সম্পাদকীয়

বিচারকের দেহের ত্বক জীবিত অবস্থায় তুলে নেয়ার আদেশ!

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১:১৩:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালে পারসিক সম্রাট ক্যাম্বাইসিস ২য় এর সময় সিসামনেস নামে একজন রাজকীয় বিচারক ছিলেন। তিনি ঘুষের বিনিময়ে অন্যায্য রায় প্রদান করতেন। রাজার কাছে অভিযোগ যায়, তদন্তে বিচারকের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজা বিচারকের দেহের ত্বক জীবিত অবস্থায় তুলে নেয়ার আদেশ দেন।

তারপর প্রধান বিচারক কে হবেন সে বিষয়ে ওই ঘুষখোর বিচারকের মতামত চান রাজা। লোভী বিচারক নিজ পুত্র ওতানেস এর নাম প্রস্তাব করেন।

রাজা মহোদয় ওতানেসকে প্রধান বিচারক নিয়োগ দেন। ছেলে ওতানেস প্রধান বিচারক হয়ে আদেশ দিলেন পিতা সিসামনেসের চামড়া প্রধান বিচারকের আসনে ব্যবহৃত হবে।

ছেলে ওতানেস দীর্ঘদিন সুনামের সাথে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি প্রতিনিয়ত স্মরণ রাখতেন তার পিতার চামড়া দিয়ে তৈরী আসনে তিনি বসে রায় লিখছেন।

২)হজরত উমর (রা:) এর শাসনামলে কাজী শুরায়হের আদালতে স্বয়ং খলিফা ওমরের বিরুদ্ধে সাওয়ারীর (এক জাতীয় যানবাহন) ক্ষতি সম্পর্কে এক ব্যক্তি বিচার প্রার্থনা করে। বিচারটি ছিল- খলিফা ওমর সাওয়ারিটি নিয়ে তা অপরকে আরোহণ করতে দিয়েছিলেন।

এতে সাওয়ারিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিচারক উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রায় দিলেন।

রায় খলিফা উমরের বিরুদ্ধে চলে যায়। অর্ধ জাহানের খলিফার বিরুদ্ধে রায়! যার নাম শুনলে সিংহহৃদয় পুরুষদের অন্তরও কেঁপে উঠতো। কিন্তু ইনসাফ ও ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হজরত উমর এ বিচারের রায় মেনে নিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করেননি।

বরং অম্লান বদনে রায় মেনে বাদির দাবি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।

নির্ভীক বিচারের রায়ের ফলশ্রুতিতে হজরত উমর তাঁকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। ৭৫ বছর পর্যন্ত তিনি কুফার বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। যা ছিল সৎ সাহসিকতার নগদ প্রাপ্তি। অথচ এখনকার বিচারকেরা স্থায়ী নিয়োগ পেতে স্বয়ং খলিফাকে খুশি করতে চমকপ্রদ ও বিতর্কিত রায় প্রদান করে থাকেন।

এবার এ গল্পটি দিয়েই লেখাটি শেষ করতে চাই। হজরত আলী (রা:) এবং এক ইয়াহুদির মধ্যে একটি লৌহবর্ম নিয়ে বিবাদ ছিল। বিচারক বলেন, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি ঐ ইয়াহুদির চেয়ে মর্যাদাবান এবং বিশ্বস্ত।

কিন্তু ন্যায় বিচারের দৃষ্টিতে উভয়েই সমান। আপনি আপনার দাবির পক্ষে সাক্ষী হাজির করুন। হজরত আলী (রাঃ) তাঁর দাবির পক্ষে ছেলে হজরত হাসান (রা:) ও তার ক্রীতদাসকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করেন।

কাজী তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য এবং মনিবের পক্ষে দাসের সাক্ষ্য গৃহীত হয় না। ফলে আপনার দাবি অগ্রাহ্য হলো।’ বিচারের ফয়সালা ইয়াহুদিরে পক্ষে চলে যায়। ইয়াহুদি ওই কাজী’র বিচারিক কার্যক্রম দেখে ইসলাম গ্রহণ করেন।

আল্লাহর ভয় যাদের অন্তরে রয়েছে তারা জাগতিক কোনো মহাক্ষমতাধর ব্যক্তিকে ভয় করে না। হোক সে অর্ধ জাহানের মহান শাসক হজরত উমর বা হোক কোনো রাষ্ট্র নায়ক। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সকল বিচারকেরদের ন্যায় নীতির উপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আরও খবর

Sponsered content