ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

কেন মুরগির দাম এত বেশি বাড়বে?কেন আড়াই শো টাকা কেজি হবে!

  প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:০৭:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।সরবরাহ সংকটের কারণেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে মুরগির বাজার।গত জানুয়ারির শুরু থেকে বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছে।যা কাটিয়ে উঠতে লাগবে প্রায় দুই মাস।এমন তথ্যই জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এককেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২৪০ টাকা ছুঁয়েছে।অথচ গত মাসের শেষ দিকেও তা মিলেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়।

দাম এতটা বাড়ায় সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে গেছে মুরগি।এক ক্রেতা বলেন,দেশি ও পাকিস্তানি মুরগি তো আমাদের সামর্থ্যের বাইরে।ব্রয়লার মুরগিই যা কিনতে পারতাম। এখন সেটির দামও চড়া।

এদিকে মুরগির দামের এই বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন খোদ বিক্রেতারাও।এক বিক্রেতা বলেন,মুরগির দাম অতিরিক্ত বেশি। যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

হঠাৎ কেন এমন অসহনীয় হয়ে উঠল বাজার?সর্বোচ্চ কত টাকা হতে পারে এককেজি ব্রয়লার মুরগির দাম?

এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন,এত বাড়ার কথা না। কেন মুরগির দাম এত বেশি বাড়বে?কেন আড়াই শো টাকা কেজি হবে।আমাদের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ব্রয়লার মুরগির সর্বোচ্চ বাজার দর হওয়া উচিত ২০০ টাকা।’

ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুব হাসান বলেন,মুরগির বাচ্চার দাম কত হবে,সেটি কত টাকায় বিক্রি করা উচিত; খাবারের উৎপাদন খরচ কত,কত টাকায় বিক্রি করা উচিত; ব্রয়লার মুরগির খরচ কত হবে,কত টাকায় বিক্রি করা উচিত;এটি নিয়ে আমরা প্রতি মাসে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে প্রতিবেদন দেই।আমরা একটি থার্ড পার্টির মাধ্যমে-যেটিতে প্রফেসর, কৃষকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন,তাদের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করে থাকি।’

তাহলে নিয়ন্ত্রণহীন মুরগির এই দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করছে কে?যার জবাবে মো. সুমন হাওলাদার বলেন,চাহিদা তেমন একটা বাড়েনি।কিন্তু যে চাহিদা ছিল আমরা সেটিরই যোগান দিতে পারছি না।এর পেছনে কারণ হচ্ছে ডিম-মুরগির ন্যায্য মূল্য না পেয়ে খামারিরা খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন।’

তাহলে সত্যিই কি সরবরাহ সংকটে পড়েছে বাজার?ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের তথ্য, সাধারণত ব্রিডার ফার্মগুলো প্রতি সপ্তাহে ১ কোটি ৮০ লাখ ব্রয়লারের বাচ্চা উৎপাদন করে।যা চলে যায় খামারে।সেখান থেকে সেটি ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বাজারে চলে আসে।

কিন্তু লাগাতার লোকসানে গত দেড় বছরে বহু খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাচ্চার দাম নেমে আসে ৫ থেকে ৯ টাকায়।যা উৎপাদন খরচের চেয়ে অন্তত ৩০ টাকা কম।বড় অংকের এই লোকসান ঠেকাতে গত মাসের শুরু থেকে বাচ্চার উৎপাদন নামিয়ে আনা হয় ১ কোটি ৩০ লাখে।অর্থাৎ স্বাভাবিক চাহিদার বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে মুরগির উৎপাদন কমতে থাকে ৫০ লাখ করে।বর্তমানে বাজারে এসে এই সংকটেরই মাশুল গুণছেন ভোক্তারা।

মো. মাহবুব হাসান বলেন,এখন বাজার অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।আমরা দাম বাড়ানোর জন্য অস্বাভাবিকভাবে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে এনেছিলাম।যেন খামারি ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদকরাও ভালো দাম পায়।’

তবে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন সপ্তাহে ৩০ লাখ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন।কিন্তু কতো দিনে তার প্রভাব বাজারে পড়বে?এ বিষয়ে মাহবুব হাসান বলেন, ‘বাজারে উৎপাদন বাড়ানোর প্রভাব পড়তে ২ মাস সময় লাগবে। আমরা যদি মুরগির উৎপাদন চাহিদা অনুসারে করতে পারি তাহলে খামারিরা মুরগির দামও পাবেন।আর মুরগির বাচ্চা উৎপাদকরাও দাম পাবে।তখন ভোক্তাদেরও বেশি দামে মুরগি কিনতে হবে না।এখন দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি। পরে এমন হবে না।’

এদিকে বাজারে কঠোর তদারকি করার তাগিদ দিয়ে সুমন হাওলাদার বলেন,যদি পদক্ষেপ না নেয়া হয়,এক মাসের ব্যবধানে যদি ব্রয়লার মুরগির দাম ২৪০ টাকা হয়,তাহলে বছর ব্যবধানে আরও বাড়লে সরকারে পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে?সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দায়িত্ব নিতে হবে। আর যারা দায়িত্ব নেবেন,তাদেরকেও তদারকি করতে হবে।’

অন্যদিকে সংকটে যেন কেউ ভোক্তার পকেট কেটে বাড়তি সুবিধা নিতে না পারে তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ।তিনি বলেন,ব্রয়লার মুরগি বা ডিমের যে সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে,সেটি সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে।

বাজার স্বাভাবিক রাখতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে কন্টাক্ট ফার্মিংয়ে জোর দিচ্ছেন,তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে কি-না; তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

আরও খবর

Sponsered content