লেখক ও কলামিস্ট এবং মন্তব্য কলাম:-

কিশোর গ্যাং একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি ও মহা বিষফোড়ার নাম

  প্রতিনিধি ২২ মে ২০২৪ , ৫:৪৩:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

ইয়াসিনুল হক।।কৈশোর মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।এসময়েই রচিত হয় জীবনের ভিত্তি।কিন্তু কিশোররা যখন বিপদগামী হয়ে অপরাধে লিপ্ত হয়,তখন সেই অমিত সম্ভাবনাময় কিশোরটিই পরিণত হয় দেশ ও জাতির মহা আপদে।

বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি ও মহা বিষফোড়ার নাম।প্রথম দিকে কিশোর গ্যাং কালচার রাজধানী ও বড় বড় বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

কিন্তু বর্তমানে সারা দেশে ভয়াবহভাবে বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তার।শহর,নগর ও গ্রাম সর্বত্রই সমান তালে গ্যাং কালচারের আধিপত্য।প্রতিটি জনপদেই তারা সাধারণ মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে।পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর লেখাপড়া না জানা ভবঘুরে কিশোর থেকে শুরু করে অভিজাত ঘরের কিশোররাও জড়িয়ে পড়ছে এ অভিশপ্ত কালচারে।কিশোর গ্যাং কালচার শুরুতে আড্ডা কিংবা ইভটিজিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তা এখন ছিনতাই,চাঁদাবাজি,মাদকব্যবসা,ভাঙচুর, দখলদারিত্ব,আধিপত্য বিস্তার এমনকি খুনখারাপি পর্যন্ত গড়িয়েছে।শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই নিরাপদ নয় তাদের কাছে।

মেহেন্দিগঞ্জ বাসীদের নিকট দুঃসংবাদ হচ্ছে এই কিশোর গ্যং নামক বিষফোড়া মাথাচারা দিয়ে উঠেছে মেহেন্দিগঞ্জ এর বুকে।গত ইং ২০/০৫/২০২৪ তারিখ বিকাল ০৪.০০ ঘটিকার সময় শরিফুল ইসলাম (২১), পিতা মৃত- সবুজ ঢালী, সাং চরহোগলা ০১নং ওয়ার্ড, মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা, থানা- মেহেন্দিগঞ্জ,জেলা- বরিশাল কিশোর গ্যাং এর আক্রমনের শিকার হয়।

মেহেন্দিগঞ্জ থানাধীন ৮-১০ জন কিশোরগ্যাং এর সদস্য ভিকটিম শরিফুল ইসলামকে উত্তর বাজার ঈদগাহ মাঠের সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে অমানবিকভাবে মারধর করে তার পরিবারের কাছে চাঁদা দাবী করে।

ভিকটিমের পরিবারের লোকজন শরিফুল ইসলামকে উদ্ধার করার জন্য কিশোর গ্যাংদের দেয়া তথ্য মতে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে ভিকটিমকে ছেড়ে দিতে অনুনয় বিনয় করে।

কিন্তু কিশোর গ্যাংরা তাদের দাবীকৃত টাকা ছাড়া ভিকটিমকে তার পরিবারের নিকট কোন ভাবেই বুজিয়ে দিতে রাজি হয়নি। একপর্যায়ে কোন উপায় না পেয়ে ভিকটিমের পরিবার জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায় এবং আইনি সহায়তা চায়।

৯৯৯ এর সংবাদ পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার একটি চৌকস টিম এসআই শাহিনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিকটিম শরিফুল ইসলামকে ঘটনাস্থলে রেখে পালিয়ে যায়।

মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করে তার পরিবারের সদস্যদের নিকট বুঝিয়ে দেয় এবং ঘটনার বিস্তারিত তাৎক্ষণিক অবহিত হয়।ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে থানায় এসে উক্ত ঘটনার বিষয়ে এজাহার দায়ের করলে অফিসার ইনচার্জ জনাব মো ইয়াছিনুল হক মহোদয় সাথে সাথে মামলা রুজু পুর্বক আসামিদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে এসআই শাহিন,এএসআই স্বপন তাদের টিম অত্র ঘটনায় জড়িত মুল হোতা সহ ০৬ (ছয়) জন আসামীকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের নাম ঠিকানা এবং বয়স যাচাই করে দেখা যায় তাদের বয়স ১৭ থেকে ২১ বছরের মধ্যে।এরা এলাকার উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির।তারা চাঁদার জন্য এলাকার নিরীহ লোকজনকে আটকে মারধর করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।তারা উঠতি বয়সী অপরাধী।গ্রেফতারকৃত ০৬ জন অপরাধীর মধ্যে ০২ জন ইতিপূর্বে অনুরূপ কর্মকান্ড ঘটালে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তাদের পরিবারের অনুরোধে তাদেরকে ভালো হওয়ার শেষ সুযোগ দেওয়ার শর্তে তাদের অভিভাবকদের নিকট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু কোন কিছু আমলে না নিয়ে তারা পূনরায় একই অপরাধ সংগঠনে যুক্ত হয়।রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে।অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তি মদদ দিচ্ছে মর্মে আটক ব্যাক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।

মেহেন্দিগঞ্জ এর কিশোর গ্যাং যাদের ছত্র ছায়ায় বেড়ে ওঠার চেষ্টা করছে তাদেরকে হুশিয়ারি বার্তা প্রদান করা হচ্ছে যদি কোন কিশোর গ্যাং এর পিছনে স্থানীয় কোন ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।এলাকাভিত্তিক গ্যাং সদস্যদের সংখ্যা,নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী কিশোর গ্যাং সদস্যদের তৎপরতা রোধে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।কিশোর গ্যাং নামে মানুষ শকুনদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।অন্যথায় এ অপরিণামদর্শী গ্যাং সদস্যরাই বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূলে আঘাত হানতে পারে।

তাই আসুন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকল অপরাধ নির্মুলে ও সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমাদের পরিবার,সমাজ,জাতি সর্বোপরি আপনাদের এই মেহেন্দিগঞ্জকে সুন্দর নিরাপদ বসবাসের আশ্রয়স্হল হিসাবে গড়ে তুলি এমন প্রতিজ্ঞা করি।

সুত্র:-ইয়াসিনুল হক(অফিসার ইনচার্জ) মেহেন্দিগঞ্জ,বরিশাল।

আরও খবর

Sponsered content