লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

পুরুষ কিসে আটকায়?

  প্রতিনিধি ১১ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৩৫:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।নারী কিসে আটকায়’ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে বেশ আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।বিপরীত দিক থেকে শোনা যাচ্ছে,তাহলে পুরুষ কি আটকায় না?আমাদের জনসমাজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে এ প্রসঙ্গ নিয়ে,মূলত কোথায় আটকায় পুরুষ?

গল্প-উপন্যাসে সাহিত্যিকেরা নারীকে যেমন নানাভাবে এঁকেছেন,তেমনি এঁকেছেন পুরুষকেও।তাঁদের কেউ কখনো কখনো লেখায় পুরুষতন্ত্রের স্বরূপও উন্মোচন করেছেন। জনসমাজ ও জনসংস্কৃতির বাস্তবতা ঘেঁটে গল্প-উপন্যাসে তাঁরা দেখিয়েছেন কোথায়,কখন,কী পরিস্থিতিতে এবং কেন আঁতে ঘা লাগে পুরুষের।বস্তুত বিশ্বের সিংহভাগ রাষ্ট্র ও সমাজকাঠামো এখনো পুরুষতান্ত্রিক,অর্থাৎ কর্তৃত্বের সবটুকু জায়গা পুরুষের জন্য বরাদ্দ।আর কর্তা হয়ে উঠতে পুরুষের শিক্ষা শুরু হয় জন্ম থেকেই।আমাদের সমাজে এখনো বেশির ভাগ পরিবারে অনাগত উত্তরাধিকারের কাঙ্ক্ষিত লিঙ্গ পুং। কারণ,পরিবারের হাল ধরবে সে,লাঠি হবে পরিবারের—আমাদের সাধারণ ধারণা এমনই।তো এ প্রত্যাশার ভার নিয়ে বড় হতে হতে একজন ছেলে শেখে পুরুষত্ব মানে যোগ্যতা নয়,লিঙ্গের বিচারে আধিপত্য।সে শেখে ঘরে ও বাইরে সে কর্তা।যেকোনো যুদ্ধে সেই অগ্রগামী সৈনিক।সে উপার্জনকারী, রক্ষাকারী ও পালনকারী।জনজাতির সামষ্টিক অবচেতনে প্রোথিত এই প্রজন্মান্তরের ধারণা থেকে সে নারীর সঙ্গী নয়, বরং কর্তা হয়ে ওঠে।তাই পুরুষকে ঘরে বেঁধে রাখাটা সামাজিক দায়িত্বও নারীর ওপরই বর্তায়।

অনেকেই পুরুষতান্ত্রিকতার পদ্ধতিগত শিক্ষার বাইরে নজর দিতে পারছেন এখন।রান্না,ঘরকন্নার কাজ,সন্তান প্রতিপালনের মতো ‘নারীসুলভ’ দায়িত্বগুলো অনেকেই নিষ্ঠার সঙ্গে এবং আনন্দ নিয়ে পালন করছেন।প্রেমিকা/স্ত্রীকে সমপর্যায়ের সঙ্গীর মতো দেখছেন।কিন্তু যুগ যুগ ধরে যে কর্তৃত্বপরায়ণতার ভার তাঁর ওপরে রয়েছে,তা কি এত সহজে পিছু ছাড়ে?না, তা এত সহজে পিছু ছাড়ার নয়।কাজেই কেউ স্বীকার করুক আর না-ই করুক,অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের এখন এই দ্বৈরথের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।বিশেষ করে অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে। পুরুষের জন্য সংবেদনশীল হওয়া এবং অনুভূতির প্রত্যক্ষ প্রকাশের বিষয়টি একেবারেই অনুমোদিত নয়।বরং এটাকে তাঁর দুর্বলতা হিসেবে দেখার যে ঐতিহাসিক চল আমাদের সমাজে রয়েছে,তা তাঁদের মনোজগৎকে বোধ করি আরও জটিল করে তোলে।আর সেই সঙ্গে পুরুষের কর্তৃত্বের জায়গাটা ধরে রাখার পথও একাকী এবং দ্বিধায় ভরা।কাজেই বিশ্বাসের জায়গাও একসময় ভঙ্গুর হয়ে ওঠে।

পুরুষের এই সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান তাঁকে নারী সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার চেয়ে সামাজিক মর্যাদা ও পারিবারিক কর্তব্যের দিকে বেশি নজর দিতে বাধ্য করে।বলা বাহুল্য,পুরুষের আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতে বড় ভূমিকা রাখে এই নিয়ামকগুলো।আবার বস্তুবাদিতাও পুংকেন্দ্রিক। ফলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ভোক্তা হিসেবে পুরুষের কর্তৃত্বের প্রকাশ সর্বত্র। তাই নারী যৌন আবেদনময়ী; দ্রুতগতির গাড়ি বা সহিংসতা মানেই পুরুষত্ব—এ মতবাদের প্রতিষ্ঠা ঘটে।তবে এর বাইরেও যে পুরুষ আটকাতে পারে,সে বিষয়ে সন্দেহ নেই; সেই পরিধি দিন দিন ক্রমশও বিস্তৃত হচ্ছে।

অহংকে অতিক্রম করার পথ নারী-পুরুষ–নির্বিশেষে সবার জন্যই কঠিন।তবে পুরুষকে সেই পথ পাড়ি দিতে হয় দুবার। প্রথমে তাঁকে সমাজের গড়ে দেওয়া যে ‘পুরুষ’মূর্তি, সেটা আগে দেখতে হয়।দ্বিতীয় ধাপে সমাজের গড়া ‘পুরুষ’-এর সব চিহ্ন মুছে অনুসন্ধান করতে হয় নিজের প্রকৃত স্বরূপ। আদতে প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রেই প্রথমত নিজের অহংকে চেনা লাগে।তাই পুরুষ আদৌ কিসে আটকায়,তা বোঝার জন্য তাঁর সময়ও একটু বেশি প্রয়োজন হয় বৈকি।

আরও খবর

Sponsered content