সম্পাদকীয়

তখনকার সেই বানিজ্য মন্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত কোন দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দণ্ডণীয় অপরাধ ছিলো

  প্রতিনিধি ৩১ আগস্ট ২০২২ , ৪:৪২:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।বিগত ৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জীবন দূর্বিষহ ক্রান্তিকালে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাসায় গিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে পরের দিনই ৭টাকার পেঁয়াজ প্রতিকেজি বেড়ে ৩০টাকা হয়ে যায়।

৯৮” সেইদিন ব্যবসায়ীরা দ্রব্য মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করে তালিকা দেওয়া হলেও বানিজ্য মন্ত্রী দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়!

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য অনুমতির প্রয়োজন ছিল। তখনকার সেই বানিজ্য মন্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত কোন দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দণ্ডণীয় অপরাধ ছিলো।

সেইদিন ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর সাথে দেখা করে বললেন মন্ত্রী মহোদয়, আমাদের এই আয় দিয়ে পরিবার প্রতিপালনে অক্ষম,আমরা তাই এসব দ্রব্য মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা করতে চাই।

মন্ত্রী বললেন,তোমরা পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা নয়, ৩০ টাকা করে দাও!!!

ব্যবসায়ীরা বললেন মন্ত্রী মহোদয় এতে তো সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল অরাজকতা সৃষ্টি পূর্বক হাহাকার শুরু হয়ে যাবে!

মন্ত্রী বললেন – এই চিন্তা তোমাদের করতে হবে না, তোমরা তোমাদের লাভের চিন্তা করো। তোমরা এখন থেকে ৩০ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি করবে।

মন্ত্রী কথায় ব্যবসায়ীরা পরদিনই পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়।প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০টাকা করে বিক্রি করে।চাল, ডাল,পেঁয়াজ,রসুন,আদা,জিরা মশল্লা,আলু,আটা সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ঘোষণা অনুযায়ী বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা।প্রতিকেজি পেঁয়াজ বাড়িয়ে ৩০ টাকা করে দিলেন। সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি,সারাদেশে সমোচলনার ঝড় ওঠে। এনিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা করা হয়।দেশে হাহাকার দেখা দিয়েছে।

বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেছেন, এই দুষ্কৃত ব্যবসায়ীকে ধরা হবে। আমি আগামীকাল বাজারে যাবো।রাতেই ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর সাথে দেখা করে।পরের দিনই বানিজ্য মন্ত্রী মহোদয় বাজারে গিয়ে সরাসরি মিডিয়ায় লাইভে সম্প্রচার করা সংবাদের শিরোনাম বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজারে পরিদর্শনে আসার আগেই ৩০টাকার পেঁয়াজ প্রতিকেজি কমে ১২টাকায় বিক্রি, কমছে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও!!!

বানিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বাজার পরিদর্শন “জয় মন্ত্রী মহোদয় জয়” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুললো।তারপর মন্ত্রীর আদেশেই ৭ টাকার পেঁয়াজ ১২ টাকায় বিক্রি শুরু।সাধারণ জনগণ খুশি আর ব্যবসায়ীতো মহাখুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার স্বরূপ শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে তোফায়েল আহমেদকে দায়িত্ব দেন।

যদিও আমার পরিবারের সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী। তখন ছোট থাকলেও আওয়ামী লীগের জননন্দিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল অনুষ্ঠান রেডিওতে শুনতাম এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার দেখতাম। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সরকার যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা চাপিয়ে দিয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে ভর্তুকি দিয়ে ৩৬টাকা কমে বিক্রি করা হলে,সারাদেশে সমোচলনার ঝড় বয়ে আনতো না। সরকারের সকল উন্নয়ন ও উৎপাদন ভেস্তে গেল।আশাকরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বাধিক বিবেচনায় নিয়ে জনসাধারণের দূর্ভোগ লাগবে জ্বালানি তেলের মূল্য অর্ধেক কমিয়ে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরকে নির্দেশ পূর্বক হাহাকার মুক্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবেন।

আরও খবর

Sponsered content