লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

বিয়ের পর অবাক হয়ে দেখলাম পাত্রীটা তুমি!!!

  প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২২ , ১:৫৫:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।মানুষের হাত এত লম্বা হয় না।ভয়ে দম বন্ধ হবার অবস্থা। থর থর করে কাপছি। আর নির্বাক ভাবে তাকিয়ে রইলাম। সেই হাতে একটা বালা পড়া ছিলো। কেন জানি বালা টা বেশ পরিচিত লাগছিলো।তারপর ই মনে পড়লো বালা টা সেই অশরীরীর হাতে ছিলো, যে আমার গলা চেপে ধরেছিলো। হাতটা ড্রয়ার খোলে তাতে কিছু একটা রেখে আবার ড্রয়ার বন্ধ করে ফিরে গেল জানালা দিয়ে। জানালার কপাট আবার বন্ধ হয়ে গেলো। আমি যেন নড়তেও পারছি না।

কিছুক্ষণ পর নড়াচড়ার ক্ষমতা ফিরে পেলাম। ভয়ে ভয়ে ড্রয়ারের পাশে গিয়ে ড্রয়ার খোলে দেখি তিন হাজার টাকা। এবার বুঝতে বাকী রইলো না। অশরীরী সেই মহিলাটা আমাকে সাহায্য করছে। কিন্তু কেন আমাকে সাহায্য করছে সেটা বুঝলাম না।

এ মাসে বাধ্য হয়ে টাকাটা খরচ করলাম। এক পর্যায়ে ভাবলাম যা হবার হবে। আমি টাকাটা খরচ করবো। আর ভাল করে পড়াশোনা করবো। যেই ভাবা সেই কাজ।

আমি পড়াশোনা শুরু করলাম এখন আমার বাড়ীর খরচ আর নিজের খরচ নিয়ে ভাবতে হয় না। প্রতি মাসের দশ তারিখে টাকাটা ড্রয়ারে রেখে যায় সেই অশরীরী।

আমি ভাল ভার্সিটিতে এডমিশান নিলাম। হলে ওঠার চান্স থাকা সত্বেও গেলাম না।যদি টাকাটা আর না পাই তাই। আমার আগের মেসে থেকেই পড়াশোনা করতে লাগলাম। একপর্যায়ে ভাল রিজাল্ট করার পর ভাল চাকরিও পেলাম। চাকরি পাবার পর অদ্ভুত ভাবে ড্রয়ারে টাকা রাখা বন্ধ হয়ে গেলো। ততদিনে আমার আর ঐ টাকার দরকার ও ছিলো না। এক বছর চাকরি করার পর মা হঠাৎ আমার জন্য পাত্রী ঠিক করলেন। আর বিয়ের পর অবাক হয়ে দেখলাম পাত্রীটা তুমি।

এবার রেনু মুখ খোললো।
রেনুঃ- সব বুঝলাম, তো আমি পাত্রী হওয়াতে আপনি অবাক হলেন কেন?

আমি তখন উত্তর দিলাম….
আমাকে যে শরীরী মহিলাটা আক্রমণ করেছিলো, যে আমাকে টাকা দিয়ে পড়াশোনা আর সংসার চালাতে সাহায্য করেছে, তুমি দেখতে হুবহু তার মত।

এবার রেনু একটু চমকে ওঠলো। তারপর কান্না করতে শুরু করলো। কান্না করতে করতেই বললো.. আমার মা দেখতে একদম আমার মত ছিলেন। তিনিও হাতে সব সময় বালা পড়তেন।

আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম। এখন কোথায় তোমার মা?(গল্প কপি বা নকল করা নিষেধ।)

রেনু জানালো, তার মা খুণ হয়েছেন। তার নানু অনেক টাকা রেখে গেছেন। রেনুর বাবা রেনুর ছোট বেলাতেই মারা গেছেন। রেনুর মায়ের টাকা নেবার জন্য রেনুর চাচা আর দাদা রেনুর মাকে খুন করেন। কিন্তু টাকাটা কেউ পান নি।

রেনুর কথা শুনছিলাম, তখন আমার মা আমাকে ডাকতে আসলেন। মা কে আমি জিজ্ঞেস করলাম.. মা তুমি রেনুকে কিভাবে পেলে?

মা তখন বললেন, ঐ যে তোর বন্ধুটা আছে না? আমাকে টাকা দিয়ে গিয়েছিলো তোর বোনের চিকিৎসার জন্য। সে ই একদিন বেড়াতে আসলো। তোর জন্য পাত্রী খুজছিলাম দেখে রেনুর নানা বাড়ীর ঠিকানা দিলো। তারপর দেখি পরীর মত মেয়ে।তাই পছন্দ হয়ে গেলো।

আমি তখন মাকে জিজ্ঞেস করলাম.. আচ্ছা মা, আমার সেই বন্ধুটা আসলে দেখতে কেমন

মা বললেন এইতো, চম্বা চওড়া। আর মুখে বা পাশে তিল আছে। হাটার সময় বাম পায়ে একটু খুঁড়িয়ে হাটে। বলেই মা চলে গেলেন।

আমি রেনুর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে আরো বেশি করে কান্না করছে।

আমি তার কাছে যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো.. আমার বাবার মুখে বাঁ পাশে তিল। আর হাটার সময় বাম পায়ে খুড়িয়ে হাটতেন।

এবার সব পরিষ্কার হয়ে গেলো। রেনুর মা আর বাবা রেনুর মায়ের সেই টাকা দিয়ে আমাকে পড়াশোনা করতে সাহায্য করে তাদের মেয়ের যোগ্য করেছেন।

আমি মনে মনে পণ করলাম। রেনুকে কখনো কষ্ট দেবো না আমি।
.

আরও খবর

Sponsered content