সারাদেশ

এখন খাবার খরচ বেড়ে ৬০ টাকা হলেও ব্রয়লার মুরগির মাংস দেওয়া হচ্ছে মাসে একবার!

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:১৫:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর প্রতিনিধি।।রংপুর কারমাইকেল কলেজে স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করেন শারমিন আক্তার।থাকেন কলেজের পাশের একটি ছাত্রীনিবাসে (মেসে)।মেসে ওঠার সময়ে খাবার খরচ (মিল চার্জ) ছিল ২৫ টাকা।এ টাকায় সপ্তাহে দুই দিন দেওয়া হতো মাছ-মাংস। এখন খরচ বেড়ে ৬০ টাকা হলেও ব্রয়লার মুরগির মাংস দেওয়া হচ্ছে মাসে একবার।আর মাছের তালিকায় থাকে ছোট আকারের তেলাপিয়া ও সিলভার কার্প।

বুধবার বিকেলে রংপুর নগরের খামার মোড়ে কথা হয় শারমিনের সঙ্গে।বাজার নিয়ে তিনি মেসে ঢুকছিলেন।শারমিন বলেন,আলু,শিম,পেঁপে ও বেগুন কিনেছি।প্রতি মাসে এক দিন মেসের বাজার করতে হয় আমাকে।কিন্তু বাজারে ঢুকলে খাদ্যদ্রব্যের দাম শুনে মাথা বিগড়ে যায়।আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে মিল চার্জ নিয়ে সবজিসহ মাছ-মাংস কিনে প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিন খাওয়া যেত।এখন জনপ্রতি দিনে ৬০ টাকা দিলেও চাল,সবজি,তেল,লবণ,মরিচ কিনতেই টাকা শেষ।তবুও মাসে একবার অল্প পরিমাণে মাছ–মাংস কেনার চেষ্টা করি।বলা চলে দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর অবস্থা।’

রংপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফিরোজ হোসেন বলে,এখন মেসে ৬০ টাকা করে মিল চার্জ দিয়ে মাছ-মাংস খাওয়ার কথা চিন্তায় করা যায় না।প্রতি বেলার খাবারে খুব অল্প পরিমাণে সবজি দেওয়া হয়।সব জিনিসের দাম তিন-চার গুণ করে বেড়ে যাওয়ায় কোথাও শান্তি পাচ্ছি না। লেখাপড়া করতে কষ্ট হচ্ছে।’

শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর নগরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,কারমাইকেল কলেজ,রংপুর সরকারি কলেজ,বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজসহ নগরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাজারো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছেন।তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকেন মেসে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বর্তমানে মেসে তাঁদের জীবনযাপন অনেকটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।খরচ বাড়লেও খাবারের মান বাড়ছে না।

নগরের পার্কের মোড়ের ইউনিক ছাত্রাবাসের সেলিম সরকার বলেন,সকালে খাবারে পাতলা ডাল আর একটুখানি আলুভর্তা থাকে।দুপুরে সবজি–ভাত।রাতে অল্প সবজি ও কোনো দিন ডিমের অর্ধেক দেওয়া হয়।চালের দাম বাড়ায় ভাতের পরিমাণও কমে গেছে।অনেকটা খিদে পেট নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।

বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দিক থেকে মেসের জীবন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

তারিনা আক্তার,শিক্ষার্থী,রংপুর কারমাইকেল কলেজ
রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী তারিনা আক্তার বলেন,তাঁর মেসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫।প্রতিদিন গড়ে সেখানে থাকেন ২০ জন।জনপ্রতি দিনে মিল চার্জ ৬০ টাকা।এতে ওঠে ১ হাজার ২০০ টাকা।এ টাকায় ১০ কেজি চাল কিনতে হয়। প্রতি কেজি চাল ৫৬ টাকা হিসাবে ৫৬০ টাকা,তেল আধা লিটার ৯৫ টাকা,সবজি কমপক্ষে দুই কেজি ৮০ টাকা, মরিচ-পেঁয়াজ,রসুন,হলুদ,আদা,ডাল লবণ,মসলা কিনতেই টাকা শেষ।ফলে মাছ-মাংস কেনার টাকা থাকে না।তিনি আরও বলেন,বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দিক থেকে মেসের জীবন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

বুধবার নগরের পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে,আলু প্রতি কেজি ২৫ টাকা,করলা ২০০,পটোল ১০০,শজনে ১২০,শিম ৫০ থেকে ৬০ ও বেগুন ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৯৫০।কেজি আকারের রুই মাছ ৩৪০ ও ব্রয়লার মুরগির কাটা মাংস ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রংপুর নগরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,কারমাইকেল কলেজ,রংপুর সরকারি কলেজ,বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজসহ নগরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাজারো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকেন মেসে।

কারমাইকেল কলেজের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,‘ভাই,আগে মেসে মাংস বলতে ব্রয়লারের মাংস থাকত।এখন সেই ব্রয়লারও মাসে একবার খাবারের তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে না।মেসে গরুর মাংস খাওয়ার চিন্তা করা মানে স্বপ্ন দেখা।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ বলেন,বাজারে সব জিনিসের দাম তুলনামূলক তিন-চার গুণ বেড়েছে।কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না। মেসে থেকে যাঁরা স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন,তাঁদের অধিকাংশই হচ্ছে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী হওয়ায় তাঁদের এখন অবস্থা খারাপ। শুধু মেসে কেন,ওই শ্রেণির মানুষ নিজের পরিবারের সদস্যদের মুখেও মাসে একবার এখন মাছ-মাংস জোগান দিতে পারছেন না।সমস্যা হচ্ছে,ঠিকমতো খাবার না খেলে মেসের শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়াশোনায় মনোবল হারিয়ে ফেলবেন।এটা বড় চিন্তার বিষয়।

আরও খবর

Sponsered content