লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

যৌনপল্লিতে আত্মহত্যা-চিঠিতে করুন কাহিনী!

  প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২২ , ১:১৩:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।যৌন পল্লিতে বেশ হইচই পড়ে আছে।নিষিদ্ধ যৌন পল্লির ২ নং বাড়িটিতে একজন আত্মহত্যা করে সাথে চিঠিও রেখে গিয়েছে একটি।

নিষিদ্ধ পল্লির ২ নং বাড়িটিকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।আর কোন বড় সাহেব আসবেন নিজেকে তৃপ্তি দেওয়ার জন্য।কোনো এক মেয়ের সাথে তার পশুত্বের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।তাই ২নং বাড়ির মানুষগূলো নিজের সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের সুন্দর করে তোলার,নিজেদের আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।তারা নিতান্তই এইসব এ অভ্যস্ত।কিন্তু নতুন রমনি যে মোটেও প্রস্তুত না এইসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে।কেউ ওই দিকে দৃষ্টিপাত করলো না।

হঠাৎ ২ নং বাড়িটির প্রধান কর্তী,একজন কে ধমক দিয়ে বললেন,”এই মাইয়াটারে কি তোমরা চোখে দেহ না! নতুন আইছে তাই কিছু পারিতেছে না।পরে অভ্যস্ত হয় যাইবো।তোমাদের উচিত মাইয়াটারে তৈয়র করি দেওয়া।”

নতুন আগমিত রমনীকে সাজিয়ে তোলা হলো মেয়েদের নিত্য সাজানোর অলঙ্কারে।মাথায় গুজে দেওয়া হলো আকর্ষণীয় গাজরা।চোখে লেপটে দেওয়া হলো গাঢ় কাজল।পরনে লাল পাইর সাদা শাড়ি।সব মিলিয়ে যেনো এক অপ্সরা।ওই বাড়ির মেয়েগুলো কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো অনিকার দিকে।এতো সুন্দর মেয়ে তারা এই নিষিদ্ধ পল্লি তে মনে হয় কখনো দেখে নাই।অন্য মেয়েগুলো ও একসময় অনিকার মতোই নির্বাক ছিল।নিষিদ্ধ পল্লির সিমানাই কেউ নিজ থেকে আসতে চায় না।তাদের নিয়ে আসা হয়।হয়তো তাদের প্রয়োজন তাদের নিয়ে আসে।না হয় আবেগ।আর না হয় ঠকানো প্রেমিক।

অনিকাকে এইখানে নিয়ে আসার পর থেকেই সে নীরবে তার অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে যেনো কোনো অনন্তকাল প্রবহমান ঝর্না যা নিজের অজস্রতা বজায় রাখবে চিরকাল।সে নির্বাক।সৃষ্টিকর্তা তাকে সব দিক দিয়ে সুন্দর করলেও কেন জানি তার কথা বলার ক্ষমতা দেই নি!হ্যাঁ সে বোবা।কথা বলতে পারে না বলেই হয়তো সে চিৎকার করে বলতে পারছে না যে
“আমাকে যেতে দাও,এইখানে আমার দম আটকে যাচ্ছে”।
এই আর্তনাদ যদিও অই বাড়ির কেউ শুনবে না।কারন তার পাশেই একটা মেয়ে চিৎকার করে আর্তনাদ করছে মুক্তি।তাকে বোধহয় অনিকার একদিন আগে আনা হয়েছে।ওই রমনিটার চিৎকার করা আর্তনাদ তারা শুনছে না তবে তারা কেমনে শুনবে অনিকার বুকে বন্দী করা চাপা আর্তনাদ গুলো।

বড় সাহেবের আসার খবর শুনে সবাই হুরমুড় খেয়ে বেড়িয়ে পড়লো।রুমে বন্দী রয়ে গেলো অনিকার চাপা আর্তনাদ আর বন্দী নি অনিকা।সামনে ওড়না আর উপরে সিলিং ফ্যান টি তাকে বরাবরই আকর্ষণীয় করতে সক্ষম হয়েছিলো বলেই সে ওড়না টা গলায় দিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে ছিল সে ফ্যান এর সাথে ঝুলে।

একজন বেশ্যা তাকে নিতে এসে নিজে আশ্চর্য হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।তার চিৎকার সবাইকে জড় করতে সক্ষম।সবাই এসে দেখে,সেই সুদর্শনী ফ্যান এর সাথে ঝুলে আছে।পাশে রাখা চিঠিটি বড় কর্তীর দৃষ্টিকোণ থেকে বাদ পড়ে নিই।অনিকা কোনো এক সুযোগে বড় কর্তির কামরা থেকে কলম এনেছিল।আর সাথে একটি পৃষ্টা।চিঠি খুলতেই অক্ষর গুলো ভেসে উঠলো বড় কর্তীর চোখে।

“প্রিয়!!!!
আপনাদের কে কি আদোও আমার প্রিয় বলা উচিত না কি আমি জানি না।তাই কিছু লিখলাম না।
আমার চাপা আর্তনাদ গুলো হয়তো আমি আপনাদের কে বলতে সক্ষম হয়নি।তাই লিখে না হয় বলি।
আমিতো শত পুরুষের ছোয়া চাইনি।শত মানুষের আদর চাই নি।চেয়েছিলাম শুধু একটিমাত্র ব্যক্তিগত নিজের মানুষ যে ব্যক্তিগত ভাবেই আমার থাকবে।যে একান্তই আমার,যাকে ঘিরে আমার শত আদর।কিন্তু আমার সাথে তা হলো না।আমার ভাগ্যে পড়লো শত মানুষের ছোয়া।এই ছোয়া আমি হয়তো সহ্য করতে পারবো না তাই ভাবলাম নিজেকেই শেষ করে দেই।

আমার আম্মুর যদি মৃত্যু না হতো তবে হয়তো আমিও একান্ত নিজের মানুষটা পেতাম।হয়তো সৎ মার ষড়যন্ত্রের শিকার আমার হতে হতো না।তার টাকার মোহের জন্য হয়তো আমাকে এইখানে আসতে হতো না।
আমি তো মায়ের আদর চেয়েছিলাম।কোনো খারাপ কিছু চাইনি।বেশি কিছু চাইনি।

মা মারা যাওয়ার পর যখন আব্বু দ্বিতীয় বিয়ে করে তখন হয়তো বুঝিনি যে এইটাই আমার কাল হবে।আব্বু বেচে থাকতে সৎ মা টাও আমাকে মুটামুটি দেখতে পারতো।কিন্তু যখন বাবা মারা যায় তখনই ঘটে বিপর্যয়। সৎ মার টাকার লোভের জন্য ফেসে গেলাম আমি আর আমার ভবিষ্যৎ। সেই দিনের লোকটা যে আমার জন্য বড় খারাপ তাতো আমি কখনোই বুঝিনি।বুঝলে হয়তো আমাদের জিবনে তাকে আসতে দিতাম না।মা(সৎ মা) তো বলে ছিলো তিনি আমার শুভকাঙ্ক্ষী।তার সাথে থেকে আমাকে ভালো যায়গায় লিখা পড়া করাবে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। কিন্তু কই!তিনি তো আমাকে অন্ধকারের রাজ্যে ঠেলে দিলো।নিয়ে এলো এই বদনাম নগরীতে।তোমরাই বলো এই বদনাম নগরী থেকে কিভাবে লিখাপড়া করবো কিভাবে আমি নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করবো।এইখানে তো কেবল এক নামেই পরিচিত।”বেশ্যা”।
যখন কৈশোরকালে ছিলাম তখন আমার ছেলেমানুষী আচরণ বেড়ে উঠে ছিলো।তখনো আমার মনে হতো আমার একান্ত একজন হোক।কিন্তু আমার ছেলে মানুষী আচরণ যে খারাপ মানুষের চোখ ভেদ করে যেতে পারলো না তা আমি ভালো ভাবেই বুঝেছি।আমার সাথে করা খারাপ আচরণ টের পেয়ে পরক্ষণেই সরে এসেছি।সেই আমি কিভাবে কাউকে আমার গায়ে হাত দিতে দিবো!

কিভাবে নিজের সেই কল্পনার একান্ত একজন ব্যতিত অন্য কারো স্পর্শে আসবো।আমিতো কখনোই পারবো না।তোমরা আমাকে মুক্তি দিবে না তা আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছি।আমিও যে পড়েছি,নিষিদ্ধ পল্লির নিষিদ্ধহীন ঘটনা গুলো।আমিও যে পড়েছিলাম নিষিদ্ধ পল্লির সেই চিরচেনা গল্প গুলো।ওই গল্পগুলো আমাকে বারেবারেই কাদাতে সক্ষম হতো। মেয়েগুলোর প্রতি দরদ মার ক্রমেই বেড়ে উঠতো।তাদের প্রতি হা-হুতাশ করতাম তাদের জিবনি পড়ে।
আমিই কিনা সেই হা হুতাশ এর,সেই দরদের সেই চাপা আর্তনাদ এর শিকার হলাম!।আমি এটা মেনে নিতে পারবো না।
তোমরা কি জানো!আমি তোমাদের নিয়ে শত প্রতিবেদন লিখতাম।তোমাদের আর্তনাদ গুলো কে আমি ফুটিয়ে তুলতাম।কিন্তু আমিই তোমাদের মধ্যে একজন হয়ে গেলাম!
তা যে আমি মেনে নিতে পারবো না।আমি আমার জীবনকে খুব ভালো বাসি।কিন্তু এমন জীবন পেলে আমি শতবার মরতেই ভালো বাসি।
ইতি
না হওয়া একজন বেশ্যা”

আরও খবর

Sponsered content