লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

মেঘের সাথে জোর জবরদস্তি করে মহিলার বয়স চল্লিশ বছরের কাছাকাছি বিয়ে দেওয়া হয়

  প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২২ , ১:২০:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।নিজের মায়ের বয়সও মনে হয় চল্লিশ বছর হবে বলে মনে হয়না তার।তারই বা বয়স কত!বিশ বছরে পরলো।কাঁন্না ভেঙে আসতে লাগলো তার। হিন্দুদের নিয়ে কুসংস্কার কথা বলাতে যে এমনটা ঘটবে জানা ছিলনা মেঘের।চারপাশে মানুষের নানান ভঙ্গিতে হাসি দেখা যাচ্ছে। সবাই বিয়েতে মেতে উঠেছে।

এদিকে মেঘের যেনো কাঁন্না বেরিয়ে আসছিল। কাঁন্না করে লাভ নেই। শুধু শুধু অচেনা মানুষের কাছে নিজেকে আরো লজ্জায় ফেলতে চাই না সে।যেভাবেই হক তাকে এই ঝামেলা থেকে বের হতে হবে। নিজেকে যতক্ষণ না আড়াল করতে পারবে ততক্ষণ তার সব কিছু বিষের মতো লাগবে। চেনো! করলা কেমন তেতো হয়!যারা তেতো পছন্দ করেনা একদম ঠিক তেমনই অবস্থা। তেতো মেঘেরও পছন্দ নয়। তার পছন্দ মিষ্টি জাতীয় জিনিস। মূহুর্তটা তেতোর চেয়েও বিশ্রি হয়ে দাঁড়াল মেঘের কাছে।

-“সিএনজি এনেছি। তোমাদের রেললাইন পর্যন্ত পৌছে দিবে। এরপর তুমি তোমার নতুন বউকে নিয়ে যেখানে খুশী যেতে পারো। তবে একটা কথা, এরপর কখনো এদিকে আসবে না। নাহলে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দাপন করে ফেলব।”

মুরব্বিদের কথার ধরণ মেঘের জানা ছিল। তবে এতোটা ভয়ংকর প্রথম দেখতে পায় মেঘ। চোখটা নিচু করে হালকা আওয়াজ করে বলল,
-“আর কখনো এদিকে আসবো না।”

ব‍্যাস! এরপর আর কোনো কথা নেই সিএনজিতে উঠে পরলো মেঘ। পাশে অনুভব করলো তার স্ত্রী, যার বয়স কিনা তার মায়ের কাছাকাছি। না, এখন সবটা পথ তার চুপ থাকা প্রয়োজন। এরপর গ্রামটা থেকে অন্তত ছাড়া পাওয়া যাবে।
এমনিতে হিন্দুপাড়া সর্বক্ষেত্রে ভয়ংকর থাকে।
.

সিএনজি চালক রেলস্টেশনে পৌছে দিয়ে যায়। পথে নড়াচড়া করার শক্তি হয়নি মেঘের। কিন্তু সিএনজি এর ছোট ছোট খাদে পরার ধাক্কা অনেকবার অনিতার (স্ত্রী) সাথে লেপ্টে যাচ্ছিল শরীর। অনিতা কেমন অনুভব করলো তার মাথায় ছিল না। তবে সে কেমন ফিল করলো? নতুন বিবাহিত বউ এর সাথে এমনটা রোমান্টিক হয় বলে দাড়ায়। যদিও মেঘের ক্ষেত্রে ব‍্যাপারটা অন‍্যরকম। তার ভিতর ভয় এবং অসহায়ত্ব দুটোই ভেদ করে যাচ্ছে। অল্প বয়সে বিয়ে করা বিন্দুমাত্র আসা ছিলনা তার ভিতর।

অনিতা খেয়াল করলো মেঘের শরীর কাঁপছে। শরীর যেনো ভেজা ভেজা হয়ে উঠলো মেঘের। কেমন খাপছাড়া খাপছাড়া হয়েগেল। মুখটা দেখতে কি মিষ্টি! খুব ছোট একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব যেনো। ঠোঁট গুলো গোলাপি রঙের। মুখটা বাচ্চাদের মতো তুলতলে। তার বাচ্চাদের গাল অনেক পছন্দ। দুগালে দুহাত রেখে টিপতে তার অনেকটা ভালো লাগে। ইচ্ছে হচ্ছিল মেঘের গালেও এমনটা করতে। কিন্তু বিবাহিত স্বামীর গালে এমনটা করা বোকামি ছাড়া কিছু না। মেঘ কি ভাববে? তাকে হয়তো পাগল ভেবে নিবে। এরচেয়ে নিজেকে সচেতন রাখাই ভালো। কখন হুটহাট মেঘের গাল টিপে দেয়!

ভাবতে ভাবতে মুখ টিপেটিপে হাসছিল অনিতা। মেঘ খেয়াল করলো ব‍্যাপারটা। ট্রেনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। খুব নিকটে এসে পরেছে ট্রেন। উঠবে, আর যাবে। এরপর আপদ বিদায়।

-“আচ্ছা কিছু বলছিলেন আমায়? মনে হলো আপদ বলে গালি দিচ্ছিলেন।”

অনিতার মুখে এমন কথা শুনে চোখ যেনো বের হয়ে আসবে। তার মুখ থেকে সিএনজিতে উঠার পর থেকে একটা শব্দ বের হয়নি। তাহলে মনে মনে কথা বলা শুনতে পেলো নাকি!

-“কখন বললাম। আমি বলি নাই তো।”
মেঘের কথা কেমন জানি আটকে আটকে যাচ্ছিল। কথা বলার শক্তি যেনো হার্টবিট এর মতো হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা হয়ে আসছিল। মস্তিষ্ক যেনো কাজ দিচ্ছিল না। হৃদপিণ্ড ধকধক ধকধক আওয়াজ দিচ্ছিল। বাড়ি ফেরা মনে হয় তার হবে বলে মনে হচ্ছিল না। অনিতার দি’কে খেয়াল করলো। তাকে ব‍্যস্ত মনে হলো।

অনিতা উত্তর দিতে গিয়েও উত্তর দিলো না। ট্রেন এসেছে কিন্তু মেঘকে দেখে মনে হচ্ছিল অসুস্থ হয়ে পরেছে। কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আসলো কিনা। না, জ্বর নেই। মেঘের শরীর ঝাপটে ধরে ট্রেনে উঠালো। মেঘ তখনও অচেতন অবস্থায় ছিলনা। তার চোখ কান হতে সবকিছু সচল ছিল। অতিরিক্ত টেনশন এবং ভয়ের কারণে একটু দুর্বলতা দেখা দিল। বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। অসুস্থ শরীরের সবচেয়ে দামি ঔষুধ হলো ঘুম। অসুস্থ হওয়ার পর এক’ঘুমে সব ক্লান্তি, দুর্বলতা, চিন্তা সবকিছু ফ্রেশ হয়ে যায়।

মেঘ সিটে বসতে ঘুমিয়ে পরে। অনিতার একটু খারাপ লাগল। সারাটা রাত জেগে অসামাজিক ক্লানি ভোগ করতে হয়েছে। সবকিছু তার জন‍্যই হয়েছে। তার জন্মের পর থেকে পরিবার এবং গ্রামে অশুভ শক্তি বাসা বেধেছে। জন্মের পর ঠাকুর মশাই নামের কোন ব‍্যক্তি বলেছিলেন তার জন্ম তাদের জন‍্য অশুভ। তার বিয়ে তার বয়সের অর্ধেক ছোট মোসলেম ধর্মের যুবকের সাথে দেওয়ার পর তাদের পরিবার এবং গ্রামে সুখ শান্তি ফিরে আসবে। সবকিছু শুভ হতে থাকবে। বিষয়টা সবার কাছে কঠিন ছিল।

কিন্তু মেঘের মতো বাচ্চা ছেলের সাথে জোর জবরদস্তি বিয়ে দিবেন গ্রামের লোকজন তার জানা ছিল না। সে হয়তো ভেবে নিয়েছিল তার কখনো বিয়ে হবে না। তার মতো অলুক্ষুণে মেয়ে পৃথিবীতে হয়তো আর একটাও নেই।

ট্রেন গন্তব্যে পৌছাতে অনিতা মেঘকে ডাকতে লাগলো। তখন সাড়ে নটার কাছাকাছি। ভোর পাঁচটায় ট্রেনে উঠেছিল। একটুও ঘুম যায়নি অনিতা। ঘুম যাবে কি করে? তার তো ঘুম আসার কারণ ছিলনা। তার বিয়ের রাত তাকে ট্রেনে কাটাতে হয়েছে।

অনিতার ডাকে মেঘের ঘুম ভাঙলো। দেখতে ফেলো আলিপুর স্টেশন এসে পরেছে। অনিতার দি’কে তাকালো। চুপসে কিছুখন দেখে চোখ সরিয়ে ফেলল। অনিতার ব‍্যাপারটা তার মানতে একদম ইচ্ছে নেই। কিন্তু গলাই যখন দড়ি দিয়েছে তখন ফাঁস এর চেয়ে গলাই কলসি বেঁধে বেঁচে থাকা অনেক ভালো। বুদ্ধিমানের কাজ।

ট্রেন থেকে নেমে কিছুদূর হাটার পর সিএনজি নিল মেঘ। তার ফকেট ভর্তি টাকা ছিল। গিয়েছিল হিন্দুদের পূজো দেখতে। হাত ভর্তি টাকা নিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু টাকার সাথে সাথে নিজের লাইফ শেষ হয়ে গেলো। শূন‍্য ফকেট, শূন্য লাইফ নিয়ে বাসায় ডুকলো মেঘ। তার পরিবর্তে একজন মহিলা নিয়ে এসেছে।

মেঘের চাচি দেখলেন মেঘ একজন মহিলা সাথে নিয়ে দরজায় উকি দিচ্ছে। অন‍্য সময় মেঘ বাসায় ডুকতে সময় নিতো না। কিন্তু আজকে হঠাৎ দরজায় দাড়িয়ে! সাথে এটা কার বউ? দেখে তো মনে হয়না বউ বউ। মনে হচ্ছে একজন মহিলা। বউ সাঁজলো কেনো এমন বয়সে তিনি? আচ্ছা, মেঘের বাপ কি আর এক বিয়ে করলো নাকি!!

মেঘের চাচি হেলেনার ব‍্যাপারটা একদম ঠিক মনে হলেন না। তিনি মেঘের আম্মুকে চেচিয়ে ডাক দিলেন।

-“ঐ মেঘের মা! কতো বড় কেলেঙ্কারি হয়ে গিয়েছে এসে দেখে যাও। তোমার বর তো আর একটা বিয়ে করলো গো!”
বলেই বিলাপ করতে লাগলেন তিনি। হেলেনার চেচামেচিতে মেঘের বাবা এবং মা দুজন দৌড়ে আসলেন। মেঘের বাবা আসরাফ সাহেব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখলো দরজার সামনে বিয়ের শাড়ি পরা একজন মহিলা বউ সাঁজ এ দাড়িয়ে আছে। পাশে হেলেনা মেঘের মা শায়েলা খাতুনকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করতে লাগলেন। তিনি বুঝলেন না, তার বিয়ে করা স্ত্রীর এতোটা রিয়েকশন হচ্ছে না কিন্তু দুঃস্পর্কের আত্মীয়ের এতো বিলাপ কেনো!

আরও খবর

Sponsered content