ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

ইউটিউবারদের কোরবানির পশুর হাটে আনাগোনা বেড়েছে

  প্রতিনিধি ২৬ জুন ২০২৩ , ৪:০১:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিগত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর হাটে আনাগোনা বেড়েছে ইউটিউবারদের।বিক্রেতাদের কাছে থেকে গরুর বিবরণ জানা কিংবা গরু কিনে ফেরার পথে থামিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করে কন্টেন্ট তৈরি করেন তারা। বিষয়টি এ বছর মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ করে এতে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা।তাদের অভিযোগ,অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসব ভিডিওতে অংশ নিতে হচ্ছে তাদের।

রবিবার (২৫ জুন) রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে দেখা মেলে বেশ কয়েকজন ইউটিউবারের।হাট না জমলেও তাদের কন্টেন্ট বানানোর কার্যক্রম জমে উঠেছে।কথা বলে জানা যায়,তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টি কন্টেন্ট তৈরি করে ইউটিউবে ছেড়েছেন।কেউ আবার এ বছরই শুরু করেছেন।

ক্রেতা-বিক্রেতারা সমালোচনা করলেও বেশ কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এসব ভিডিওর ‘ভিউ’ বেশ।তেমন কোনও বিশেষত্ব না থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কোরবানির পশুর দাম জানার যে আগ্রহ, তাকে ভিত্তি করে এসব কন্টেন্ট তৈরি হয়।যদিও ক্রিয়েটররা বলছেন,অনুমতি নিয়েই এসব ভিডিও তৈরি করেন তারা। তবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনও ক্রেতার কাছ থেকে অনুমতি নিতে দেখা যায়নি।

কথা হয় ‘অনিক ভাই বিডিএক্স’ ইউটিউব চ্যানেলের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অনিকের সঙ্গে।তিনি বলেন,আমি বিভিন্ন হাটে গিয়ে ভিডিও তৈরি করি।এর অধিকাংশই কে কত দামে গরুর কিনেছেন,তা নিয়ে।এই বছরই প্রথম শুরু করেছি।’

অনলাইনে আশাতীত ভিউ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,এত বেশি ভিউ হবে আশা করিনি।ভালোই চলছে।’

ভিডিও করতে গেলে কেউ বিরক্ত হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,না,এরকম কাউকে বিরক্ত হতে দেখি নাই। সবাই স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন।কেবল দামই তো জিজ্ঞাসা করছি।’

এ বছরই ভিডিও করা শুরু করেছেন জানিয়ে ‘ডিবি রিপন অফিসিয়াল’ ইউটিউব চ্যানেলের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর রিপন বলেন,অনেক দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল ভ্লগ করবো।এ বছর শুরু করলাম’।

পশুর বৃত্তান্ত জানিয়ে ক্রিয়েট হয় এসব কন্টেন্ট
পশুর হাটের কন্টেন্ট তৈরিতে কেন আগ্রহ হলো,জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই করে।গরুর দাম জিজ্ঞাসা করে ভিডিও করলে ভিউ বেশি হয়।’

তবে এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিক্রেতাদের অনেকেই। তারা জানান,হাটে যারা গরু কেনেন,তারা ইউটিউব দেখে কেনেন না।তাই ইউটিউবারদের নানা প্রশ্নে তারা বরং বিরক্তই হন।

সিরাজগঞ্জ থেকে আসা তরুণ গরু বিক্রেতা আল মাহমুদ বলেন,মনে করেন ইউটিউবে ভিউয়ের জন্য মানুষ আইসা হই হই কইরা ভিডিও করতাছে।আবার অনেকে আইসা দাম কত,কী সামাচার নানান প্রশ্ন।এত টাকার একটা গরু সারা বছর পালছি,সেইটা বিক্রি করার চিন্তায় থাকা লাগে।এইখানে মিডিয়ার লোক আইসা একেকজন একেক রকম কথা কয়, বিরক্তি ধইরা যায়।’

আরেক গরু বিক্রেতা সোহেল বলেন,বড় লোকদের মাথায় বড় লোকরাই তেল ঢালে।যারা ইউটিউব দেখে গরু কেনেন, তারা মূলত খামারের ক্রেতা।তারা খামারে গিয়ে ৫ লাখ টাকার গরু ৬ লাখে কেনেন।আর হাটে আইসা কেউ দামই করতে চায় না।পশু নিয়ে আইসা যখন বেচবার পারি না,তখন তো এমনিই মন মেজাজ খারাপ থাকে।তার ওপর মিডিয়ার লোকেরা আইসা এ কথা ও কথা জিজ্ঞাস করে।তখন মনে করেন আরও রাগ হইয়া যাইবার লাগে।’

এসব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওতে অনেক সময় ব্যাপারীদের মোবাইল নম্বর ও পরিচয়ও প্রকাশ করা হচ্ছে।এ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভিডিও করতে চাইলে কেউ মানা করে না।আর আগেই কথা বলে নিই তার গরু সম্পর্কে,তখন তো সে বুঝতেই পারে ভিডিও করবো।’

তবে কোনও কোনও গরু বিক্রেতা তাদের গরু ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে দাম বেশি পাওয়ার আশা করেন বলেও জানান তারা।

এদিকে ক্রেতাদের কেউ কেউ এসব বিষয় নিয়ে ভাবেন না। তারা আনন্দ নিয়ে গরু কিনে বাড়ি ফেরার পথে গরুর দাম জিজ্ঞাস করলে উত্তর দেন।এ বিষয়ে হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যাওয়া ক্রেতা মিজান বলেন,এখন তো সবার হাতেই ক্যামেরা।সেইটা দিয়া কে কি করে এত কিছু তো ভাবি না। দাম জিজ্ঞাস করলে দাম বলি’।

আরও খবর

Sponsered content