বিনোদন

প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’

  প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১২:২৪:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ‘ভালোবাসা প্রীতিলতা’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’।প্রদীপ ঘোষ পরিচালিত সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’।গতিশীল বিপ্লবের রেশ নিয়ে ধীরলয়ের একটি ছবি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’।বড় ক্যানভাসে বোমার ব্যবহার,ট্রেনের বগিতে বোমা,বন্দুকযুদ্ধ; এসবের এক আয়োজনহীন ছবি‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। শেষমেশ না নাটক,না বায়োপিক কিংবা না ডকুমেন্টারি’ময় এক ছবি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’!

অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষের বুকে শিহরণ তোলা, অগ্নিযুগের বীরকন্যা কিংবা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দেয়া প্রেরণাময় এক নারীর নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।এসএসসি এবং এইচএসসি (ম্যাট্রিক এবং ইন্টারমিডিয়েট)পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করে ইডেন কলেজের পর চট্টগ্রামের মেয়ে প্রীতিলতা ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার বেথুন কলেজে।ডিগ্রিতে দর্শন শাস্ত্রেও ভালো রেজাল্ট করেছিলেন।কলকাতা আলীপুর জেলে বিপ্লবী রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে যেয়ে ক্রমশ জড়িয়ে পড়েন বিপ্লবীদের সাথে।এর আগে লীলানাগের নেতৃত্বাধীন দীপালি সংঘের সাথে জড়িত ছিলেন।বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা,বিপ্লবীদের কাছে খুব গোপনে বোমা বানানোর খোল পৌঁছে দেয়া,জেলে রামকৃষ্ণের সাথে যোগাযোগের এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ডাক দেয়া মাস্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় প্রীতিলতার।

ধলপুর এবং জালালাবাদ আক্রমণের সাফল্যগাঁথার ওপর ভর করে ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে প্রীতিলতার নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি,যার চট্টগ্রাম শাখার প্রধান ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন। যে ইউরোপিয়ান ক্লাবের ফটকে লেখা থাকতো ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’,সেখানে আক্রমণের এক পর্যায়ে প্রীতিলতা বুকে গুলিবিদ্ধ হলে ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আগে সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

এই উপমহাদেশের অগণিত মানুষ বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মত্যাগের গল্প জানেন।বীরকন্যা প্রীতিলতা ছবিতে প্রীতির সাথে বিপ্লবী রামকৃষ্ণের দেখা করা যেমন আছে বিপ্লবী সাধনা কিংবা প্রশিক্ষণের ব্যাপারটা তেমন নেই।মাত্র দুজন ব্রিটিশ পুলিশ দিয়ে আক্রমণ কিংবা রেললাইনে বিশ্রাম নেয়ার সময় রামকৃষ্ণ ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করাটা এসময়ের ছবি হিসেবে মানানসই না।প্রীতিলতার বাড়ি ফেরার ট্রেন আর রামকৃষ্ণের বোমা মারার ট্রেন যেমন এক না,তেমনি রেললাইন যা দেখানো হয়েছে তা এ সময়ের।নেই বিপ্লবের সময়কার সেই স্ফুলিঙ্গ। বিপ্লব যতটা গতিশীল,এই ছবি ততটাই ধীরলয়ের। জেলে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলা,প্রহরীদের সামনে আক্রমণের কাহিনি বলাটা যেমন সংগতিপূর্ণ নয়,তেমনি বিপ্লবের চেয়ে প্রেম বা ভালোলাগা তৈরির উপাদানই বেশি ছিল ছবিতে।ছিল রোমান্টিক গানও।তবুও এমন ছবি করার প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানাই পরিচালক প্রদীপ ঘোষ ও তার টিমকে।

ছবিতে প্রীতিলতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা।ছবিতে বিপ্লবী রামকৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক এবং মাস্টারদা সূর্যসেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামরুজ্জামান তাপু।তিশা ও মনোজ নিজ নিজ ভূমিকায় উজ্জ্বল ছিলেন।বিপ্লবীরা যে প্রশিক্ষণ নিতেন তাতে শারীরিকভাবে দুর্বল হবার কোনও কারণ নেই।মাসুদ রানার মতো না হোক,বিপ্লব আর ছোট খাট যুদ্ধে বিপ্লবীদের গতিশীল বলেই জানি!

প্রশিক্ষণের দৃশ্যগুলোও দুর্বল।ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন ইন্দ্রানী ঘটক,অমিত রঞ্জন,পাশা মোস্তফা কামালসহ আরও অনেকে।

এই ছবির সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার।ছবির পাঁচটি গানের ভেতর একটি রবীন্দ্রনাথের ও দুটো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ব্যবহৃত হয়েছে (সে কেন দেখা দিল রে এবং জননী আমার বঙ্গ আমার)।ছবিটির ভালো দিক হলো গান ও নেপথ্য সংগীত।বাপ্পা মজুমদারকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে। বাপ্পার মতো কণা এবং এলিটাও ভালো গেয়েছেন।

‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ মুক্তি পেয়েছে ২০২৩ এর ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সসহ মাত্র পাঁচটি হলে।ছবির শুটিং হয়েছিল ঢাকার আরমানিটোলা স্কুল,পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায়।

শত শত প্রচলিত সিনেমা কিংবা ফর্মুলা ফিল্মের ভিড়ে প্রীতিলতার মতো ছবি হওয়াটা আকাঙ্ক্ষিত,যদিও ঐতিহাসিক ছবির আয়োজন ও নির্মাণে প্রচুর টাকা খরচ হয়।প্রযুক্তির এই যুগে কোনও কিছুই আড়াল করা সম্ভব না!ভারতে প্রীতিলতাকে নিয়ে কয়েকটা ছবি তৈরি হয়েছিল।‘খেলান হুম জি জান সে’ তেমন একটা ছবি।

জয় হোক বাংলা ছবির।

আরও খবর

Sponsered content