সম্পাদকীয়

এক মাসের ভেতরে পরপর তিনটি উৎসব-স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ আর ঈদ

  প্রতিনিধি ২১ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:২২:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।দেশের সব অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন এসব সাফল্যের সুফল ভোগ করতে পারে—এই দিকগুলো নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল।এক মাসের ভেতরে পরপর তিনটি উৎসব।স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ আর ঈদ।প্রথম দুটো সর্বজনীন (!), আর শেষটা মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এরকম উৎসবমুখর সময়ে তো দেশজুড়ে আনন্দযজ্ঞ চলার কথা। তা কি হচ্ছে? মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে কী দেখতে পাচ্ছেন আপনারা? বাধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস-উল্লাস-আয়োজন নাকি বিষাদ-বিপন্নতা-হতাশা-হাহাকার?

 

আনন্দ ব্যাপারটাই স্বতঃস্ফূর্ত। জোর করে আনন্দ হয় না, আয়োজন করেও হয় না। মানুষের যে কত রকমের দুঃখ থাকে, শোক থাকে, হাহাকার থাকে, অভাব-দারিদ্র্য থাকে, সমস্যা-সংকট থাকে, এইসব নিয়ে সে আনন্দ করবে কী করে যদি তার মন সায় না দেয়? যে মা-বাবা তাদের সন্তানকে অকালে হারিয়েছেন, তাদের শোকের ভার কে মুছবে, কীভাবে মুছবে? তারা তো এক অদৃশ্য পাহাড় বয়ে চলেছেন নিজেদের কাঁধে, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু, সন্তানের মৃতদেহ। যতই আয়োজন হোক, সামাজিকতার খাতিরে যতই হাসিমুখে থাকুন তারা, বুকের ভার কি কখনো কমে তাদের? আনন্দে শামিল হতে পারেন তারা? শুধু সন্তান হারানোর শোকই যে বয়ে বেড়ায় মানুষ তা তো নয়।

 

মানুষের জীবনে এ এক অনিবার্যতা যে, তাকে জীবনের কোনো-না-কোনো পর্যায়ে আপনজনকে হারাতে হয়। মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-স্বজন, এমনকি প্রিয় পোষা প্রাণীর মৃত্যুও তাদেরকে শোকের সাগরে ভাসায়।মৃত্যু এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, খুবই প্রাকৃতিক, আমরা সবাই তা জানি।তবু মেনে নিতে কষ্ট হয়।এমন এক অপার শূন্যতা তৈরি হয়, যে, কোনোদিন তা আর পূরণ হয় না। আনন্দের দিনে, উৎসবের দিনে তাদের কথা আরও বেশি করে মনে পড়ে।

আবার অন্যরকম হারানোও আছে।ছোটবেলায় এমন অনেক পরিবার দেখেছি যে-পরিবারের তরুণ বা যুবক সদস্যটি মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। তার মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়নি, সহযোদ্ধারাও নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি।সেইসব পরিবারের মানুষগুলো এক অনন্ত অপেক্ষায় বসে থাকতেন। ভাবতেন, আজ হোক কাল হোক, ফিরে আসবেই তাদের অতি আদরের ধন। এই ধরনের মর্মান্তিক অপেক্ষা নিয়ে আনন্দ হয়?

 

যুদ্ধ এক অস্বাভিক পরিস্থিতি, সব কিছুই সম্ভব সেখানে, অসম্ভব বলতে কিছু নেই যুদ্ধের অভিধানে। যুদ্ধে জয় যেমন থাকে, পরাজয়ও থাকে।দুই পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা থাকে অনেক।নিশ্চিত মৃত্যুর সংবাদ পেলে শোকের ভার বইতে হয় বটে, কিন্তু অনিশ্চিত অপেক্ষার অবর্ণনীয় যন্ত্রণা ফুরায়।যুদ্ধের এইসব বিবিধ বেদনাও মানুষ মেনে নেয়, যখন স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যটি দেশের আকাশে ওঠে।কিন্তু স্বাধীন দেশে যদি এমন ঘটনা ঘটে? যদি কাউকে মাঝরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা যদি আর কখনো ফিরে না আসে? সহ্য হয় সেই হারানোর বেদনা? সেই পরিবারে আর কখনো আনন্দ আসে? উৎসব আসে?

 

দুরারোগ্য বা আরোগ্যাতীত রোগে ভোগা মানুষ যখন অনিবার্য মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে,অথচ তার তখনও অনেক কাজ করার বাকি,তাকে আনন্দ দেবে কোন উৎসব? তার পরিবারের সদস্যরাই বা আনন্দে মাতবে কী করে?

 

ধরা যাক, একজন মানুষের জীবনে ওপরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।অকালে স্বজন হারাননি,গুম হয়ে যায়নি পরিবারের কোনো সদস্য, কিংবা দুরারোগ্য কোনো অসুখেও ভুগছেন না, কিন্তু তার অভাব-দারিদ্র্য প্রকট। শখ পূরণ তো দূরের কথা, প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্যও নেই। সেই মানুষ উৎসবে শামিল হবেন কী করে? উৎসবের জন্যও তো ন্যূনতম আর্থিক সঙ্গতি লাগে।

 

 

ঈদ আসছে, সেই ঈদের কথাই ধরুন।শিশু-কিশোরেরা ঈদের দিন নতুন জামাকাপড় পরার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে, বাবা-মাও চান তার সন্তানদের নতুন জামা কিনে দিতে। কিন্তু সামর্থ্য যদি না থাকে?যদি প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তার শিশুসন্তানটি বুঝে ফেলে, এবার আর নতুন জামা জুটবে না, যদি তার কোমল মুখটি বিষণ্নতায় ভরে ওঠে, মা-বাবা কি তখন উৎসবে শামিল হতে পারে? নতুন জামার কথা না-হয় বাদই দিলাম,নিম্নআয়ের মানুষদের বাড়িতে ঈদের দিন কি কোনো ভালো খাবার রান্না হবে? পোলাও-মাংস-সেমাই?প্রতিদিনের খাবার জোগাড় করতেই নাভিশ্বাস উঠছে তাদের, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্রেফ দ্বিগুণ হয়ে গেছে গত দু-তিন বছরে, আয় তো বাড়েনি, প্রয়োজনই বা তারা মেটাবে কীভাবে? আর ঈদের দিন পোলাও-মাংসের মতো ‘বিলাসবহুল’ খাদ্যের জোগানই বা তারা পাবে কোথায়?

 

 

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।রোজার দিনে ইফতারের পরপরই বাসার গেট থেকে ডাক শোনা যেত, ‘আম্মাগো, কয়ডা ইফতার দিবেন?’ একই ঘটনা ঘটতো শবে-বরাতের সময়।সন্ধ্যা হতে-না-হতে রুটি কুড়াতে আসত অসংখ্য ছেলেবুড়ো।বিলিয়ে কূল পাওয়া যেত না। একসময় বলতেই হতো, ‘আর তো নাই, বিলানো শেষ!’ এরা সবাই বস্তিবাসী মানুষ।

 

সারা বছরেও ভালো খাবার তাদের ভাগ্যে জুটত না। আর তার পরদিন দেখতাম, রেললাইনের ওপর কাগজ বিছিয়ে সেইসব রুটি শুকাচ্ছে তারা,আরো দু-তিনদিন রেখে খাওয়ার জন্য।ঈদেও এরকম মানুষ আসত বাসায়।যখন গ্রামের বাড়িতে যেতাম, তখনও দেখতাম, অনেক মানুষ বাড়িতে আসত একটু ভালো খাবারের প্রত্যাশায়।এসব দেখে দেখে আমাদের ঈদ-পার্বনের উৎসবগুলো বিষণ্নতায় ভরে উঠত।

 

আমি বরাবরই খুব স্বপ্নবাজ তরুণ ছিলাম।নিজের অক্ষমতার কথা জেনেও স্বপ্ন দেখতাম, একদিন দেশের এই দুর্দশা থাকবে না,এই দেশ একদিন উঠে দাঁড়াবেই। অবস্থা যে একেবারে পাল্টায়নি তা তো নয়! সাত কোটি মানুষের খাবার জোগাড় করতে অক্ষম ছিল যে দেশ, সেই দেশের কৃষকরাই এখন ষোলো কোটি মানুষের জন্য উদ্বৃত্ত শস্য উৎপাদন করছে।ধান,সবজী, মাছ, পোলট্রি–সব খাতেই উৎপাদন বেড়েছে অভাবনীয় রকমের।তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক গতিশীলতা।একটা দেশ যখন দুর্যোগপূর্ণ দরিদ্রবাস্থা থেকে এই অবস্থায় এসে পৌঁছায়,তখন তাকে নিয়ে আশা করার যথেষ্ট কারণ থাকে।আমাদের তা ছিলও।ফসল উৎপাদনে এই অভাবিত সাফল্য,পোশাক খাতে অকল্পনীয় অগ্রগতি–এই দুটো বিষয় দিয়েই তো একটা জাতি দাঁড়িয়ে যেতে পারে।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের রেমিটেন্স।প্রায় এক কোটি মানুষ এখন দেশের বাইরে থাকেন,নিজেরা অকল্পনীয় কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠান।আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ বাড়ে, আমরা তা নিয়ে গর্ব করি।কিন্তু তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবি না।অথচ এই কৃষক-শ্রমিকরাই, এই ‘সাধারণ’ মানুষরাই এ-দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল নায়ক।

 

বেশ কিছু করণীয় ছিল আমাদের।কৃষক যেন তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পান, শ্রমিক যেন তার শ্রমের যথাযথ মূল্য পান,শিশু ও বৃদ্ধরা যেন রাষ্ট্রের বিশেষ মনোযোগ পায়,দেশের সব অঞ্চলের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন এসব সাফল্যের সুফল ভোগ করতে পারে—এই দিকগুলো নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল।দরকার ছিল সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, জনগণের জন্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নেওয়া।অর্থাৎ অর্জিত সাফল্যকে সংহত করার ব্যবস্থা করা, মোটাদাগে বলতে গেলে সবকিছু গুছিয়ে ওঠা। অসম্ভব ছিল না কাজটি। এখনো অসম্ভব নয়।কিন্তু মর্মান্তিক ব্যাপার হলো, আমরা কেবল অবকাঠামোর উন্নয়নের কথাই ভাবলাম। বানালাম সেতু,টানেল,মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, রাস্তাঘাট আর বিশাল বিশাল ভবন। মানবিক উন্নয়নের কথা আমরা ভাবলামই না।জনগণের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণের কথাও আমাদের মনে এল না।এখনো এদেশে বহু মানুষ না খেয়ে থাকে, বহু মানুষের ঘড়বাড়ি নেই, এখনো রাতের বেলায় শহরে বেরোলে ফুটপাতে মানুষকে ঘুমাতে দেখা যায়। মানুষের কথা তো ভাবিইনি, এমনকি প্রকৃতির কথাও ভাবিনি আমরা।

 

অপরিকল্পিত এবং আগ্রাসী উন্নয়নযজ্ঞের ফলে আমরা নির্বিচারে জলাশয়গুলোকে ভরাট করে ফেলেছি, নদীগুলোকে দূষিত করেছি,এমনকি নদী দখলও করেছি, নিধন করেছি অজস্র বৃক্ষ।এর ফলাফল যে মারাত্নক হবে, ভেবে দেখিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি, আবহাওয়া চরম-ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে এবং সেখান থেকে সহসা আমাদের মুক্তি মিলবে না।কেন এমন হলো? এত রক্ত-ঘাম-শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই অপূর্ব সাফল্য কি তাহলে হারিয়েই যাবে?আমরা কি আবার ফিরে যাব সেইসব অসহনীয় দিনগুলোতে? আমাদের রাজনীতি কি কোনোদিন বদলাবে না?

 

লেখার শুরুতে ‘সর্বজনীন’ শব্দটির পাশে বিস্ময়বোধক চিহ্ন দিয়েছিলাম।কারণটা ব্যাখ্যা করি। ইদানীং একটা কথা খুব শোনা যায়, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। কথাটা শুনতে খুব সুন্দর, ভাবতেও ভালো লাগে, সর্বজনীন মানেই তো সবার।কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের উৎসবে একই মন নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে না,একটা দূরত্ব রয়েই যায়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।সেজন্য ধর্মীয় উৎসবগুলো সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে না। বরং সর্বজনীন হতে পারে জাতীয় উৎসবগুলো।যেমন,আমাদের দেশে স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস,নবান্ন,পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি এবং বাংলা নববর্ষের মতো উৎসবগুলো সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারত, হওয়ার কথা ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তা হয়নি।

 

নবান্ন, পৌষ সংক্রান্তি, চৈত্র সংক্রান্তি এবং বাংলা নববর্ষ আমাদের গ্রামীণ কৃষি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। গ্রামের মানুষ ছোট পরিসরে হলেও উৎসবগুলো পালন করে।যদিও সামর্থ্যের প্রশ্নটি সেখানেও প্রকট। আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে উৎসবে সামিল হওয়া কঠিন। সমস্যা হলো শহরের মানুষ নিয়ে।নবান্ন বা পৌষ সংক্রান্তির উৎসবের সঙ্গে নাগরিক জীবনের কোনো যোগই নেই, তাই ঘটা করে পালনের রেওয়াজও নেই। এক ছিল নববর্ষ, যা হতে পারত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গ্রাম ও শহরের মানুষের সম্মিলিত উৎসব। কিন্তু প্রতিবছর বৈশাখ আসার আগেই বাংলা নববর্ষ নিয়ে ধর্মের জিগির তোলে একদল লোক। এই লোকগুলোর কাছে ধর্ম হলো নিজ স্বার্থে ব্যবহারের হাতিয়ার, ধর্মের মর্মবাণী তারা কখনোই উপলব্ধি করে না।

 

তারা জানে না, জানলেও স্বীকার করে না যে,ধর্মের উৎপত্তি এক বিশেষ ভৌগলিক স্থানে হলেও তা কেবল বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে তখনই যখন সে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় সংস্কৃতিকে নিজের ভেতরে জায়গা করে দেয়।ইসলামসহ সব ক’টি প্রধান ধর্মের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।উৎপত্তিস্থলের সীমারেখা ছাড়িয়ে ধর্মগুলো বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছে স্থানিক সংষ্কৃতিকে ধারণ করেই।অথচ কিছু লোক ধর্মের জিগির তুলে মানুষের ভেতরে একটা বিভাজন রেখা টেনে দেয়। সর্বজনীন হতে চেয়েও স্থানীয় উৎসবটি তাই আর সকলের হয়ে ওঠে না।

 

আবার স্বাধীনতা দিবস কিংবা বিজয় দিবসও সর্বজনীন উৎসব হয়ে ওঠেনি এক বিশেষ ধরনের রাজনীতির জন্য।স্বাধীনতাবিরোধী,মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের কাছে এই উৎসব গ্রহণযোগ্য হবে না,তা তো বলাই বাহুল্য।কিন্তু ওরা আর কজন? ওই অল্প কিছু লোক ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই তো মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করে আছে।মুক্তিযুদ্ধ ছিল সর্বতোভাবে জনযুদ্ধ। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী যুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান না নিলে কোনোভাবেই এ দেশকে স্বাধীন করা যেত না। কিন্তু যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দলটি সেই কৃতিত্ব জনগণকে দিতে চায় না।

 

প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে দলীয়করণ-পারিবারিকিকরণ-ব্যক্তিকরণ করা হয়েছে যে মনে হয়, অন্য কারো কোনো অবদান নেই, অংশগ্রহণও নেই।যেন স্বাধীনতার জন্য দেশের তিরিশ লাখ মানুষ প্রাণ দেননি,যেন দুই লাখ মা-বোন ধর্ষিত হননি,যেন হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেননি,যেন অজস্র মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হননি, যেন অজস্র পরিবার পাকিস্তানিদের তাণ্ডবের শিকার হননি,যেন স্বাধীনতা এমনি এমনি এসে গেছে! মুক্তিযুদ্ধের মতো সর্বজনীন ঘটনা নিয়ে এই ধরনের দলীয়করণ-ব্যক্তিকরণের প্রচার-প্রচারণা এবং কর্মকাণ্ডের ফলে জনগণ এর ওপর থেকে নিজেদের অধিকারবোধ হারিয়েছে।যেন স্বাধীনতা তাদের নয়, অন্য কারো।তাদের আর মনে হয় না যে,এতে তাদের কোনো ভাগ আছে বরং নিজেদের বিযুক্ত মনে করে তারা।এই মন নিয়ে উৎসবে সামিল হওয়া যায়?

 

বাংলাদেশে কোনো উৎসবই যে সর্বজনীন হয়ে উঠল না, এ নিয়ে আমার দুঃখবোধ কোনোদিনই দূর হবে না। উৎসবের দিন যখন দেখি,সব মানুষ এই উৎসবে অংশ নিতে পারছে না,তখন আমার মন খারাপ হয়ে যায়। উচ্ছ্বাস-উল্লাসে মেতে উঠতে সংকোচ হয় আমার।ইচ্ছে করে তাদের কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলি–তোমরা উৎসব করতে পারছ না বলে আমিও পারছি না, আমি যে তোমাদেরই একজন।

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content