অপরাধ-আইন-আদালত

পুলিশ পরিচয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীকে অপহরণকারী গ্রেফতার

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১২:০০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।সম্প্রতি পুলিশ পরিচয়ে ঢাবি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই শিক্ষার্থীর ঘটনার পর থেকে সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনা্র মূল হোতা শাকিলসহ আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের করার পর বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন মোঃ শাকিল আহমেদ রুবেল (২৮), মোঃ আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মোঃ হাবিবুর রহমান। এদের মধ্যে প্রধান আসামি শাকিল।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১ টি বিদেশি পি/স্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১ টি ম্যাগাজিন, ১ টি ওয়্যারলেস সেট, ২ টি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ৬ টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

ডিবি জানায়, ‘রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। পুলিশের পরিচয়ে সে এ পর্যন্ত ১৫০০ ছিনতাই করেছে।এছাড়া ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করত। রুবেলের প্রধান টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রী।

রোববার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে সে গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। ওই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়িতে নিয়ে গিয়ে ছিনতাই করে। ‘

রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি রুবেলের বাড়ি গাজীপুর। কিন্তু আরও ২টি ঠিকানা পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো যাচাই করছি। ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেননি রুবেল। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করত। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাত। ‘

তিনি বলেন, “রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, সে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাই করেছে। এর মধ্যে ছিনতাই পর ৫০টি মেয়ের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছে।ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে সে অশালীন আচরণ করত এজন্য যে তারা যেন পরে লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা অভিযোগ না করে। ”

রুবেল ছিনতাইয়ের জন্য নির্জন জায়গা বেছে নিত জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, “মেয়েদের মোটরসাইকেলে তুলে রাজধানীর ৩০০ ফুট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬টি ছিনতাই মামলা রয়েছে। আমরা তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেল কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে। ‘

একজন ঢাবি ছাত্রী কীভাবে এত সহজে রুবেলের খপ্পরে পড়ল জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে ওই ছাত্রী তাকে পুলিশ বলে ভুল করে থাকতে পারে। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করত তাহলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটত না। ‘

ছিনতাই করা রুবেলের পেশা নাকি নেশা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা রুবেলের পেশা এবং নেশা দুটোই। পুলিশের ছদ্মবেশে সে এসব করতো। এইটা বুঝতে বুঝতে সে সারা দেশে ১ হাজার ৫০০ টির মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে। ‘

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকবার জেলে গেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। ‘

তার চার সহযোগীর কাজ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সময়ে রুবেলকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করতেন আবার কেউ অন্যভাবে সাহায্য করতেন। ‘

রুবেল ওয়াকিটকি, পিস্তল ও ডিএমপির লঘু কিভাবে পেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।

প্রসঙ্গত, ওই ছিনতাইকারী বিভিন্ন কৌশলে এসব ঘটনা ঘটাতে বলে জানা যায়। তবে এসব ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আরও খবর

Sponsered content