প্রতিনিধি ১৪ মে ২০২৩ , ২:১৯:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
সেন্ট মার্টিন(কক্সবাজার) প্রতিনিধি।।বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আজ রোববার বেলা দুইটা থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব চলছে।বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের মাঝরপাড়া,কোনারপাড়া,গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া,পশ্চিমপাড়া,উত্তরপাড়ার অন্তত ৩৪০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। কয়েক শ গাছপালা ভেঙে পড়েছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে উত্তরপাড়া,পশ্চিমপাড়া ও পূর্ব দিকের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।তিনটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৩৭টির বেশি হোটেল রিসোর্ট ও কটেজে অবস্থান করছেন স্থানীয় প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বেশির ভাগই শিশু ও নারী।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আজ বিকেলে বলেন,আজ সকাল থেকে দ্বীপের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক ছিল।বেলা দেড়টার পর থেকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করতে শুরু করে।বেলা দুইটার পর প্রবল গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়।বিকেল চারটা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।এতে লোকজনের ঘরবাড়ি,গাছপালা ভেঙে পড়ছে।গাছ পড়ে আহত হয়েছেন ১০-১৫ জন।এর মধ্যে একজন নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষের প্রধান সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ আজ বিকেল পৌনে চারটার দিকে বলেন,সেন্ট মার্টিনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলছে।ঝোড়ো হাওয়ায় সেখানকার ৩০০-৪০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বেশ কিছু গাছপালা ভেঙেছে।গাছচাপায় এক নারীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।তিনি আরও বলেন,টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং এলাকাতে কিছু গাছপালা ভেঙেছে।সেখানে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।এ ছাড়া জেলার অন্য কোথাও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেন্ট মার্টিন বাজারের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ (৪৮) বলেন,পরিস্থিতি ভয়াবহ।ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দ্বীপের লোকজনের ঘরবাড়ি,গাছপালা ভেঙে যাচ্ছে।তখন পর্যন্ত তিন শতাধিক বাড়ি ভেঙে গেছে।গাছপালা ভেঙেছে শতাধিক।২০-২৫টি নারকেলগাছ উপড়ে পড়েছে।আতঙ্কে লোকজন ছোটাছুটি করছেন।আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা অবস্থান করছেন,তাঁরা ভয়ে কান্নাকাটি করছেন।
নুর মোহাম্মদ আরও বলেন,বেলা তিনটার দিকে কোনারপাড়ার ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সময় বড় একটি গাছ তাঁর মাথায় ভেঙে পড়ে।এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।স্থানীয় লোকজন ওই নারীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে নিয়ে যান।সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, ওই নারীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম বলেন,সেন্ট মার্টিনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব চলছে।ঘরবাড়ি গাছপালা ভাঙছে। গাছচাপায় এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন,তবে তাঁর নাম জানা যায়নি।দ্বীপের প্রায় সব লোকজনকে আগেভাগে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। দ্বীপের লোকসংখ্যা ১০ হাজার ৭০০।এর মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষ আগেভাগে টেকনাফ চলে গেছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ খান বলেন,গত বছরে ২৫ অক্টোবর আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিপুল নারকেলগাছ উপড়ে পড়েছিল।আজ বেলা দুইটা থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখা তীব্র গতিতে আঘাত হানছে।সাগরে জোয়ারের পানিও বাড়ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের সৈকতে আঘাত হানছে।তাতে পূর্ব,উত্তর ও পশ্চিম সৈকতের ২০-২৫টি হোটেল–রিসোর্টসহ লোকজনের কিছু ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। রাতের প্লাবনে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে।জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর মতো টেকসই বেড়িবাঁধ সেন্ট মার্টিনে নেই।