সম্পাদকীয়

৪.৫ জি গতির ইন্টারনেটে ফেসবুক ব্রাউজ করছি আর দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর পড়ছি

  প্রতিনিধি ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩:৪৩:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।সকালে ৭ হাজার টাকার বালিশে মাথা রেখে ৮৫ হাজার টাকা দামের বই পড়ছিলাম।হঠাৎ মেঘের গুড়গুড় শব্দ শুনে ৩৭ লাখ টাকা দামের জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলাম বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।

ইতিমধ্যে বালিশের পাশে রাখা ১৫ লক্ষ টাকা দামের টেলিফোন রিসিভারটি বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে বন্ধু বললো, দোস্ত ৪০০ কোটি টাকার স্যাটেলাইটের কল্যাণে বিটিভি এখন চীনে।

একথা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফিরে দেখি, আমি হাসপাতালের ২ কোটি টাকা দামের লিফটের ভিতরে ট্রলিতে শুয়ে আছি।

আমাকে লিফট থেকে নামিয়ে হসপিটালের একটি কেবিনে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তার আমার হৃদস্পন্দন মাপছেন ১ লাখ ১২ হাজার টাকার হেডকার্ডিয়াক স্টেথোস্কোপ দিয়ে, আর বলছেন ৫২ লক্ষ টাকা দামের এসিটা ছাড়তে।

ডাক্তারের কথা শুনে আমার ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলো। তখন জরুরী ভিত্তিতে ভিজিল্যান্স টিম এসে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকার ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন দিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করে ৩ লক্ষ টাকা দামের ল্যাপটপ থেকে রিপোর্ট বের করে দিলেন।

মেশিনের এবং ল্যাপটপের দাম শুনে আমি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় পড়লাম।

ডাক্তার দ্রুত ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট এনে মাস্ক মুখে লাগিয়ে দিলেন।

এমন সময় আত্বীয়-স্বজনরা ফল নিয়ে আমাকে দেখার জন্য রুমে প্রবেশ করে ১২ লক্ষ টাকা দামের টেবিলের উপরে ফলের ব্যাগটি রেখে, ৫০ হাজার টাকা দামের চেয়ারের উপর পা তুলে বসে আয়াকে বললেন, ফল কাটার জন্য বটি, প্লেট, চামচ নিয়ে এসো।

আয়া ১০ হাজার টাকা দামের বটি, ১ হাজার টাকা দামের প্লেট, ১ হাজার টাকা দামের কাটাচামচ এবং সকালের নাস্তা ১ হাজার টাকা দামের ১ হালি কলা, ১ হাজার টাকা দামের ১ হালি সেদ্ধ ডিম দিয়ে গেলেন এবং ময়লা ফেলার জন্য ১০ হাজার টাকা দামের ১ টি ছোট্ট ড্রামও দিয়ে গেলেন।

দাম শুনে এবার আমার হার্টবিট গেল বেড়ে।

এমন সময় গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন আসলো আর বললো, বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর থই থই। ঝড়ে আমার ৬১ লক্ষ টাকা দামের নারিকেল গাছ ভেঙে আমার ৭ লক্ষ টাকা দামের টিনের চালের উপর পড়ে ঘর ভেঙে গেছে। এখন ঘরের মালামাল সরানোর জন্য আমার ৭ লক্ষ টাকা দামের কলা গাছ কেটে ভেলা বানিয়েছে।

এই কথা শুনে এবার আমার হার্টবিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে ডাক্তার আমাকে দ্রুত আইসিইউ-তে নিয়ে যান।

৩ দিন পরে আমি সুস্থ হলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ৭ লক্ষ টাকার একটি বিল আমার এক স্বজনকে ধরিয়ে দিলে সেও অজ্ঞান হয়ে গেলে আমি তাকে নিয়ে ঐ অবস্থায়ই গ্রামের বাড়ি চলে আসি।

আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ৪.৫ জি গতির ইন্টারনেটে ফেসবুক ব্রাউজ করছি আর দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর পড়ছি।”

আরও খবর

Sponsered content