প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০২২ , ২:০৩:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।আমার বিয়ে করা নতুন বউয়ের চেহারা দেখেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। এমন অসম্ভব সুন্দরী বউকে দেখার ভয় পাবার কারন তার চেহারা না। বরং আমার জীবনে ঘটে যাও রহস্যময় আর ভয়ানক গোপন সত্য আর একটা প্রশ্ন। মনে মনে স্থির করলাম রেনুকে ডেকে প্রশ্ন টা করবো।
আমিঃ- রেনু ও রেনু। একটু কি এদিকে আসবে?
রেনুঃ- (লাজুক পায়ে ঘুমটা টেনে আমার কাছে আসলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো।..) আমাকে কি ডেকেছেন?
আমিঃ – ইয়ে মানে হ্যা, একটা কথা জিজ্ঞেস
করতে চাইছিলাম।
রেনু- কি কথা?
আমিঃ- তার আগে একটা গল্প শুনতে হবে তোমাকে।
(রেনু চোখ পিট পিট করে আগ্রহ নিয়ে তাকালো)
তারপর বলতে শুরু করলাম আমার জীবনের গোপন কথা- আমি যখন HSC তে পড়ি তখন আমার বাবা মারা যান। তুমি তো জানোই আমার পরিবারে আমার মা আর বোন ছাড়া কেউ নেই। বড় ছেলে হিসেবে সংসারের সকল দায়িত্ব তখন আমার কাধে। টিউশনি খুজতে লাগলাম। ভাগ্য ক্রমে একটা টিউশনি পেয়েও গেলাম। আমাকে মাসে ২০০০ টাকা দিতো। ১৫০০ টাকা মাকে পাঠিয়ে দিতাম।আর ৫০০ টাকা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনরকমে দিন কাটাতাম। তখন অবস্থা এমন ছিলো যে,আমি মাাসে মাসে টাকা না পাঠালে আমার মা বোন উপোস থাকবে।আর সারাদিন রাস্তায় বসে মানুষের বই বাধাই করে দিয়ে সামান্য কিছু বাড়তি আয় করতাম। দিন শেষে খুব অল্প সময় ই পেতাম পড়াশোনার জন্য।( অনুমতি ছাড়া এই লেখা কপি করা বা নকল করা বা ভিডিও তৈরি করা নিষেধ।)
হঠাৎ একদিন বোন অসুস্থ হয়ে গেলো। মা খবর পাঠালো, বোনের অবস্থা খারাপ। ডাক্তার দেখাতে হবে। আমি সেদিন টিউশনি থেকে মাস সম্পূর্ণ হবার আগেই টাকাটা চেয়ে নেই। দশ তারিখ ছিলো সেদিন।সন্ধা হয়ে গিয়েছিলো। তো সবসময় যে ডাকঘর থেকে টাকা পাঠাই সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তখন এক বৃদ্ধ লোক আমাকে বললো শহরের অন্য পাশে একটা নির্জন এলাকা আছে। ঐখানে ডাকঘর রাত অবধি খোলা থাকে।
কিছুটা ভয় নিয়ে ঐ পথেই রওনা দিলাম।
রাস্তায় কোন রিক্সা, ভ্যান কিছুই ছিলো না। গা ছম ছম করা প্রকৃতি। এই পথ নিয়ে মাঝে মাঝে নানান রকম ভয়ানক গল্প শোনা যায়।
হাটতে হাটতে একটা কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।রাস্তায় আমি ছাড়া আর কেউ নেই। চারদিকে ফিনকি ফোটা জোৎস্ন্যা আলোয় সবখানে কেমন যেন আলোছায়ার খেলা চলছিলো।তখন হঠাৎ দেখি একজন মহিলা কবস্থানের ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছেন।সন্ধ্যা এর পর এখানে কোন মহিলা একা থাকার কথা না। মনে কু ঢেকে ওঠলো।
মহিলার পড়নে ছিলো কালো একটা শাড়ি। মহিলার হাত পা গুলো একদম ধবধবে সাদা।খেয়াল করলাম,তিনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।।এই তাকানোতে কোন প্রাণ ছিলো না। বরং সেখানে ভয়ানক কিছু খেলা করছিলো। অসম্ভব সুন্দর মহিলা কিন্তু আমার কাছে তখন সুন্দরের চাইতে ভয় বেশি লাগছিলো। তার পাশ কাটিয়ে চুপচাপ চলে যেতে চাইছিলাম।কারন ততক্ষনে আমার অবচেতন মনে বুঝতে পেরেছিলাম আমি ভীষণ বিপদের মধ্যে আছি।তখন ই একটা বরফ শীতল হাত আমার কাধ স্পর্শ করলো।আমার পা স্থির হয়ে গেলো। গায়ের লোম সব দাড়িয়ে পড়লো। এবার মনের ভেতরের গোপন ভয়টা ডানা ঝাপটে মুখ দিয়ে বিকট চিৎকার আকারে বের হয়ে আসলো।
মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখি তার সুন্দর মুখ থেকে মাংস গলে গলে পড়ছে। তখন ই আমার গলা টা শক্ত করে চেপে ধরলো সে। সেই হাত থেকেও মাংস গলে গলে পড়ছে। হাতে একটা সোনার বালা হাড্ডি আর মাংসতে ঝুলে আছে। হিংস্র গলায় মেয়েটা বললো… সব পুরুষ লোভী। আমি সব পুরুষদের খুন করবো।
যখন বুঝতে পারলাম মৃত্যু ঠিক সন্নিকটে তখন চোখের সামনে মা আর বোনের ছবি ভেসে ওঠলো।নিজের জন্য না, বরং পরিবারের জন্য চোখ ফেটে কান্না আসছিলো আমার। আমি কোন ভাবে মিনতি করে সেই অর্ধমৃত মহিলাটা কে বললাম… আমাকে ছেড়ে দিন দয়া করে। আমার বাড়ীতে মা না খেয়ে আছে, বোন টা অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছে। আজকের মাঝে টাকা পাঠাতে না পারলে হয়তো মারা যাবে আমার বোন। দয়া করে তাদের জন্য হলেও আমাকে ছেড়ে দিন।
এ কথা বলার পর হঠাৎ সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। যখন জ্ঞান ফিরলো, নিজেকে আবিষ্কার করলাম এক মসজিদের গেটের সামনে পড়ে আছি। আর হুজুর আমার মাথায় পানি ঢালছেন।
হুজুর প্রশ্নবোধক চোখে তাকাতেই, আমি তাকে সব খোলে বলি। তারপর হুজুর বললেন, বড় বাচা বেঁচে গেছো। এই পথে এর আগে অনেকের লাশ পাওয়া গেছে। তুমিই প্রথম ব্যক্তি,যে কিনা জীবত অবস্থায় মসজিদের পাশে বেহুশ ছিলা।
কথা ফাঁকে আমার বোনের কথা মনে পড়লো। পকেটে হাত দিলাম। দেখি পুরো টাকাটা আছে।
এরপর তরিগরি করে আমি গ্রামে চলে গেলাম। কারন আমি জানি না আমার বোনটা কেমন আছে। গ্রামে গিয়ে জানতে পারলাম আমার বোনের চিকিৎসা হয়ে গেছে। টাকা কোথায় পেলো মাকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, ওমা রাতেই তো তোর এক বন্ধু এসে দিয়ে গেলো। কিন্তু তোর এই বন্ধু টাকে আমি আগে কখনো দেখি নি। কত করে বললাম একটু বসে যেতে, সে ভেতরেই আসলো না।
আমি মায়ের কথা শুনে খুব অবাক হলাম কিন্তু মা এর সামনে তা প্রকাশ করলাম না।
মনে মনে সেই অজানা বুন্ধুটিকে খুঁজছি, যে আমার বোনের প্রাণ বাচিয়েছে নিঃস্বার্থ ভাবে।
আমার যতটুক মনে পড়ে এমন কোন বন্ধু আমার নেই। আর থাকলেও কেউ তো জানার কথা না আমার বাসায় বোন অসুস্থ আর এখনি টাকা দরকার।
আমি আবার মেসে চলে আসলাম। আমার নিয়মিত জীবন চলতে থাকলো।আস্তে আস্তে আমি ঘটনাটা ভুলে যেতে থাকলাম। এই ঘটনার ঠিক একমাস পর, মানে পরের মাসের দশ তারিখে খেয়াল করলাম আমার টেবিলের ড্রায়ারে তিন হাজার টাকা রাখা। বেশ অবাক হলাম। এত টাকা কে রাখলো? আমার রুম মেটদের জিজ্ঞেস করলাম। তারা জানালো টাকাটা তাদের কারোর ই না।
আমি টাকার মালিক খোজে না পেয়ে টাকাটা নিজের কাছে রেখে দিলাম। কিন্তু খরচ করলাম না।
পরের মাসের দশ তারিখে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। আবার আমার ড্রয়ারে তিন হাজার টাকা রাখা। এবারো মালিক খুঁজলাম। কিন্তু ফলাফল আগের মতই।
আমার পরীক্ষার ফিস বাবদ চার হাজার টাকা লাগে। আমি অনেক চেষ্টা করেও টাকাটা যোগাড় করতে না পেরে শেষ মেষ ড্রয়ারের সেই টাকাগুলো ই ব্যবহার করলাম।
পরের মাসে দশ তারিখে আবার তিন হাজার টাকা ড্রয়ারে দেখলাম। এবার বুঝতে পারলাম। কেউ ইচ্ছে করেই টাকা গুলো আমার জন্য রেখে যাচ্ছে। কে সে জানি না। তবে এটা বুঝতে পারছি সে আমাকে সাহায্য করতে চাইছে।(জেবুন রুমি)
ঐ মাসে আমার টিউশনিটা চলে গেলো। আমি নিরূপায় হয়ে ড্রয়ারের টাকা থেকে মাকে টাকা পাঠালাম। আর কিছুটা দিয়ে আমার খরচ চালালাম। পরের মাসে ভাবলাম.. নাহ এবার দেখতেই হবে কে আমাকে এভাবে সাহায্য করে।
দশ তারিখ হতেই আমি ঘরের কোনে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রইলাম। সকাল থেকে কোন ঘটনাই ঘটলো না। কেউ আমার রুমেও আসে নি। এক ঘন্টা দু ঘন্টা এমন করে অনেক সময় চলে গেলো।প্রতিদিন দুপুরের দিকে পুরো মেস নিরব হয়ে যায়। আজ ও তেমন হলো। তখনই ঘটলো আসল ঘটনা।
আমার মেসের জানালাটা খোলে গেলো আপনাআপনি। জানালার ঐ পাশে ছিলো একটা কদম গাছ। গাছের নিছে ছোট ছোট গাছের জংলা। ঐ দিক থেকে একটা হাত আমার জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ড্রয়ার খোললো। আমি চোখের সামনে এমন কিছু দেখবো কল্পনাও করিনি। এটা কোন মানুষের হাত না।
মানুষের হাত এত লম্বা হয় না।ভয়ে দম বন্ধ হবার অবস্থা। থর থর করে কাপছি। আর নির্বাক ভাবে তাকিয়ে রইলাম। সেই হাতে একটা বালা পড়া ছিলো। কেন জানি বালা টা বেশ পরিচিত লাগছিলো।তারপর ই মনে পড়লো বালা টা সেই অশরীরীর হাতে ছিলো, যে আমার গলা চেপে ধরেছিলো। হাতটা ড্রয়ার খোলে তাতে কিছু একটা রেখে আবার ড্রয়ার বন্ধ করে ফিরে গেল জানালা দিয়ে।….. চলবে…