লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

আমি জোর করতে যাবো কেন? যে জিনিস কিনতে পাওয়া যায়, তা কি কেউ জোর করে নেবার চেষ্টা করে?

  প্রতিনিধি ৩০ অক্টোবর ২০২২ , ১:১৩:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।টাকার বিনিময়ে নিজের স্ত্রীকে বন্ধুর কাছে বিক্রি করা হয়।অতঃপর তা ঘটেছিল:-ভিকটিম অভিযোগ করেন।স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু যে আমার দিকে লোভীর মতো তাকিয়ে থাকে তা আমি হঠাৎই বুঝতে পারলাম! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তার সামনে আর যাবো না। কিন্তু দুদিন পরেই স্বামী এসে বললো, চল আমার বন্ধু এসেছে! আমি বললাম লোকটার চোখে কুদৃষ্টি! আমি তার সামনে যেতে চাই না। কিন্তু আমার স্বামীর পিড়াপিড়িতে তার সামনে যেতে বাধ্য হলাম। স্বামী হেসে বলে, তুমি এমন গেঁয়ো মেয়েদের মতো আচরণ করছো দেখে আমি ভীষণ আশ্চর্য হচ্ছি। পর পুরুষের সামনে না যেতে চাইলেই মানুষ গেঁয়ো হয়ে যায়? স্বামী এর কোন জবাব দিলেন না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। বুঝতে পারলাম যেতেই হবে।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে সামলিয়ে লোকটার সামনে গেলাম। স্বামী তার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলে, শুনেছো! তোমার ভাবী সাহেব তোমার সামনে আসতে লজ্জা পায়!

শুনে তার বন্ধুটি বলে উঠে, তাই নাকি ভাবী? আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ করে রইলাম। সে নির্দ্বিধায় বলে গেল। লজ্জা মেয়েদের স্বভাবগতভাবেই একটা গুণ! আর যে নারীর মধ্যে তার অভাব, সে নারী অপয়া! কুলটা! আমি তাদের ঘৃণা করি। ওরা কোন পুরুষের প্রতি বিশ্বস্ত হয়না।

আপনার মধ্যে এই লজ্জাবোধ দেখেই আপনাকে এতো ভালো লাগে আমার! তার কথা শুনে আমার হৃদয়ে কাঁপন ধরে গেল। তার কতবড় সাহস আমার স্বামীর সামনে এমন করে কথা কেমন করে বলে, সে! এতো দুঃসাহস সে কোথায় পেলো? তার কথায় একটা ঈঙ্গিত ছিলো তা কি আমার স্বামীর কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি?

যাইহোক স্বামীর সম্মানের কথা ভেবে তখনই উঠে পড়িনি। কিন্তু তার এই আচরণ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। এই লোক সুযোগ পেলে আমার ক্ষতি না করে ছাড়বে না!কি করবো আমি? কোন দিন যদি এমন পরিস্থিতি হয় তবে কেমন করে বাঁচাবো নিজেকে?

আমার স্বামী ও তার বন্ধু আমার সামনে অনেক ধরনের আলাপ আলোচনা করতে লাগলো। যেগুলোর মধ্যে অনেক কথা শুনে আমি অবাক হলাম। ভাবতে পারলাম না এতো জঘন্য জোকস কেমন করে বলে মানুষ! আমার স্বামীর উপর অনেক রাগ হচ্ছে। কেমন করে একজন পর পুরুষের সাথে আমাকে বসিয়ে রেখে এমন বাজে কথাগুলো বলে যাচ্ছেন তিনি। আর সহ্য করতে না পেরে বললাম, আমি এখন উঠে পড়ি। রান্না ঘরে অনেক কাজ পড়ে আছে।

কিন্তু আমার স্বামী আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললো, আরে ওকে এতো লজ্জা কিসের তোমার! তুমি জানো না, আমরা দুজনেই এক প্রাণ!

আমি ও আমার বন্ধুর মাঝে কোন পার্থক্য নেই! বুঝতে পেরেছো? আমি আর সহ্য করতে না পেরে বললাম ছি! এমন জঘন্য জোকস শুনতে আমি অভ্যস্ত নই।

চলে এলাম শোবার ঘরে। কিছু সময় পরে আমার স্বামী ঘরে এসে বললেন, তোমার আচরণ দেখে সে অনেক অসন্তুষ্ট হয়েছে! ওর সাথে আমার সুসম্পর্কটা হয়তো তুমি নষ্ট করে দিলে। তার আফসোস করা দেখে খুব রাগ হলো আমার।

রাগের সাথে বললাম তাহলে খুব ভালো হয়েছে। নিশ্চয়ই আর সে এখানে আসবে না। স্বামী আমার কথায় আহত হয়ে বললেন, হুম! তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। তাকে তো তুমি সহ্য করতে পারো না। সে আর কোনদিন আমার বাড়িতে আসবে না।

রাগ মাথায় উঠে গেল। বললাম অমন চোখ খারাপ লোকের সাথে সম্পর্ক না থাকাই ভালো। তুমি জানো সে আমার দিকে লোভীর মতো তাকিয়ে থাকে। সুযোগ পেলেই গিলে খেতে চাইবে! তুমি কি তাই চাও? তোমার বউয়ের দিকে কেউ কামনা ভরা লালায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুক!

না তা চাইবো কেন? তুমি আমার সহধর্মিণী! আমি তা চাইতে পারি না।

আমার স্বামী আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে বলে তুমি যাই বল, সে লোক খারাপ নয়! তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে। কারও দিকে কুদৃষ্টি দিবে তেমন মানুষ সে নয়! যাইহোক কাজটা ভালো হয়নি। তোমার তো কিছু নয় কিন্তু আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।

একথা বলে সে মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বিছানার উপর বসে পড়ে। আমি ভেবে পেলাম না, একটা বদ স্বভাবের লোক বাসায় না এলে কি ক্ষতি হবে আমার স্বামীর?

সে খুব চিন্তিত কন্ঠে বলে, এখন আমি কি করবো? কেমন করে মানুষের সামনে মুখ দেখাবো? সে আমার শেষ ভরসা ছিলো! এখন আমি কি করবো?

তার এমন দীর্ঘশ্বাসে ভরা কথা শুনে আমার মন নরম হয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে তোমার? সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বলে আর কি লাভ! তুমি তো সব নষ্ট করে দিয়েছো! আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। জিজ্ঞেস করলাম কি বলছো তুমি? খুলে বল আমাকে?

বললাম আমার দ্বারা যদি তোমার ক্ষতি হয়ে থাকে তবে আমি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো! সত্যি বলছো! যেনো সে অথৈ সমুদ্রে একটা খড়কুটোর সন্ধান পেয়েছে। সেটাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছে।

সে আমার হাত ধরে বললো, মার্কেটে আমার অনেক দেনা! প্রায় বার তের লাখ টাকার মতো। আমার বন্ধু বলেছে সে দেনা পরিশোধ করতে সাহায্য করবে। তাই তাকে মাঝেমধ্যে দাওয়াত করে তার ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে চেয়েছি। আর তুমি কি-না সব নষ্ট করে দিলে!

তার কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ঠিক আছে তাকে দাওয়াত দিয়ে বলে দাও আমি আমার ব্যবহারের জন্য লজ্জিত! তিনি যেনো আমার কথা রাখেন।

পরদিন স্বামী জানালো সে আসবে না। তবে তুমি চাইলে তার দাওয়াত কবুল করতে পারো। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেলাম।

পরদিন স্বামীর সেই বন্ধুর বাড়িতে গেলাম। অনেক পয়সাওয়ালা মানুষ তিনি। বাড়ি তো নয় যেনো রাজমহল! আমাদের তিনি ভালো ভাবে অভ্যর্থনা জানালেন। আমার দিকে তাকিয়ে একটু করে হাসলেন। তাতে যেনো কেমন একটা পরিহাস মেশানো ছিলো।

অনেক রকমের খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে ফেললেন। খাওয়ার পরে তিনি আমাদের ভিতর ঘরে নিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন কথাবার্তা বলার পরে আমার স্বামী বললেন তোমরা কথা বল আমি একটা জরুরি কাজ সেরে এখনই চলে আসছি।

আমি বাঁধা দিতে যাবো কিন্তু তার আগেই তিনি দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি আর আমার স্বামীর বন্ধু ছাড়া এতোবড় বাড়িতে আর কেউ নেই। ভয়ংকর একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলাম আমি।

নিরবতা ভঙ্গ করে সে বললো, অবশেষে আপনার সুমতি হয়েছে ভাবী! আমি তার কথা বুঝতে পারলাম না। তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। আপনার স্বামীর মুখে নিশ্চয়ই সব কথা শুনেছেন। তার এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। একমাত্র আমিই পারি তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।

বললাম হুম! শুনেছি। তাহলে বলুন আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আপনার আপত্তি নেই? বললাম জ্বি! আপনি আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী।

এই কথা শুনে সে কাছে এসে আমার হাতটা তার হাতে নিয়ে নিলো। আমি ছাড়াতে চেষ্টা করতে সে বলে জানি আপনি লজ্জাবতী! চলুন আমার শোবার ঘরে নিয়ে যাই আপনাকে।

হাত ছাড়ুন! আমি এখানেই আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবো। আরে চলুন তো একবার। আপনার লজ্জা কেটে যাবে। এই কথা শুনে আমার শরীর থরথর করে কেঁপে ওঠে। সে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে।

আমি নিরুপায় হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনি জোর করে আমাদের দুঃসময়ের সুযোগ নিতে চাইছেন? আমি অন্য হাতে তার গালে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চড় বসিয়ে দিলাম। সে হাতটা ছেড়ে দিয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল এমন কান্ডে। হিংস্রতা ভরা কন্ঠে বলে এমন তো কথা ছিলো না!

আমি জোর করতে যাবো কেন? যে জিনিস কিনতে পাওয়া যায়, তা কি কেউ জোর করে নেবার চেষ্টা করে? আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম মানে?

মানে আপনি আপনার স্বামীর কথায় নিজেকে আমার হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য এখানে এসেছেন। তাই নয় কি? আপনি লজ্জাবতী! কিন্তু অভিনয়েও পারদর্শী তা জানতাম না!

তার কথা শুনে আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল। বললাম আপনি পয়সাওয়ালা বলে সবকিছু কেনার ক্ষমতা আছে তাই মনে করেন? কেন নয়? পরিহাস করতে করতে বলে সে!

আপনার স্বামীর কথায় নিজেকে বিক্রি করতে আসেননি বলতে চান? নাকি নিজের দামটা আরও একটু উপরে তুলতে এই নাটক?

আমি ঘৃণায় দুঃখে বললাম ছি! আপনি এতোটা নীচ প্রকৃতির মানুষ! এমন কথা কেমন করে বলতে পারলেন? আমার স্বামী বিপদের দিনে সাহায্য চেয়েছে বলে, এর বিনিময়ে এমন জঘন্য আচরণ করতে চাচ্ছেন? আপনি পশুর চেয়ে অধম!

আমার কথা শুনে সে হাহাহা করে হেসে উঠে বলে, আমি যদি পশু হই! আপনার স্বামী তাহলে কি? আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করি কি বলতে চান?

সে জানালা দিয়ে আমার স্বামীকে দেখিয়ে বললো, ঐ দেখুন আপনার স্বামী আমাদের পাহারা দিচ্ছে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে। এটাই তার জরুরি কাজ! যেনো কেউ আমাদের বিরক্ত করতে না পারে!

এই দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো কেউ যেনো আমার মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করেছে! আমি কিছুক্ষনের জন্য কোথাও যেনো হারিয়ে গিয়ে ফিরে এলাম। নিজেকে এতো ছোট মনে হলো যেনো মাটির সাথে মিশে যাই।

চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর বন্ধুর সামনে হাত জোর করে বললাম, দয়া করে জোর করবেন নাহ্! আমার অবস্থা দেখতে পেয়ে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।

মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। দূর্বল শরীর নিয়ে স্বামীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি মানুষ! মানুষ নিজের বৌ বাচ্চাকে বাঁচাতে নিজেকে বিপথগামী করে। আর তুমি কি-না নিজের বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাকে বিপথে ঠেলে দিতে চাইলে?

স্বামী আমাকে সান্ত্বনা দিতে বললো, ক্ষমা কর আমাকে! যা হবার হয়ে গেছে। দেখে নিও এবার আমার বন্ধুটি নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট চিত্তে আমাদের সাহায্য করবে। তুমি আজকের কথা ভুলে যাও!

তুমি মানুষ নও! তোমাকে কোন কিছুর সাথে তুলনা দিয়ে তাদের ছোট করতে চাই না। এমনকি তোমাকে চড় মেরে নিজের হাত নোংরা করতে চাই না।

তোমার বন্ধুও তোমার চেয়ে অনেক বেশি ভালো! আপাতত সে কোন জোরাজোরি বা প্রতারণা করে না।

ছি! তোমার মতো স্বামী যেনো কারও কপালে না জোটে!! ছি!

আরও খবর

Sponsered content