সম্পাদকীয়

অপরাধীরা অভিনব কায়দায় সাংবাদিকদের সংগঠনকে হাত করে সাংগঠনিক ভাবেও নিপীড়ন করে থাকে

  প্রতিনিধি ২১ আগস্ট ২০২৩ , ১০:০৫:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা।এই পেশায় অনেক কাঠখর পুড়িয়ে,হুমকি ধমকি সহ্য করে, সংবাদ সংগ্রহে অনেক সময় বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়।এছাড়াও অনেক সময় কম সার্কুলেশনের নিবন্ধিত জাতীয় পত্রিকায়ও ঠিকমতো বেতন বা সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না।তবুও অনেক সাংবাদিক দেশের জন্য কিছু করার প্রেরণা বা ভালো লাগা থেকে শত কষ্ট সহ্য করে হলেও এই পেশায় লেগে থাকে।প্রেসক্লাব হলো একটি সংস্থা, যা সাংবাদিকরা,প্রকাশক,প্রচারক,ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের জন্য একটি সংকল্প প্রদান করে। এটি প্রযুক্তিগত ও সাম্প্রদায়িক সাধারণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা ও মিডিয়া প্রতিনিধিরা পরস্পরের সাথে সাক্ষাত্কার করতে এবং সম্পর্ক করতে পারে।

উপজেলা-জেলা ও কেন্দ্র পর্যায়ে সাংবাদিকদের নানা রকম সংগঠন গড়ে উঠেছে,এমনকি ঢাকায় বিট পর্যায়েও রয়েছে স্বতন্ত্র সংগঠন।দুদকে, সচিবালয়ে,রাজউক গণপূর্তে,স্বাস্থ্য খাত,আদালত,শেয়ারবাজার,শিক্ষা,নির্বাচন কমিশন,অর্থ বাণিজ্য,ব্যাংক বীমা,নগর,পাওয়ার সেক্টর থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার কোন বিটে এসোসিয়েশন নেই তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।তারা সাংবাদিকতা বিকাশে, সাংবাদিকের স্বার্থে সারা বছর কি কাজ করছেন তা সকলের জানার সাধ্য নাই। তবে এসব সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবছর ফ্যামেলি ডে, পিকনিক, আনন্দ ভ্রমণ, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীসহ নানা অনুষ্ঠানাদির নামে বিস্তর অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে,রমরমা উৎসব খানাপিনার খবর সবাই জানি।

প্রেসক্লাব একটি মাধ্যমিক সংস্থা হিসেবে প্রচারিত হয়,যা বৃহত্তর সাংবাদিকতা অনুষ্ঠান,সাংবাদিক সম্মেলন,কার্যক্রম বা স্বাধীন প্রকাশনা এবং মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক প্রসারিত করে।এটি সাংবাদিকরা ও মিডিয়া প্রতিনিধিদের একত্রীকরণে সহায়ক হয় এবং তাদের মধ্যে মিলন সৃষ্টি করে।প্রেসক্লাবের মাধ্যমে সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরনের সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রতিনিধির সাথে আত্মসমর্থন করতে পারে,তাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠানের প্রচারের সাথে বিনিময় করতে পারে, প্রেস বিজ্ঞপ্তি বা অন্যান্য সাংবাদিক মূল্যায়ন প্রকাশ করতে পারে,এবং সাংবাদিক সাম্প্রদায়িক আয়োজন করতে পারে।

তার মধ্যে যদি নিজেদের সাংবাদিক জগতে ছোটখাট বিষয় নিয়ে বড় ধরনের কোন্দল থাকে বা হীন মানসিকতায় দুরত্ব থাকে তবেতো এই পেশায় টিকে থাকা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই হীনমন্যতা আর বিভেদের কারনে সাংবাদিক সমাজ জনগণের সম্মানের পাত্র এবং নিজেদের যথাযথ অধিকার আদায় থেকে বঞ্চিত হয়।

কোথাও কোথাও দেখা যায় পদ পদবি,ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত,অনেকেই,সাংবাদিক দের উন্নয়নে কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে, এসব সংগঠনের নেতৃত্ব স্থানে থাকা ব্যক্তিরা। কিছু কিছু জায়গায় দেখা মিলে একটি সংগঠনে নিজের মন মতো বড় পদ না পেলে নতুন আরেকটি সংগঠন তৈরি করে, বাস্তবে সাংবাদিক দের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা বলতে কিছুই থাকে না।শুধুই ক্ষমতার লড়াই।

খারাপ লাগে যখন দেখি,কেউ কাউকে অসম্মান করে ট্রিট করে।আর যিনি ট্রিট করেন তিনি যদি বাইরের লোক না হয়ে একই পেশার সিনিয়র পরিচয় দানকারী হয়।অথচ সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া দুইজন সাংবাদিক দুই পত্রিকার।দুটি পত্রিকাই নিবন্ধিত। ব্যবধানটা হচ্ছে কেউ সার্কুলেশন বেশী এবং বেশী পরিচিত পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছে এবং হয়তো এই পেশায় সিনিয়রও।আরেকজন সার্কুলেশন কম এবং কম পরিচিত পত্রিকায় সুযোগ পেয়েছে।পৃথিবীর সকল সাংবাদিকতো এক পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ নেই,এতো পোষ্টও নেই।আর এটা সম্ভব না।

অপরাধীরা এখন সংগঠন চিনে গেছে,সাংবাদিকদের জন্য তা আরেক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।উপজেলা থেকে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার বুলি আউড়িয়ে যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে,ক্লাব,সমিতি,এসোসিয়েশন, ইউনিটি বানিয়ে সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে – তাদের অনেকেই এখন উল্টো সাংবাদিকতার টুটি চেপে ধরার কাজেই ব্যস্ত।সঙ্গবদ্ধ অপরাধীরা কৌশলে সাংবাদিক সংগঠন বা এসোসিয়েশনকে নানা উপহার দিয়ে লেখক সাংবাদিকের মুখ বন্ধে বাধ্য করছে।এটা অভিনব এক পদ্ধতি।

এসব অনুষ্ঠান ও পুরস্কার প্রদানের স্পন্সর হিসেবে এগিয়ে আসেন চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।এক্ষেত্রে বরাবরই অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোই অগ্রণী ভূমিকায় থাকে।তারাই সকল সদস্যের জন্য চাল,ডাল,আটা থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত ত্রাণ স্টাইলে ভিক্ষা দেয়।আবার কোনো কোনো সংস্থা শুধুমাত্র সংগঠনের বাছাই করা কয়েক নেতাকে ডেকে নিয়ে আলাদা খাতির করে পকেট ভরে দেয়-অতি গোপনে তাদের বিদেশ সফরেও পাঠায়।অতি সম্প্রতি বিজিবি এ ধরনের বিশ্রী কাণ্ড ঘটিয়ে বেশ সমালোচনার মধ্যে পড়ে।

আর যেকোন নিবন্ধিত পত্রিকার সাংবাদিকতার আইডি কার্ড দেন পত্রিকার সম্পাদক।তিনিই পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তার মনঃপুত ব্যক্তিকে আইডি কার্ড প্রদান করেন।সেই নিবন্ধিত পত্রিকার সাংবাদিকতো কখনো ভূয়া হতে পারেনা।আর কোন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বা কোন সিনিয়র পরিচয় দানকারীতো তাকে ভূয়া বলে চিহ্নিত করতে পারেনা।এটাতো নিচক একটা হীনমন্যতা।

যতটুকু জানি,যুগের বর্তমান বাস্তবতার অনলাইন পত্রিকাগুলো নিবন্ধনের জন্য আবেদীত।আবেদীত পত্রিকা বা পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক কখনোও ভূয়া হতে পারেনা।যখন কোন অনলাইন পত্রিকা সরকারের নীতিমালার আওতায় আসবেনা বা নিবন্ধন পাবেনা বা দেশ বিরােধী কার্যক্রম করবে তখন রাষ্ট সেই পত্রিকার বিরুদ্ধে বিহীত ব্যবস্থা নিবে।তখনি তার সকল কার্যক্রম অবৈধ হবে।

যাই হোক অপরাধীরা অভিনব কায়দায় সাংবাদিকদের সংগঠনকে হাত করে সাংগঠনিক ভাবেও নিপীড়ন করে থাকে। সংগঠন,এসোসিয়েশন,ক্লাবে এতো দান খয়রাত করা লোকটির বিরুদ্ধে কোনো সাংবাদিক কিছু লিখলে তিনি বৈরী সাংবাদিক হিসেবে চিহ্নিত হন, ্সংগঠনের স্বার্থ বিরোধী সাংবাদিক হয়ে যান। তখন সাংগঠনিক ভাবে তাকে মোকাবেলা করার জঘন্যতাও শুরু হয়ে যায়।

মফস্বল পর্যায়ে এসব ঘটনা অহরহ দেখা যায়,তল ইদানিং রাজধানীতেও তা ঘটে চলছে।এসব এসোসিয়েশন থেকে নানা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশের ব্যাপারে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করারও বিদঘুটে নজির রয়েছে।নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও কোন সাংবাদিকের কাধে কয়টা মাথা যে,সংগঠনের শুভাকাঙ্ক্ষী অপরাধী,লুটেরার বিরুদ্ধে কলম ধরে? আমার মত বৈরী সাংবাদিক ছাড়া খুব কম সাংবাদিকই সে ঝুঁকি নেয়।যে অপরাধী নাসিরের বিরুদ্ধে একের পর এক নিউজ হলো,দেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যিনি চিহ্নিত – তার কাছ থেকেও যখন কোনো সাংবাদিক সংগঠন অনুষ্ঠানের নামে ৫ লাখ, ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তখনতো তাকে সাংবাদিক দরদী বলতেই হবে। তার বিরুদ্ধে কি কলম ধরার আর কোনো উপায় থাকে?

সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের পিন্ডি চটকানো যায়, তাই বলে কি তা নিয়ে নিজ সাংবাদিক সংগঠনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যায়?

কত ভালো হতো যদি আমরা দলমত নির্বিশেষে এই সব বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে সকল হীনমন্যতা দুর করে সকলে সহযোগী হয়ে কাজ করতে পারতাম।এতে কেউ অসাংবাদিক থাকলে শোধরে নিতে পারতো বা নিজের অজানা থাকলে জেনে নিতে পারতো অথবা এই পেশা নিয়ে কোন খারাপ মতলব থাকলে বিদায় নিতে বাধ্য হতো।জনমানসে আমাদের মর্যাদা ও উপযুক্ততা বৃদ্ধি পেত।জানি এই পেশার সকলে একত্র হয়ে কাজ করা কঠিন,তবু একটু চেষ্টার প্রয়াস।

আরও খবর

Sponsered content