সম্পাদকীয়

জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে শাওন বেছে নিয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েল্ডিং এর কাজ

  প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩:০১:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।নারায়ণগঞ্জ জেলার একেবারে পশ্চিমে ফতুল্লা থানার নদীবেষ্টিত বক্তবলি ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের এক জীর্ণ কুটিরের বাসিন্দা।যুবদল কর্মী শাওন প্রধান।এতিম শাওন একেবারে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।

পাঁচ বছর আগে বাবাকে হারান কিশোর শাওন। তারপর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বড় বোন। সংসারের অভাব অনটন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন শাওনের বড় ভাই। এই হল শাওনের পরিবার। হতভাগ্য মা এক বড় ভাই ও এক বোন আর শাওন এই ছিল তাদের বর্তমান পরিবার।

জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে শাওন বেছে নিয়েছিল ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েল্ডিং এর কাজ। যা সপ্তাহে উপার্জন হত তা তুলে দিত জনম দুঃখীনি মায়ের হাতে। তরুণ পুত্রের কষ্টের কামাই এর টাকা হাতে নিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতেন মা।কারণ শাওনের মা ভাবতেন যদি আজ তার স্বামী মারা না যেত তাহলে শাওন স্কুল কলেজে পড়াশোনা করতো।

কিন্তু সংসারের অভাব পূরণের জন্য শাওন কাজে যেতে বাধ্য হয়।শাওন ছিল বিধবা মায়ের কনিষ্ঠ সন্তান অনেকটা বাপ মরা ছেলেটি ছিল মায়ের ভীষণ লজ্ঞা। শাওনকে কেউ চিনতোই না, কারণ সে ছিল সাধারণ ঘরের জন্ম এক অতি সাধারণ যুবক।

সাধারণ যুবকই গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে এখন সারা বাংলাদেশের সকলের মুখে মুখে তার নাম। শুধু তারই নাম নয় তাদের অজ্ঞাত নবীনগর গ্রামের নামও ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে।

গত ২ রা সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে নিহত শাওনের বিধবা মায়ের জীর্ণ ও কুটিরে উপস্থিত হন হাজারো বিএনপি নেতাকর্মী নিয়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দেশের সব কয়টি টেলিভিশন চ্যানেলের শাওন হত্যার সংবাদ প্রধান শিরোনাম হিসেবে প্রচারিত হয়। এক কথায় দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির লক্ষ কোটি নেতা কর্মীর মুখে মুখে শাওনের নাম। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ও আগ্রহী শাওনকে নিয়ে।জীবিত অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থাৎ ফেসবুকে শাওন কে চিনতোই না কেউ। এখন মৃত শাওনের ফেসবুক পেজ ভাইরাল হচ্ছে তার সামান্য স্ট্যাটাস এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মে জনপ্রিয় বাংলার একটি প্রবাদ বাক্য আছে “রংয়ের গোড়ারে কোন মানুষকে কোথায় লইয়া যাও”। শাওন এখন মরেও অমর। জীবিত শাওনের চেয়ে অনেক বেশি আলোচনায় মৃত শাওন।

আরও খবর

Sponsered content