বিনোদন

পুতুল খেলার বয়সে গুটিগুটি পায়ে শ্বশুরবাড়ি যায় কনে!

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:০১:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।মেয়ের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর পেরোলেই বিয়ের সানাই বেজে ওঠে বাড়িতে।সু-পাত্রের হাতে মেয়েকে সঁপে দিয়ে দায়মুক্ত হন বাবা-মা।পুতুল খেলার বয়সে গুটিগুটি পায়ে শ্বশুরবাড়ি যায় কনে। কখনো কখনো বিয়ের বয়স সাত কিংবা আট বছর।

১৮ কিংবা ১৯ শতকের ভারতে এই ছবি অচেনা ছিল না। বরং কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়াই ছিল সমাজের রীতি। কিন্তু ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েও বাল্যবিবাহ এবং নাবালিকাদের বৈধব্যের ছবিটা পাল্টায়নি রাজস্থানে।পালি,ভিলওয়াড়া, রাজসমন্দ- রাজস্থানের একাধিক জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে এখনো প্রচলিত রয়েছে বাল্যবিবাহ।ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।তারপর যদি অকালে নেমে আসে বৈধব্যের অভিশাপ, বালিকার জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

বিয়ের পর স্বামী মারা গেলে বিধবা কন্যাকে পরবর্তী ছয় মাস কঠোর অনুশাসনে রাখা হয়।রাজস্থানে এই প্রথার নাম কোনা প্রথা। প্রাচীন কালের এই প্রথার দাপট ২০২৩ সালেও সমান। কোনা প্রথা অনুযায়ী,ছোট ছোট বিধবা মেয়েদের স্বামী মারা যাওয়ার পর পরই একটি বদ্ধ ঘরে ‘নির্বাসন’-এ পাঠানো হয়।টানা ৬ মাস ওই ঘরেই থাকতে হয় মেয়েদের। তারা না পারে কারও সঙ্গে কথা বলতে,না পারে কারও মুখ দেখতে। সূর্যের আলোও তাদের ছুঁতে পারে না।বিধবা কন্যার সন্তানকেও তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয় ওই ৬মাস।প্রতিদিন ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে তাকে এক বার করে ঘর থেকে বেরিয়ে গোসল ও প্রাতঃকৃত্য সেরে আসতে হয়। তারপর সারা দিনে প্রস্রাবের জন্যেও ঘর থেকে বেরোনোর অনুমতি নেই কারও।

কেন এই নির্বাসন? বলা হয়, স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ঐ কমবয়সি নাবালিকাই। তাই তার ছায়াটুকুও অমঙ্গলের বার্তাবহ। সন্তানের উপর সেই ছায়া যাতে না পড়ে, তাই বদ্ধ ঘরে সরিয়ে রাখা হয় মাকে।১৪ কিংবা ১৫ বছর বয়সেই এই কঠিন বৈধব্য সহ্য করতে হয় রাজস্থানের গ্রামে গ্রামে বেড়ে ওঠা হাজারো মেয়েকে।স্বামী মারা যাওয়ার পর তাদের আর বিয়ে করারও উপায় নেই।বিয়ের কথা ভাবলেও ধেয়ে আসে সমাজের তর্জনী।সংসার পাতার উপায় যে একেবারে নেই,তা অবশ্য নয়।কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সব বিধবা কন্যাকে নিয়ে ব্যবসা হয়।দর কষাকষি করে মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান অন্য কোনো গৃহকর্তা।

নতুন বাড়িতে বিধবা কন্যা স্ত্রীর মর্যাদা পায় না।তাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো হয়। মনিবের সন্তানও গর্ভে ধারণ করে সে।বিধবা নাবালিকা তার শ্বশুরবাড়ি এবং বাপের বাড়ি, সব ক্ষেত্রেই হয়ে পড়ে বাড়তি বোঝা।কোনো শুভ কাজেও ঠাঁই হয় না এই কন্যাদের।নিকট আত্মীয়ের বিয়ে কিংবা রাখিপূর্ণিমা,কোনো অনুষ্ঠানেই ইচ্ছা থাকলেও অংশ নিতে পারে না তারা।গয়নাগাটি ছেড়ে সাধারণ পোশাকে দিন কাটাতে হয়।রাজস্থানের গ্রামে গ্রামে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়,একথা কারও অজানা নয়।অভিযোগ,সব জেনেশুনেও সরকার উদাসীন।যে যুগে মেয়েরা মাটি ছেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে, পাড়ি দিয়েছে মহাকাশে,সেই যুগেও ভারতের বৃহত্তম রাজ্যের অলিগলিতে রয়ে গিয়েছে গাঢ় অন্ধকার।

রাজস্থানে বাল্যবিবাহ,কোনা প্রথার বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রচার চালায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো।কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয় না। অভিযোগ,সরকারের তরফে মাঝেমধ্যে প্রচারমূলক অভিযান চালানো হয়।তবে তা জোরদার নয়।গ্রামে প্রচলিত আরো এক রীতি অনুযায়ী,পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে ঐ দিনেই বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিতে হয়।যে বয়সের মেয়েই হোক, মৃতের পরিবারে মেয়ে থাকলে সেই রাতে তার বিয়ে হবেই। মাঠে নিয়ে গিয়ে কোনো রকমে চারহাত এক করে দেওয়া হয় পাত্র-পাত্রীর।অভিযোগ,এই সব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই মেয়ের বিয়ে স্থির করার সময় পান না মা-বাবাও।গ্রামের বর্ষীয়ান বাসিন্দারাই বিয়ের আয়োজন করে ফেলেন।

রাজস্থান নারী কমিশনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লাদ কুমারী জৈন দৈনিক ভাস্করকে বলেন,বাল্যবিবাহ রোখার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।কিন্তু মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।এ সব ক্ষেত্রে সরকারও খুব একটা কড়া নয়। সরকারি পরিসংখ্যানেও বাল্যবিধবা মেয়েদের কোনো উল্লেখ থাকে না।সামাজিক প্রথার নেপথ্যে অশিক্ষা,দারিদ্র এবং সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন অনেকে।২১ শতকের সমাজেও তাই রয়ে গিয়েছে ১৯ শতক।রাজস্থানের গ্রামগুলোতে উন্নয়নের পালে হাওয়া লাগেনি কখনো।১৯ শতকেই থমকে রয়েছে গ্রামবাসীদের মনন।

আরও খবর

Sponsered content