লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

সবকিছুর আড়ালে সোনিয়ার দায় লুকিয়ে নেই তো?

  প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২২ , ৫:৫৩:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সোনিয়া। অপরপ্রান্তে নিলুফার স্বামী আশিক। যিনি আর কিছুক্ষণেই প্রাক্তন স্বামী হয়ে যাবে।

উকিল একটু সময় দিয়েছে ওদের। অনেক দিন পর সোনিয়া আশিককে দেখছে। ছয়মাস ধরে সেপারেশন চলছিল। উকিল বলেছে, এতদিন পর দেখা দু’জন দু’জনার চোখের দিকে তাকাও, মায়া হলেও হতে পারে।

সোনিয়া চোখ তুলে তাকায় আশিকের দিকে!

সবকিছু যেন স্পষ্ট হচ্ছে চোখের সামনে। সেদিন ছিল গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির দিন। বিকেলে জানতে পারে রাতে তার বিয়ে হবে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছিল। মামাতো বোন বারবার করে বলছিল,তুই এ যুগের মেয়ে হয়ে ছেলেকে না দেখেই বিয়েতে রাজি হলি কেমনে সোনিয়া,পরে যদি পছন্দ না হয়?

সোনিয়া বলেছিল, “আব্বা দেখেছে, ছেলে লম্বা, মোটামুটি সুন্দর। আমি আর দেখতে চাই না।”

বিয়ে নিয়ে সোনিয়া কখনোই অমত ছিল না।ছোট থেকেই সে বিয়ে করতে চাইতো।একটা পুরুষ মানুষ তার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি জাগতো মনের ভেতর।

বিয়ে পড়িয়ে যখন শ্বশুর বাড়ি নিয়ে আসা হচ্ছিল তখনও সোনিয়া বরের মুখ দেখেনি। একেবারে বাসর ঘরে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই সোনিয়া মনে প্রাণে ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গিয়েছিল।

একবার জ্বর হলো সোনিয়া। সামান্য জ্বরেই আশিক পাগল প্রায়। হাতে পায়ে তেল দিয়ে দেয়, চুল আঁচড়ে দেয়, খাবার খাওয়ায়ে দেয়। এতো যত্ন সোনিয়া নিজের বাবার বাড়িতেও পায়নি কখনো।

আশিকের অবস্থা খুব যে ভালো ছিল তা নয়।
তীল তীল করে সোনিয়া সংসার গুছিয়েছে।দুটো বাচ্চার দেখভাল করা সবকিছু মিলিয়ে সুন্দর ভাবেই সময় চলে যাচ্ছিল। দীর্ঘ বারোটা বছর চলে গেছে অথচ একবারের জন্যও মনে হয়নি এ সংসার ছেড়ে সোনিয়া কোনদিন চলে যেতে হবে।

সামান্য কারণে আশিক সোনিয়া গায়ে প্রথম হাত তুলে পাশের বাড়ির এক লোকের সাথে গল্প করার অপরাধে।সোনিয়া প্রতিজ্ঞা করেছিল জীবনে আর কখনও ওই লোকের সাথে গল্প করবে না। অথচ আশিক লোকটাকে জড়িয়ে নোংরা নোংরা কথা শুনাতে লাগলো। এক পর্যায়ে সোনিয়াও আর সহ্য হতো না। শুরু হতো ঝগড়া।

হঠাৎ একদিন আশিকের গ্যালারিতে ঢুকে দেখে এক মেয়ে আশিকের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে। সোনিয়া পৃথিবী যেন উলট পালট হয়ে আসে। আশিককে প্রশ্ন করলে সে সব স্বীকার করে বলে, মেয়েটার সাথে তার রিলেশন চলছে,তাকে বিয়ে করতে চায়।তবে সোনিয়াও ছাড়তে চায় না।

মেয়েটার সাথে কথা বলা বন্ধ করতে সোনিয়া আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়, শুরু হয় দাম্পত্য কলহ।

একদিন কথা কাটাকাটিতে সোনিয়াকে প্রচণ্ড মারে। সোনিয়া ব্যাগ গুছিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। ভাবে কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে।

এত বছর পর এ জীবন চিনতে পারে না সোনিয়া। সবকিছু যেন দ্রুত ঘটছে।

কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর সোনিয়া মনের ভেতর আত্মমর্যাদা ভর করে। ভাবে কই আশিক তো কখনো ফোন করে না? ছেলেমেয়েদের খোঁজ নেয় না?একবার বলেও না, যা হয়েছে হয়েছে তুমি চলে আসো?

সোনিয়া অপেক্ষা করে আশিক একবার শুধু বলবে চলে আসো সোনিয়া,তাহলে সে ছুটে চলে যাবে। বলবে,আর কখনো এমন হবে না।

ভাবে কত সুন্দর সাজানো সংসার ছিল আমাদের, আশিক কত ভালোবাসতে আমাকে!আদৌও কি আশিক ভালোবাসতো, কিংবা আমরা সুখী ছিলাম? নাকি সব ধোঁকা। নিলুফা কখনো ভেবে দেখেনি। কিন্তু ভাবা উচিত ছিল আশিক শুধু কর্তব্য করছে,না ভালোবেসেছে।বুঝতে পারেনি সোনিয়া। অভ্যস্ততার কারণে আলাদা করে বুঝার চেষ্টা করেনি কখনো।আশিক যা করেছে সেগুলো ও ভালোবাসা হিসেবেই ধরে নিয়েছে। কখনো মনের অবস্থা জানতে চায়নি।এজন্য কি আশিক অন্য কোথাও ভালোবাসা খুঁজেছে?এ সবকিছুর আড়ালে সোনিয়ার দায় লুকিয়ে নেই তো?

সোনিয়া অনেক বার নিজে থেকে চলে যেতে চেয়েও থেমে গেছে। নিজের হাতে গড়া প্রতিটি জিনিস,সবই তো তার। এভাবে সে পর হয়ে যেতে পারে না।কিন্তু মনে জেদ তৈরি হয়।এতদিন যেমন সোনিয়া আশিকের সাথে সংসার করেছে আশিকও করেছে।আশিক যদি সব ভুলে যায়, ও কেন পারবে না?

পরিস্থিতি একসময় অহংবোধ এ পৌঁছে যে, অবশেষে কোর্টেই দেখা করতে হলো।

আশিকের দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থেকে সোনিয়ার দু’চোখ ভরে উঠেছে।মনে মনে বলছে একবার,আশিক একবার শুধু বলো আমি ডিভোর্স চাই না।একবার শুধু বলো, যা হয়েছে সব ভুলে সংসার করতে চাই।তাহলে আমি তোমার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।আমি আসতে চাই তোমার কাছে।আমার চোখের দিকে তাকিয়েও কি বুঝো না?

উকিল সোনিয়াকে প্রশ্ন করলে সোনিয়া আশিককে জিজ্ঞেস করতে বলে, আশিক সোনিয়া থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে, ডিভোর্স চাই।অবশেষে বারো বছরের সংসারের ইতি ঘটেছে।

আরও খবর

Sponsered content