প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২২ , ৪:৫৮:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:-নেত্রকোনার একটি মহিলা মাদরাসায় কোমলমতি শিশুদের ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবুল খায়ের বেলালী পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত আটজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছেন। ধর্ষণের পর তিনি কোরআন শরিফে শিক্ষার্থীদের হাত রেখে তাদের দোজখের ভয় দেখাতেন যাতে তারা ওই কথা কাউকে না বলে। নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
কেন্দুয়া উপজেলার বাদে আঠারবাড়ী মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম আবুল খায়ের বেলালীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দুই ছাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুটি ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, গতকাল শনিবার বিকেলে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে বেলালীকে হাজির করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পরে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, বাদে আঠারবাড়ী মা হাওয়া (আ.) কওমি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম আবুল খায়ের বেলালী সিলেট বালুরচর কওমি মাদরাসা থেকে একজন দাওরায়ে হাদিস অর্জনকারী মাওলানা। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার সোনাকানি গ্রামের মো. ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি একজন সুবক্তা, একজন ইমাম, একাধারে শুক্রবারে জুমার নামাজের খতিব। বেলালী ২০১৫ সাল থেকে বাদে আঠারবাড়ী এলাকায় ওই মহিলা মাদরাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ওই মাদরাসায় রয়েছে প্রায় ৩৫ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রী। তাদের মধ্যে ১৫ জন আবাসিক। সেখানে বেলালীও আবাসিক
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘সময় সুযোগ বুঝে তিনি কলিংবেল চাপতেন আর ওনার পছন্দমতো একজন কোমলমতি ছাত্রীর ডাক পড়ত তাঁর গা, হাত-পা টিপে দেওয়ার জন্য। আর একপর্যায়ে তিনি সেই অবুঝ শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন ও ধর্ষণ করতেন।
ধর্ষণ শেষে আবার কোরআন শরিফ হাতে দিয়ে শপথ করাতেন কাউকে কিছু না বলার জন্য। ভয় দেখিয়ে বলতেন, কাউকে কিছু বললে কিন্তু আল্লাহ তোমাকে দোজখের আগুনে পোড়াবেন। ভয়ে ওই শিশুরা কাউকে কিছু বলত না।’
শাহজাহান মিয়া জানান, গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বেলালী ১১ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন এবং তাকে যথারীতি কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথ করান। কিন্তু সেই শিক্ষার্থী ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হয় এবং সেই যন্ত্রণার মুহৃর্তগুলোর কথা তার বড় বোনসহ বাড়ির লোকজন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাইকে বলে দেয়। এরপর এলাকাবাসী বেলালীকে আটক করে পুলিশে দেয়। তিনি থানায় আটক থাকা অবস্থায় আরো এক শিশু (৭) পুলিশকে জানায় তার ওপর চালানো পাশবিক নির্যাতনের কথা।
কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বিকেলে জানান, গতকাল নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশু দুটির ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছে।