সম্পাদকীয়

আসলে পর কখনো আপন হয় না!!!

  প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২২ , ১২:৪১:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।কাতার প্রবাসী সুমি। দেশে রেখে যাওয়া অসুস্থ বাচ্চার অপারেশন করাতে বৃহস্পতিবার সকাল ঢাকায় পৌঁছান।এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে পার্কিং এরিয়ায় ঢুকতেই..

– আরে বোন কই যাবা?বরিশাল।আরে কও কি বোন! আমার বাড়িও শরিয়ত পুর! আমিও ঐ দিক যামু
– এয়ারপোর্টে কেনো আসছেন?
– একমাত্র বোনকে এট্টু আগে মালয়েশিয়া পাঠাইয়া দিলাম। জানটা ছিঁড়া যাইতাছে বোন!!!

বরিশালের কাছাকাছি এলাকার অপরিচিত আনোয়ারকে পেয়ে সুমির মনে জোর পেলেন। একসাথে বাসে উঠে গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে ভাই-বোন অনেক সুখ-দুঃখের গল্পও করলেন। স্বামীর সাথে ডিভোর্স, একমাত্র বাচ্চার মায়া ছেড়ে বাচ্চার ভবিষ্যত গড়তেই বিদেশ গমন, আরও কতকি!

ফার্মগেটে বাস পরিবর্তন। সুমির ক্ষুধা পেয়েছে। কথিত ভাই আনোয়ার চট করে পাউরুটি আর পানি কিনে নিয়ে আসলেন।সুমি টাকা দিতে চাইলে আনোয়ার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “তুমি সত্যই আমার বোন হলে আজ এমন করে টাকা দিতে চাইতে না। আসলে পর কখনো আপন হয় না!!!

বাস গাবতলীর পথে।সুমি পাউরুটি খেয়ে বোতলের মুখে পানি খেতে গিয়ে একটু পানি মুখ বেয়ে পড়ছিলো। ভাই আনোয়ার নিজের রুমাল বের করে সযত্নে পানি মুছে দিলেন।

সুমির বুঝতে পারছে, রুমালের ছোঁয়ায় তার সেন্স কমে আসছে, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। ভাই সাহেব সুমির ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে সবগুলো টাকা পকেটে ঢুকাচ্ছেন।সঙমি চেয়ে চেয়ে দেখছেন, কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না। রুমালের জাদুতে হ্যাং হয়ে স্ট্যাচু বনে গেছেন।

আনোয়ার টাকা মোবাইলসহ দামী জিনিষপত্র নিয়ে ভাইয়ের আদরে সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে নেমে পড়লেন। মিনিট পাঁচেক পর সুমিরর হাত-মুখ সচল হলেও কান্না ছাড়া কোনও গতি নেই।

বাচ্চার হার্নিয়ার অপারেশন করতে আনা সবগুলো টাকা উধাও। বাস ভাড়া দেয়ার টাকাও নেই। পাশের এক ভদ্রলোক এক’শ টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন।

সুমি ঘুরে দাঁড়ালেন। বাস থেকে নেমে ভ্যানিটি ব্যাগ ঘেটে ঢাকায় সোনিয়ার বাসার ঠিকানা লেখা কাগজটা বের করলেন। সোনিয়ার তার সাথে কাতার কাজ করে। সাত আট দিন আগে দেশে আসছে।

সোনিয়া বাসা থেকে সুমি পরপর তিনদিন এয়ারপোর্ট এলাকায় চিরুনি অভিযানে আসেন।আজ চতুর্থ দিন তিনি সফল,ভাই আনোয়ার তার চোখ এড়াতে পারেননি।

ঠিক একই জায়গায় আজ আনোয়ার আরেক বিদেশ ফেরত পুরুষ যাত্রিকে বলছিলেন, “একটু আগে ছোট ভাইটারে বিদেশ পাঠাইলাম :(জান’টা

‘জান’টা ছিঁড়ার’ আগেই বাঘিনীর মত ক্ষীপ্ত বেগে সুমি তার কলার ধরে উত্তম মধ্যম দেয়া শুরু করেন। অতঃপর থানার উপ-পরিদর্শক আসলাম পারভেজ এসে হাজির হয়।

আরও খবর

Sponsered content