সারাদেশ

সড়ক দূর্ঘটনায় বয়ে এনেছে এক স্কুল শিক্ষকের সারা জীবনের কান্না,ভবিষ‍্যত হয়ে পড়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন

  প্রতিনিধি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২:৩৭:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা ব্যুরো প্রধান ঃঃ-সড়ক দূর্ঘটনায় কেড়ে নিয়েছে এক স্কুল শিক্ষকের শরীরের একটি অঙ্গ, কেটে ফেলা হয়েছে তার একটি পা,নেমে এসেছে তার জীবনে ঘনঘটা অন্ধকার, শেঁওলার মত ভেসে বেড়াচ্ছে স্ত্রী, দুইপুত্রসহ তার সাংসারিক জীবন। বাগেরহাটের মোরলগঞ্জ উপজেলার বড়কড়ি গ্রামের মৃত- মোহাম্মদ আলী বিশ্বাসের ছেলে এমএম ছালিম (৫০)।

তিনি ১লা জানুয়ারি’২০০০ইং সালে মোরলগঞ্জ উপজেলার কাঁঠালতলা মাধ‍্যমিক বিদ‍্যালয়ের (ম‍্যাথমেটিক্স) সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

৩০ (অক্টোবর) ২০১৩ সালে মটর সাইকেলযোগে স্কুলে যাওয়ার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় তার ডান পা দুমড়ে-মুঁচড়ে যায়। পথচারীরা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ‍্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়।

পরবর্তীতে হাসপাতালে অপারেশন করে তার একটি পা কেটে বাদ দেওয়া হয়। ছয়মাস চিকিৎসাধীনে থাকাকালীন তিনি চাকুরীচ‍্যুত হন। শিক্ষক এমএম ছালিম কোন প্রকার সুস্থ হয়ে উঠলে পূণরায় খুলনা আইচগাতি দ্বীনুল হক ক‍্যাডেট একাডেমিতে অধ‍্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

যোগদানের পর তিনি ইং-২০১৫ হতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একটানা ৪ বছর শিক্ষকতা করে আসছিলেন কিন্তু ভাগ‍্যের কি নির্মম পরিহাস ” ওখানেও তার করা হলোনা শিক্ষকতা। বর্তমানে তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এক মৃত্যুপথযাত্রী।

তাহার চোখ,নাক,কপাল মিলে একটি টিউমার অপারেশন করতে হবে।

শিক্ষক এমএম ছালিম জানান, এ ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়, তাই আমাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য এপর্যন্ত তিনবার মাদ্রাজ যেতে হয়েছে ও গত ২৩জুলাই আমি চিকিৎসার জন্য মাদ্রাজে গিয়েছিলাম।

ডাক্তার দেখিয়ে আবার ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশে ফিরে আসি। এখন আমার সহায়-সম্বল সবকিছু হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছি ।শিক্ষক এমএম ছালিম আরো জানান, আমার দুইটি পুত্রসন্তান রয়েছে, জ‍্যেষ্ঠপুত্র মোঃ ত্বহা(১৪), ছোটপুত্র মোঃ তালহা (৭)তারা দুইজনই মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। এই পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে কিভাবে এতো ব‍্যয়বহুল খরচ বহন করবো ? সমাজের বিবেকবান, বৃত্তশালীসহ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে তার আহবান!

তিনি কী আর পারবেন না আবার সু্স্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে?। অসহায় শিক্ষক এমএম ছালিম তাহার পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে কোনমতে দু’বেলা খেয়ে, একবেলা না খেয়েও থাকতে হচ্ছে ওই শিক্ষক পরিবারটিকে।

অসুস্থতার মাঝেও নেই কোন তার বিশ্রাম, প্রতিদিন যোগান দিতে হচ্ছে সাংসারিক খোরাক অন্ন-বস্ত্র, খাদ‍্য-সামগ্রী। যশোরের অভয়নগর উপজেলা,নওয়াপাড়া নূরবাগ খেয়াঘাটে শিক্ষক এমএম ছালিমকে মাঝে মধ্যে এসে মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে দেখা যায়। কেন তিনি এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তার বিস্তারিত এ প্রতিনিধিকে জানান।

প্রতিনিয়ত পঙ্গুত্ব অবস্থায় বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগঞ্জে,শহর বন্দরের অলিতে গলিতে বসে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে বেড়ান। দশ জনের কাছে সাহায্য চেয়ে দিনশেষে যে টাকা গুলো তিনি পেয়ে থাকেন তা দিয়ে তার স্ত্রী-সন্তানদের পানি পান্তার খরচ ও ঠিক মতো জোটেনা, আর চিকিৎসার জন‍্য খরচ করাতো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অকালেই ঝরে যেতে বসেছে ওই শিক্ষক পরিবারটি।

কোন শিশু জন্ম গ্রহন করার পর শৈশবে তার পিতা -মাতা যেমন লালন-পালন করে ওই শিশুকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলেন, তেমনি আল্লাহর পরে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। শিক্ষক যখন ছাত্র – ছাত্রীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে সক্ষম হতে পারে তাহলে সুশীল সমাজের বৃত্তবান’রা কী পারবেনা একজন অসহায় শিক্ষককে মানবিক দৃষ্টিতে দেখে, তার নিভে যাওয়া প্রদীপকে পূনরায় জ্বালিয়ে অন্ধকার জগত থেকে আলোয় আনতে?।

সবার উপরে মানুষ সত‍্য ” তাহার উপরে নাই – হে-মানব তুমি সত‍্যেরই মাঝে, মানুষের দিও ঠাঁই।। মানুষ -মানুষেরই জন‍্য’ তাই একটু সহানুভূতি দেখিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষ যদি ওই পঙ্গু অসহায় শিক্ষক পরিবারের প্রতি সামান‍্য সু-নজর দেন,তাহলে হয়তো আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে তার পরিবারের কাছে আগের মতো ফিরে যেতে পারবেন , সারাজীবনের কান্না থেকে হয়তো বিরত থাকবেন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর করে আলোর মুখ দেখবেন।

আরও খবর

Sponsered content