শিক্ষা

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য একে আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

  প্রতিনিধি ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৬:৪৭:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার অর্থঋণ আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন।একইসঙ্গে আদালত এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর কোতোয়ালী থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।তবে অধ্যাপক আবুল কালামের দাবি তিনি অনেক আগেই এ অর্থ পরিশোধ করেছেন।জানা যায়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।তার বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারির পর কোতোয়ালী থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র।

এর আগে, ১৯৯৯ সালের ১ মে থেকে ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি রেস্ট হাউজের ভাড়া বাবদ সরকারের পাওনাদি নিয়ে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।এরপর বিষয়টি নিয়ে আদেশ জারি করেন আদালত।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জানিয়েছেন,অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির কোয়ার্টার এবং সরকারি রেস্ট হাউজ ব্যবহার করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী,একই সাথে সরকারের এমন দুটি সুবিধা একসাথে ব্যবহার করা যায় না।ফলে প্রায়ই তার কাছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত থেকে অর্থ পরিশোধের জন্য চিঠি আসতো।

তবে বিষয়টিকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।তিনি বলেন, যে অর্থঋণের কথা বলা হচ্ছে,সেটা অনেক আগেই পরিশোধ করা হয়েছে।এ বিষয়ে আমি মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালে না-দাবি পত্রও সংগ্রহ করেছি।পুরোনো মীমাংসিত একটা বিষয় এখন নতুন করে সামনে এনে একটি চক্র আমাকে হয়রানি করছে।বিষয়টি নিয়ে আমি নিজেও উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন,আমি এখনো সরকারি চাকরি করছি।সরকার আমাকে মাসে মাসে বেতন দিচ্ছেন।আমি যদি এ ঋণের টাকা নাও পরিশোধ করতাম,সরকার তো চাইলে বেতন থেকে সে ঋণের টাকা রেখে দিতে পারেন।এর জন্য তো গ্রেপ্তার করার কিছু নেই।বিরোধী একটি পক্ষ নিজেদের সুবিধা হাসিলের জন্য এসব চক্রান্ত করছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে জানান,তিনি যোাগদান করেছেন বেশিদিন হয়নি।এরমধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

আর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম জানান,এ ধরনের ঘটনা তার জানা নেই।তবে তিনি ঘটনাটি জেনে নিবেন বলে জানান।

কোতোয়ালী থানার ওসিও বিষয়টি জানেন না।তিনি থানার ওয়ারেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।তবে থানার ওয়ারেন্ট অফিসারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি এ প্রতিবেদকের।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ বলেন,ঘটনাটি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই।এ ঘটনাটি বলা হচ্ছে,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিয়ই আরও খতিয়ে দেখবেন।আমরা বিষয়টি নজরে রাখছি। তবে এটুকু বলবো,শিক্ষকরা সন্মানিত ব্যক্তি।আমাদের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কাম্য নয়।

এদিকে গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্টের কপিটি  হাতে রয়েছে।কপি সূত্রে জানা গেছে,গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্টটি কতোয়ালী থানা পাঠানো হয়।সেখানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালামকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮৫ টাকা ঋণী উল্লেখ করে গ্রেপ্তার করার আদেশ দেয়া হয়। রে গত ১৬ জানুয়ারি তাঁর বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট জারি করেন।

প্রসঙ্গত,এর আগে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৯৭ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ জমা পড়ে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি)।পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি।

এর মধ্যে মাদ্রাসা পরিদর্শন,অধিভুক্তি,প্রাথমিক পাঠদান, নবায়ন,তদন্ত,নিয়োগ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে তার অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য রয়েছে।এছাড়াও মাত্র ৩২০ দিনে ৪০০ এর বেশি মাদ্রাসা পরিদর্শন, বিধিবহির্ভূতভাবে গাড়ির জ্বালানি ব্যবহার,রোহিঙ্গাদের অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণসহ নানা অভিযোগ।

আরও খবর

Sponsered content