সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রের নির্ধারিত নিয়মে পর্দা করা না হলে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করা হয় অর্থাৎ জবরদস্তি করা হয়

  প্রতিনিধি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৫:০৪:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।বর্তমানে প্রচলিত ভারসাম্যহীন বিকৃত ইসলাম পর্দার নামে বাড়াবাড়ি করে নারীদেরকে পশ্চাদপদ করে রেখেছে। অন্যদিকে ভারসাম্যহীন পশ্চিমা জীবনব্যবস্থা নারীদেরকে অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করছে। এই দুটি জীবনদর্শন থেকেই আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নারীরা শালীনতার সহিত মানবতার কল্যাণে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মহান সংগ্রামে তারাও পুরুষের পাশাপাশি তাদের সমস্ত শিক্ষা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুক, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। দীনের নামে জোরজবরদস্তি, বাড়াবাড়ি অথবা পশ্চিমাদের উশৃঙ্খল অসভ্যতা কোনোটিই আমাদের কাম্য নয়।

রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে হেজাব না পরায় পুলিশের মারধরের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা মাহশা আমিনি এখন পুরো ইরানে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। পর্দা নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা কতটা যৌক্তিক?

চুরি করা টাকা দান করাটা যেমন দানশীলতার পরিচয়, দীনের বিষয়ে জোরজবরদস্তি হচ্ছে ঠিক তেমন ধার্মিকতার বহিঃপ্রকাশ! ইরানের মাশা আমিনির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মুসলিম সমাজের বাস্তব অবস্থা। ধর্মের নামে উগ্রতা ও সহিংসতা এখন বেশ কিছু রাষ্ট্রের জাতীয় নীতিতে পরিণত হয়েছে।

মানুষের চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে ইসলামের একটি সৌন্দর্য। ইসলামের নিজস্ব একটি জীবনপদ্ধতি আছে কিন্তু কোন মানুষের উপরে কোন বিধান জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এই দীনের নীতি-বিরুদ্ধ। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, “এই দীনে কোন জবরদস্তি নেই। লা ইকরাহা ফিদ্দীন (সুরা বাকারা ২৫৬)।” কিন্তু মুসলমান সমাজে আজকাল গায়ের জোরে নারীদেরকে পর্দার নামে আপাদমস্তক আবৃত করতে বাধ্য করার মানসিকতা ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।

মূলত বিকৃত ইসলামের ধারকবাহকরা নারীর উপর পর্দার নামে অবরোধ প্রথা চাপিয়ে দিয়েছে। মওধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে রাষ্ট্রের নির্ধারিত নিয়মে পর্দা করা না হলে প্রকাশ্যে লাঠিপেটা করা হয় অর্থাৎ জবরদস্তি করা হয়। কিন্তু কোনো মানুষ যদি কোন নির্দিষ্ট ধরনের পোশাক পরতে রাজী না থাকে, তাকে সেটা পরতে বাধ্য করা দীনের একটি নীতি ভঙ্গ করা।

মহান আল্লাহ পর্দা করা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ফরয (বাধ্যতামূলক) করেছেন। তবে এই বিধান শুধুমাত্র মোমেন-মোমেনার জন্য প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ কোর’আনে মোমেন-মোমেনাকে অ্যাড্রেস করে পর্দার বিধানসমূহ প্রণয়ন করেছেন। পৃথিবী হচ্ছে হাজারো ধর্মের, মতের ও বিশ্বাসের মানুষের বিচরণ ভূমি। তাই সর্বসাধারণের উপর এই বিধান প্রযোজ্য নয়।

ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার জন্য করেছে। মূলত পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content