অর্থনীতি

শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে

  প্রতিনিধি ২৯ নভেম্বর ২০২৩ , ১২:৫২:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে।ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস ঢাকায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি যে স্মারকটি ঘোষণা করেছেন,বাংলাদেশ তার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজার লেখা চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে ২০ নভেম্বর।ওই চিঠির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ক্ষমতায়ন,অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান এগিয়ে নিতে স্মারক’–সংক্রান্ত একটি সংকলিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন,শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওই প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম সই করার পর ১৬ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে বলেন,যাঁরা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন,শ্রমিকদের হুমকি দেবেন কিংবা ভয় দেখাবেন,তাঁদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

শ্রম অধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নীতির বিষয়ে জানাতে গিয়ে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিক আন্দোলনের নেতা কল্পনা আক্তারের নামটিও উল্লেখ করেন।তিনি বলেন,কল্পনা জানিয়েছেন,ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছে এবং এ জন্য তিনি (কল্পনা) এখনো বেঁচে আছেন।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে,যদিও স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি,যা সব দেশের ওপর আরোপিত হতে পারে; তারপরও এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। স্মারকটির প্রকাশ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রম–সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়,স্মারক অনুসারে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শ্রম–সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে।তাই এই নীতি আগ্রহী মার্কিন দূত বা মিশনগুলোকে দেশি বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে।এটা মনে হচ্ছে,শ্রম অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে এমনটি তাঁরা মনে করলে বা বিশ্বাস করলে এই নীতি ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরোপ করার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের দূতাবাসের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।এই স্মারকে শ্রম অধিকারের বিষয়ে যা বলা হয়েছে,তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে এই রাজনৈতিক অভিপ্রায়কে ব্যবহার করতে পারে।’

চিঠিতে বলা হয়,সে কারণে এই স্মারক বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা।কারণ,শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে।এই স্মারকের প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে, এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৯৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫১ কোটি ডলার।

এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসা নীতি ঘোষণা করে।ওই নীতিতে বলা হয়,যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা,সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য,আইন প্রয়োগকারী সংস্থা,বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলে জানানো হয়।

আরও খবর

Sponsered content