সম্পাদকীয়

মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে, ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে!

  প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৮:১৭:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।৭৫-এর পর বাংলাদেশের রাজনীতি স্বাধীনতা বিরোধীদের ‘ভারতবিরোধিতা’ ছিল সস্তা এক প্রবণতা ঠিক পাকিস্তানের প্রপাগান্ডার মত। মূর্খ বাঙ্গালিরা ধর্মের মিথ্যা টোপ গিলেছেও বেশ। ‘ভারত জুজু’র ভয় দেখিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারাকে জোরে সোরে পুনর্বাসন করে এরা। ভারত বিরোধিতা, আওয়ামী লীগ-বিরোধিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধিতা ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে একবিন্দুতে মিলিয়ে বিদেশী অর্থে এরা বিশাল প্রচারে নামে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্যে হবে, মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে, ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বক্তব্য গোয়েবলসীয় কায়দায় সারা দেশে আওয়ামী বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। জিয়া, এরশাদ এবং বেগম জিয়া লাগাতারভাবে এসব সস্তা বুলি আওড়িয়েই জনগণের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন এবং ক্ষমতায় থেকেছেন। এসব বক্তব্য দিয়ে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ডালপালা মেলার সুযোগ করে দিয়ে জিয়া-এরশাদ-খালেদা দুই দশক ধরে ফায়দা লুটেছে।

বাংলাদেশের আর এক সেনা শাসক জেঃ এরশাদ ভারত সফর করতে গিয়ে দেশের জন্য এক জোড়া গাভি উপহার এনেছিলেন। জিয়ার মৃত্যুর পর তৎকালীন সেনাপ্রধান জেঃ এরশাদও গুরু জিয়ার ন্যায় একইভাবে ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশে ২-য় বারের মত সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে “জাতীয় পার্টি” নামে একটি দল গঠন করে দেশ পরিচালানা করা শুরু করেন।

এরশাদ ক্ষমতায় এসেই নানাভাব ভারতের মনজয়ের চেষ্টা করেন। ৬ অক্টোবর, ১৯৮২ সালে রওশন এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে ভারত সফরে যান এরশাদ। ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবর অনুযায়ী এরশাদের সামরিক আইন জারি এবং তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ভারত সরকারের কাছে। ‘আনন্দবাজার’ জানায়, ভারতের পক্ষ থেকে এরশাদকে এক জোড়া গাভি উপহার দেওয়া হয়।

পরের বছর জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এরশাদ আবার দিল্লি যান। এবার তিনি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একটি বৈঠক করতে সক্ষম হন। কিন্তু বাংলাদেশের অমীমাংসিত ইস্যু আলোচনার টেবিলেই আনতে পারেননি এরশাদ। ’৮৪-এর ৩ নভেম্বর এরশাদ ভারতে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর শেষকৃত্যে যোগ দিতে। এরশাদের শেষ ভারত সফর ছিল ১৯৮৬ সালের ১৬ জুলাই। এটি ছিল এরশাদের প্রথম এবং একমাত্র রাষ্ট্রীয় সফর। রাজীব গান্ধীর সঙ্গে এ বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন কিংবা স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। ভারত সফরে গিয়ে এরশাদ কি এনেছিলেন তা পাঠকরা নিশ্চয় জানতে পারলেন।

আসল কাহিনী হল;

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে চটকদার ইস্যু ছিল ‘ভারত’ বিরোধীতা ও ধর্মের নোংরা ব্যবহার। এমনকি ’৯৬-এর নির্বাচনী প্রচারণায় বেগম জিয়া ফেনীর এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতলে ফেনী ভারতের দখলে চলে যাবে।’ (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ৩০ মে ১৯৯৬)। কিন্তু ভারত জুজু ওই নির্বাচনে কাজে আসেনি। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

এখন ডিজিটাল যামানায় সব ভন্ডামি প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতার পক্ষের মুক্তমনা দেশপ্রেমিক নাগরিকরাও তাৎক্ষণিক জবাব দেন। যে কারনে আর সুবিধা করতে পারছেন না। শুধু ভারত বিরোধিতা নয় রাজনীতি হোক দেশকে ভালবাসে দেশপ্রেমে, বন্ধ হোক সকল দূর্ননীতি আর সকল অনিয়ম।

আরও খবর

Sponsered content