সম্পাদকীয়

জয়-লেখক এই ব্যবসার কথা আগে থেকেই জানেন? নাকি তারাও এই ব্যবসার সাথে জড়িত?

  প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১:৩০:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ইডেন কলেজের ছাত্রীরা ব্যানারে লিখে জানিয়েছে যে সভাপতি একজন দেহব্যবসায়ীও বটে!সাংবাদিকদের এটাও জানানো হয়েছে যে কলেজের সুন্দরী মেয়েদের বেছে বেছে তাদের ব্লাকমেইল করে আয়ত্তে নিয়ে সভাপতি রিভা দেহব্যবসা চালায়!!!

ইডেনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নোংরা সংঘর্ষ, এর মধ্যে কথা উঠে এসেছে যে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা একজন দেহব্যবসায়ী,তার সেকেন্ড ইন কমান্ড রাজিয়া।

উল্লেখ্য যে বেশ কিছুদিন ধরেই গণমাধ্যমে বহুল সমালোচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কলেজের ছাত্রী ছিলেন সেই ইডেন কলেজের বর্তমান সভাপতি (নিজদলের) তামান্না জেসমিন রিভা। তার বিরুদ্ধে অডিও ফাঁস সহ বিভিন্ন রকম জঘন্য ও নাজুক অপরাধ গণমাধ্যমে ভাইরাল। এর মধ্যে‌ই সংঘটিত হয়েছে এই সংঘর্ষ।

এই সংঘর্ষের বরাত দিয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ যা সারা বাংলাদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের অবস্থা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে, “তারা কে কেমন আছে!?” কেননা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান‌ই এহেন ছাত্রলীগের রাজনৈতিক আয়ত্তেই রয়েছে।

ওদিকে সারা বাংলাদেশের ছাত্রলীগ‌ই গণমাধ্যমে কমবেশী সমালোচিত।ছাত্রজীবনেই তারা কোটিপতি, ছাত্রলীগের পদ কোটি টাকায় কেনাবেচা হয়, কেননা একটা লাভজনক পোস্ট পজিশন সহ অভিযোগের অন্ত নেই তাদের বিরুদ্ধে।

ছাত্রীদের দাবি ‘রিভা দেহব্যবসায়ী’, অথচ তাকেই বহাল রাখার মানে কি!?বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নারী কলেজ(প্রখ্যাত) নিয়ে এহেন তথ্য ফাঁস এটাই প্রথম নয়!

উল্লেখ্য ইডেনের অসহায় মেয়েদের নেতাদেরসহ বিভিন্ন লোকের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করার ঘটনা আজকে নতুন না। ২০১০ সালে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দের সময় তৎকালীন সভাপতি জেসমিন শামীমা নিঝুম ও সাধারণ সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন তানিয়ার বিরুদ্ধেও এই একই আন্দোলন হয়। তখনও অন্যতম অভিযোগ ছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীদের বিভিন্ন নেতাদের কাছে যেতে বাধ্য করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, যেসব মেয়েরা সুন্দরী, ফিগার আকর্ষণীয়, একটু অভাবী, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই ও উচ্চাভিলাষী বিশেষ করে ওসব মেয়েদেরকেই ওরা টার্গেট করে। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। সেসময় একাধিক ছাত্রী ও ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মী অভিযোগ করেন যে শুধু নেতাদের বাসায় নয়, বিভিন্ন শিল্পপতি এবং আজিমপুর,হাজারীবাগ, নিউ মার্কেট ও ধানমন্ডি এলাকার ব্যবসায়ীদের বাসায়ও পাঠানো হয় ছাত্রীদের।

এতে রাজি না হলে তাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। সেসময় ইডেনের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ এবং জুনিয়র কর্মীদের কাছে বৃহস্পতিবার রাতটি থাকতো আতঙ্কের। নেতাদের বাসায় যাওয়ার ভয়ে অনেক ছাত্রী ক্লাস থেকে আর হলে ফিরতো না।কারণ নেত্রীরা খোঁজাখুঁজি করে তাদের আদর-যত্ন করে ঠিকানা ধরিয়ে দিতে। অনেক ক্ষেত্রে কলেজের সামনে আবার কখনও বা পলাশী, নিউ মার্কেট অথবা নীলক্ষেত মোড়ে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কার অপেক্ষা করতো।

সেসময়‌ও উল্টা নিঝুম-তানিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেত্রী ইডেনের সহ-সভাপতি চম্পা খাতুন,সাংগঠনিক সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপি, শারমিন সুলতানা শর্মী ও সহসম্পাদক কানিজ ফাতেমাকে সংগঠন বহির্ভূত কাজ করার দায়ে বহিষ্কার করা হয়।

এবার ২০২২ সালে আবারও এক‌ই ঘটনা পুনরায় ফাঁস!ঢাকা শহরে মেয়েরা পড়াশোনা করতে আসে আর তাদের হলে থাকার বিনিময়ে অযাচিত লোকের বিছানায় যেতে বাধ্য করা হয়।

এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মনি চুপ!আর ঘটনার কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হতে না হতেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় একটি প্রজ্ঞাপন,যা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জয় ও লেখকের স্বাক্ষর সম্মিলিত।

সেই প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায় দেহব্যবসায়ী হিসেবে অভিহিত রিভা ও তার সহযোগী রাজিয়াকে বহাল রেখেই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত, বহিষ্কার করা হয়েছে ১৬জনকে!

যা দেখে জনমনে যুক্তিযুক্ত উত্তরসহ প্রশ্ন উদয় হয়েছে:

দেহব্যবসায়ী বলার পরেও রিভা-রাজিয়াকেই কেনো জয় ও লেখক বহাল রাখলো? আর বাকি ১৬ জনকেই বা কেনো বহিষ্কার করলো?

তবে কি জয়-লেখক এই ব্যবসার কথা আগে থেকেই জানেন? নাকি তারাও এই ব্যবসার সাথে জড়িত?

বহিষ্কৃত ১৬জন কি তবে এই দেহব্যবসার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ছিলো, যে তাদের কাজের গাফেলতির কারনে গোপন ব্যবসাটির কথা ফাঁস হয়ে গেলো আর তাই দায়িত্ব অবমাননার কারণে তাদেরকে চুক্তি ও যুক্তি মতে বহিষ্কার করে শাস্তি প্রদান করা হোলো?

ওদিকে, ব্লাকমেইল করে দেহ ব্যবসা করানোর কাজেও কি অদ্বিতীয় রিভা-রাজিয়া আর তাই কি তাদেরকে বহাল রাখা হয়েছে? অবস্থা ঠান্ডা হলে কি আবারও ‘চিকনে’ শুরু করা হবে, -এমন কি কিছু ভাবছে?

নাকি রিভাদের কাছে জয়-লেখকরাও ব্লাকমেইলড,ফলে তাদেরকে বাদ দেয়ার উপায় নেই, এমন তো কিছু নয়!?

নয়তো যাদের নামেই মূল এবং নোংরাতম অভিযোগটি, তাদেরকেই বহাল রেখে বাকিদের বহিষ্কার করার আর কি মানে থাকতে পারে?

জনমনে আরোও প্রশ্নের উদয় হয়েছে যে এই দেহব্যবসার কথা কি মন্ত্রী দীপু মনিও জানেন? নয়তো এমতাবস্থায় তাঁর কোনো আওয়াজ নাই কেনো? তাঁর সাথেই আলোচনা সাপেক্ষে কি জয়-লেখক এই সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছে?নয়তো এতো মারাত্মক একটা নোংরা পরিস্থিতিতে তিনার নিরবতার মানে কি? নাকি এমতাবস্থায় সবাই মিলে কি গণ-অপেক্ষা করছেন যে বিষয়টি সবাই ভুলে যাক,আরেকটা ইস্যু সামনে এসে ধামাচাপা পরে যাক,পরেরটা পরে দেখা যাবে, -এমন কিছু নয়তো!?

আর এমনটাই যদি হয় তবে কি তা প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের জণগনের সাথে বিশ্বাস নিয়ে বেঈমানি করা হয়ে যায় না?

শেষকথা হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশের সকল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সকল কমিটির সদস্যরা মিলে বর্তমান ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার্থী ছাত্রীদের নিয়ে আসলে কি করছে তলে তলে দেহব্যবসা নয় তো!?

আর যদি তাই হয়ে থাকে আর সেই ব্যবসায় যারা আইটেম হয়ে আছে তারা কি কেউই মুখ খুলতে পারছে না ইজ্জত থাকবে না এই ভয়ে!?

তাহলে বাঙ্গালী কার কাছে কি পেলো? আর পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থাই বা কি দাঁড়ালো!?

আরও খবর

Sponsered content