প্রতিনিধি ৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ২:১২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
পটিয়া(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি।।বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির পর আমি গেটে তালা দিয়ে দিই।তাঁরা গেট ভাঙতেও চেয়েছিলেন।কিন্তু আমি বলে দিয়েছি, আমাকে দিয়ে কোনো অবৈধ কাজ হবে না।এরপর বিভিন্ন বুথে ঢুকে তাঁরা শতাধিক ব্যালটে ভোট দেন।আমি প্রশাসনকে জানানোর ৪৫ মিনিটের পর ফোর্স পাঠানো হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আমাকে বাঁচান।’
আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় ভোটকেন্দ্রের এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের জিরি ইউনিয়নের কৈয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রূপন বড়ুয়া।পেশায় তিনি কলেজশিক্ষক।
রূপন বড়ুয়া বলেন,বেলা দুইটার আগপর্যন্ত সুন্দরভাবেই ভোট চলছিল।হঠাৎ ১০ থেকে ১৫ ব্যক্তি এসে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।দ্রুত আমি বুথে গিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি।কিন্তু লাভ হয়নি।ওই ব্যক্তিরা আমাকে ও আমার সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।বুথে ঢুকে জাল ভোট দেওয়া শুরু করেন
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রূপন বড়ুয়া বলেন, ‘আমি কলেজের শিক্ষক, নিরীহ।আমি আমার প্রিন্সিপালকে ফোন করেও জানিয়েছি,যেকোনো সময় আমার মৃত্যু হতে পারে।’ এসব কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রে মোট বুথ ছিল ছয়টি। তিনটি নারীর ও তিনটি পুরুষের।সব কটি বুথেই ভোট দেন বলে জানান দায়িত্বরত আনসার,পোলিং কর্মকর্তা ও ঈগলের সমর্থকেরা।পুরুষের ৩ নম্বর বুথের মেঝেতে পড়ে ছিল নৌকায় ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার। নারীদের ৫ নম্বর বুথে গিয়ে ৭৫টি ব্যালট পেপার পাওয়া যায়। এসব পেপারে কোনো সই ছিল না।সব কটিতেই নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া নারীদের ৪ নম্বর বুথের ৯২টি ব্যালট পেপার, পুরুষের ৩ নম্বর বুথে ৪৭টি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়া হয়।
বেলা সাড়ে তিনটায় সরেজমিন দেখা যায়, কেন্দ্র পুরোটাই ফাঁকা। তবে কেন্দ্রের বাইরে নৌকার সমর্থকেরা ছিলেন।এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৭০। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭০০টি।
জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন ভূঞা বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ঘটনাটি জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই ফোর্স পাঠানো হয়েছে। ভোট গণনার সময় এসব বাদ দেওয়া হবে।
পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে চট্টগ্রাম-১২ আসন।ভোটার ৩ লাখ ২৯ হাজার ৪২৮ জন।এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন নয়জন। তবে শেষ পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর।পুলিশ সূত্র জানায়,১০৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।এর মধ্যে অন্তত ৪৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর সমর্থকদের ওপর অন্তত ২২ বার হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।সামশুল হক চৌধুরী এসব ঘটনায় নৌকার প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের দায়ী করেন।দুই প্রার্থীই পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছিলেন। মামলা হয় ছয়টি।