সারাদেশের খবর

বহুদিন ধরে আমি ফিঙ্গার প্রিন্ট নিই-দেখতে দেখতে কাজ শিখেছি,স্যার নাই,তাই আমি নিচ্ছি!

  প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৯:৫৪:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

জামালপুর প্রতিনিধি।।জামালপুরে সহজে পাসপোর্ট করতে আবেদনকারীরা দালাল ধরতে বাধ্য হচ্ছেন।দালালের মাধ্যমে জমা দেওয়া পাসপোর্টের আবেদনগুলোতে দেওয়া থাকে ‘বিশেষ চিহ্ন’।এতে ওই আবেদনকারীরা দ্রুত ফিঙ্গার প্রিন্ট, ছবি তোলা ও পাসপোর্ট পান। এ জন্য দালালদের অতিরিক্ত চার–পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয় তাঁদের।

উল্টো চিত্র দালাল ছাড়া আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে। দালাল ছাড়া আবেদন করলে নানা হয়রানির শিকার হন আবেদনকারীরা। পাসপোর্টও মেলে না যথা সময়ে। বাধ্য হয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষ অবৈধ পথে হাঁটছেন। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দালালের এমন দৌরাত্ম্য চলছে বছরের পর বছর।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে দু-একজনকে গ্রেপ্তার করলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দালাল বলেন,সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব নতুন কৌশল শুরু করেছেন। যেভাবেই আবেদন জমা পড়ুক, তাঁকে প্রতিটি আবেদনে এক হাজার টাকা দিতে হয়। আমরা ছাড়াও বাড়তি টাকা নিয়ে আনসার ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আবেদন জমা নেন।ওই আবেদনের মধ্যে অফিস সহায়ক আতিক মিয়া একটি বিশেষ চিহ্ন দেন।ওই চিহ্ন ছাড়া সহজে আবেদন জমা বা কার্যক্রম শুরু করা হয় না।ওই চিহ্ন দেখে অফিস শেষে সহকারী পরিচালক প্রতিটি আবেদনের জন্য এক হাজার টাকা নেন।’

প্রতিটি আবেদনে এক হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন উত্তম কুমার দেব।তিনি বলেন, বিশেষ চিহ্ন বা দালালদের মাধ্যমে টাকা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নিচ্ছেন বলে তাঁর জানা নেই।এখানে কেউ কোনো টাকা নেন না। চিহ্ন দেওয়ার বিষয়ে অফিস সহায়ক আতিক মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জামালপুরে সাধারণ ও জরুরি—দুই ধরনের পাসপোর্ট দেওয়া হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৪ হাজার ২৫ এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার ৩২৫ টাকা লাগে।ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে রসিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়।আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর আবেদনকারীর ছবি তোলা হয়।পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে,মূল ফটকের ভেতরে আবেদনকারীদের ভিড়। অনেকে আবেদন জমা দিতে ও অনেকে পাসপোর্ট নিতে এসেছেন।ফটকের ভেতরে আনসার সদস্য মো. আলাল ও মুসলিমের দৌড়ঝাঁপ চলছে। দুজনের মধ্যে আলাল কয়েকজন আবেদনকারীর সঙ্গে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর তিনি ফটকের সঙ্গে ছোট্ট কক্ষটিতে বসেন। আবেদনকারীরা সেখানে তাঁকে কাগজপত্র দিচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে অনেককে তাঁর কাছে আবেদন নিয়ে আসতে দেখা যায়। চিহ্নিত এক দালালকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই, একজনকে পাঠালাম।দ্রুত দেইখেন।’

আনসার সদস্য আলাল বলেন, ‘আমরা তিনজন আনসার সদস্য আছি।আমি ছাড়া মুসলিম ও কাশেম নামের আরও দুজন আছেন। আবেদনকারীদের শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যালয়ে যেতে হয়।আমরা কোনো আবেদন নিই না। ওই দালালকে আমি চিনি না।’ তবে তাঁরা তিনজনই অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট করিয়ে দেন বলে আবেদনকারীরা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী মো. সোলাইমানকে আবেদনকারীদের আঙুলের ছাপ নিতে দেখা যায়।কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বহুদিন ধরে আমি ফিঙ্গার প্রিন্ট নিই।দেখতে দেখতে কাজ শিখেছি।স্যার নাই,তাই আমি নিচ্ছি।’

জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেব বলেন,কার্যালয়ে দালালের প্রবেশ নিষেধ। তিনি কোথাও দালাল দেখেননি। বাইরে থাকলে কিছুই করার নেই। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশের লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content