাটে ইলিশ আর হরেক রকমের মাছ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।

শুধু ইলিশই নয় ছোট বড় সব ট্রলারে ধরা পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (ফিশারি ঘাট),টেকনাফের শামলাপুর ঘাট,সাবরাংয়ের শাহপরীরদ্বীপ মৎস্য ঘাটে ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে জেলেরা ফিরছেন।তবে দাম যেন কমছে না।৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৩শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।দেড় থেকে তার চেয়ে ওজনে বড় ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১৮০০ টাকা।অথচ বিগত সময়ে এ সাইজের মাছের দাম এখনকার অর্ধেকে ছিল।

কক্সবাজার ফিশারি ঘাটের ব্যবসায়ী সাহাবউদ্দিন বলেন,গত কয়েকদিন ধরে প্রায় ট্রলার মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছে। বিগত সময়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে সাড়ে তিনশ টাকা কেজি।কিন্তু এখন একই সাইজের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭শ টাকায়।৮০০ থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম নিচ্ছে ১৩শ।এর চেয়ে ওজনে বড় মাছটির দাম আরও চড়া।বেশি মাছ ধরা পড়লেও দাম যেন কমছে না।নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না এখনো।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন,শুধু ইলিশের দাম বেশি তা নয়,তাইল্ল্যাসহ অন্য প্রজাতির মাছও দাম বেশি। সুস্বাদু বড় তাইল্ল্যা মাছ ফিশারি ঘাটে ৬শ টাকার ওপর কিনতে হয়নি।কিন্তু এবার ৮শ’ টাকার নিচে তা পাওয়া যাচ্ছে না।প্রতিটি ট্রলার ১৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করছে।কোনো ট্রলারই খালি ফিরছে না।ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা ঘাট থেকে কিনে নিয়েছে। ধীরে ধীরে ইলিশের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করেন এ মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।

মৎস্য ব্যবসায়ী শামশুল আলম বলেন,ছোট-বড়,মাঝারি মিলিয়ে দেড় টন ইলিশ কিনেছি।প্রক্রিয়া করে এসব ইলিশ ঢাকা,যাত্রাবাড়ী,কারওয়ান বাজার,আব্দুল্লাহপুর,ফরিদপুর, মাওয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।ইলিশ ছাড়াও কক্সবাজারের প্রতিটি নৌঘাটে লইট্যা,ফাইস্যা, চাপিলা,পোয়া মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ বোঝাই ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন জেলেরা।

চাপিলাসহ অন্য প্রজাতির মাছগুলো প্রতি মণ ৫ হাজার টাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন জেলেরা। অনেকে আবার এসব মাছ প্রক্রিয়াজাত করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন।

কক্সবাজার শহরের বড় বাজারে মাছ কিনতে আসা রহমত উল্লাহ হারেছ বলেন,গত দু-আড়াই মাস বাজারে সাগরের কোনো মাছই দেখা যায়নি।গত কয়েকদিন ধরে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ মিলছে।ইলিশের দাম চড়া হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ তা কিনতে পারছে না।তবে,চাপিলা কেজি প্রতি ১৩০ টাকা,লইট্যা ১০০ টাকায় মিলছে। এ দুপ্রজাতির মাছ এক সপ্তাহ আগেও ১৮০ ও ২৫০ টাকা কিনতে হয়েছে।সাগরে মাছ মিললে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষরা স্বস্তি পায়।

খুরুশকুলের জেলে বেলাল উদ্দিন বলেন,সাগরে মাছ ধরা আমার বাপ-দাদার পেশা।সাগরে ঝুঁকি থাকলেও এ পেশা ছাড়া অন্যখানে শান্তি পাই না।মাছ ধরা পড়লে পেটে ঠিক মতো ভাত দিতে পারি।মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়।মাছ ভালো মতো পেলে অভাব থাকে না। মাছ বিক্রির পর সন্ধ্যায় আবারও সাগরে রওনা দেবো-ইনশাআল্লাহ।

শামলাপুর ঘাট নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন বলেন,বৈরী আবহাওয়ার পর অনেক আশা নিয়ে সাগরে নামা জেলেদের আল্লাহপাক পূরণ করেছেন।সবাই মাছ নিয়েই ঘাটে ফিরেছে। দামও পাওয়া গেছে আশানরূপ।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন বেড়েছে।ঘাটে আসা মাছের সাইজে এটা প্রমাণ হয়। বিরতির পর সাগরে নামলে জেলেরা ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরতে পারে।কক্সবাজারের বিভিন্ন অবতরণ কেন্দ্রে গত কয়েকদিন প্রত্যহ ৫শ’ টনের মতো মাছ ধরা পড়ছে।যার ৬০ শতাংশই ইলিশ।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক বদরুদ্দোজা বলেন,স্বাভাবিক আবহাওয়া বিদ্যমান থাকায় মাছ ধরা পড়ছে। গত কয়েকদিনে পর্যাপ্ত মাছ অবতরণ হচ্ছে।এখানে দৈনিক ২৫ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়,কিন্তু বর্তমানে ৪০ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content