প্রতিনিধি ১ জানুয়ারি ২০২৩ , ৫:২২:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।শুভ নববর্ষ, পাঠক-পাঠিকা!আপনি এই লেখা পড়ছেন নতুন সূর্যকিরণ মাথায় নিয়ে। পুরোনো বছরের আবর্তন শেষ হয়েছে। পেছনে পড়ে আছে পুরোনো হতাশা, বেদনা,অপূর্ণতা।পড়ে থাক।আজ এক নতুনের দিকে আপনার যাত্রা শুরু।নতুন প্রত্যাশা নতুন প্রত্যয়,জীবনের নতুন অধ্যায় রচনা করার পালা।পেছনে হয়নি,তাই বলে কি সামনে হবে না? সামনে যে হবে,এই অনুভব আর আশাতেই তো নতুন বছরের সৌন্দর্য।
বছরের প্রথম দিনের সূর্যে তারই যেন চাপা আভাস।তাই এই সূর্যকিরণ নবীন। দিন আসে,দিন যায়।একই সূর্য ভোরে উদিত হয়ে সন্ধ্যায় অস্ত যায়।কিন্তু বছরের প্রথম দিনের সূর্যের মধ্যেই যেন থাকে নতুন করে যাত্রা শুরু করার আহ্বান।এই নবীন সূর্য তার কাঁচা দুধের মতো কিরণে স্নান করিয়ে আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশাভরা ভবিষ্যতে।
নানা দুঃখ-বেদনা ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আমরা কোভিডের এক কঠিন ও দীর্ঘ সময় পার করে এসেছি। অর্থনীতির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক বিঘ্ন তৈরি করেছে।সামনেও তার অনিশ্চিত কালো মেঘ।কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছেন, ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব রে।’সেই দারুণ কঠিন মারের সাগর পাড়ি দিয়ে আমরা নতুন বছরের সৈকতে এসে ভিড়েছি।তাই বাস্তবের মার আমাদের নিয়তি নয়, আমাদের অতীত।
পেছনে আপনি যা করে এসেছেন,সেটা আপনার জীবনের নিয়তি নির্ধারণ করে দিতে পারে না;এ বছর আপনি কোত্থেকে শুরু করবেন,শুধু সেটুকুই স্থির করে দিতে পারে। তাই একটু গভীর নিশ্বাস নিন,নতুন করে স্বপ্নটা সামনে রাখুন,এবার এগিয়ে যান।নতুন বছর নিশ্চয়ই আপনার হবে।
শুধু আপনি-আমিই নই,যুগে যুগে সবাই নতুন বছর সামনে রেখে তাদের নতুন লক্ষ্য স্থির করেছে,সে লক্ষ্যে নবীন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য নববর্ষকে উদ্যাপন করেছে। ব্যক্তি,সমাজ,রাষ্ট্র।প্রাচীন ব্যাবিলন নগরে চার হাজার বছর আগেও মানুষ এই উদ্দেশ্যে নববর্ষ উদ্যাপন করেছে।এক বছরের চক্রাবর্তে পারিনি তো কী হয়েছে,নতুন বর্ষচক্রে সেটা নিশ্চয়ই অর্জন করব।
জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন যে রোমান নববর্ষ আমরা পালন করি,তার মূলে আছেন রোমান সম্রাট নুমা পম্পিলিউস।আগে বছরে মাস ছিল দশটা,বছর শুরু হতো মার্চে।তিনি দুটো মাস যুক্ত করে জানুয়ারি থেকে বছরের সূচনা স্থির করেন। জানুয়ারি মাসের নাম দেওয়া হয়েছিল রোমান দেবতা জানুসের নামে।তিনি দেবতা ছিলেন নবসূচনার।তার দুই মুখের একটি ছিল অতীতের দিকে ফেরানো,আরেকটি ভবিষ্যতের দিকে। অতীতের পর্যালোচনা আর প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রার তিনি ছিলেন প্রতীক।
এরপর শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে গেছে।যুগ পাল্টেছে, সভ্যতার স্তর বদলেছে,কিন্তু তার মূল চেতনা পাল্টায়নি।
বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে আমাদের বহু কিছু অর্জন করা বাকি আছে।কিন্তু যা কিছু আমরা অর্জন করেছি,তা অভাবনীয়।সেটা স্বীকার না করলে এ দেশের সাধারণ মানুষকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না।বিভিন্ন সামাজিক সূচকে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য,শিক্ষা ও অর্থনৈতিক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ,কৃষকদের অসামান্য অবদান,প্রবাসী শ্রমিকদের ঘাম-ঝরানো উপার্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে এক বিস্ময়কর উদাহরণ হিসেবে হাজির করেছে।বিগত কয়েক বছরের নানা বন্ধুর পরিস্থিতিতেও এসব সাফল্য থমকে যায়নি। এই অজেয় আত্মা বাংলাদেশের।এই অজেয় চেতনা সঙ্গে নিয়েই আমরা নতুন বছরে প্রবেশ করেছি।
আপনাদের সামনের পথ সার্থকতায় ভরে উঠুক।