আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের ওপর দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে-যুক্তরাষ্ট্র

  প্রতিনিধি ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:৪৫:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখালেও তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের ওপর দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের।ঢাকা এখনো ওয়াশিংটনের মূল্যায়নভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে রয়ে গেছে।’

দ্য ফরেন পলিসির অনলাইন সংস্করণে এ কথাটিই বলেছেন উইলসন সেন্টারে সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। তিনি ‘ফরেন পলিসির’ সাপ্তাহিক সংক্ষিপ্ত দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক লেখায় এসব কথা বলেছেন।

তিনি লেখেন,কূটনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালীকরণ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অভিন্ন স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন এজেন্ডাকে সামনে রেখে এ সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন মার্কিন সরকারের একটি সিনিয়র প্রতিনিধিদল। এই গ্রুপে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের আইলিন লাউবেচার,পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক এজেন্সির মাইকেল শিফার।তাদের আলোচনায় ফোকাস দেওয়া হয় জলবায়ু পরিবর্তন,বাণিজ্য,রোহিঙ্গা সংকট ও শ্রম অধিকার।প্রতিনিধিরা সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এক্সিকিউটিভ,নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং বিরোধী শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

কথার সুর ও বার্তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্পষ্ট একটি পটপরিবর্তনের মধ্যে হয়েছে এই সফর। ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে শক্তিশালী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।

এর মধ্যে আছে নিষেধাজ্ঞা,ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং প্রকাশ্যে সমালোচনা।অনুষ্ঠিত ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।যা-ই হোক, ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ‘নতুন অধ্যায়’কে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।তবে তাতে অধিকার বা গণতন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

এ সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধিদের সফরের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বাংলাদেশি কর্মকর্তারা নতুন করে পথ চলা শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন এখন একটি অতীতের বিষয়’।উভয় পক্ষের মধ্যে বার্তা বিনিময় ছিল উষ্ণ ও কার্যকর।এতে প্রচুর রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করা নিয়ে।এই চিত্র গত এপ্রিলের পুরো বিপরীত।ওই সময় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন।বলেছিলেন,তারা শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন করতে চায়।

এই পরিবর্তনের কারণ কি? একটি সম্ভাব্যতা হতে পারে, ঢাকার অভিযুক্ত করা রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখতে চায় ওয়াশিংটন।বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা যতই প্রকাশ্যে মত দেন,ততই তারা এতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েন।উদাহরণ হিসেবে,গত নভেম্বরে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নির্দেশ করে সহিংস হুমকির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন দূতাবাস।

এ ক্ষেত্রে কৌশলগত ভূমিকাও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। বারবার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে চাপ দেওয়ায় তাতে চীন ও রাশিয়া উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।তারা এটাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করতে থাকে।এই চাপে হতাশ হয়ে পড়ে ভারত। ভারত হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা কার্যকরভাবে ঢাকায় সুবিধা দিয়েছে মস্কো এবং বেইজিংকে।আর নয়া দিল্লিকে দিয়েছে পীড়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগে ভূরাজনৈতিক ফ্যাক্টরগুলোও ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে যুদ্ধ তীব্র হয়েছে।কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।কিন্তু তাদের প্রত্যাবর্তন চায় বাংলাদেশ।যুক্তরাষ্ট্র এসব স্পর্শকাতর ইস্যুতে ঢাকার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়া নিশ্চিত করতে চায়।উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতায় ক্রমবর্ধমানভাবে দৃষ্টি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি।অন্য যেকোনো স্থানে কূটনৈতিক মাথাব্যথা কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের পরিবর্তন যতটা তীক্ষ্ণ বলে মনে হচ্ছে,আসলে ততটা তীক্ষ্ণ তা নয়।নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ক এরই মধ্যে গভীর হয়েছে।বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার চিঠিতে অগ্রাধিকার দিয়েছেন কিছু ক্ষেত্র। তার মধ্যে আছে বাণিজ্য,প্রতিরক্ষা,জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকারবিষয়ক ইস্যু।উপরন্তু মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের ওপর দৃষ্টি দেওয়ার বিষয়টি অব্যাহত থাকবে।

মার্কিন দূতাবাস থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে,এ সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আফরিন আখতার।এ সময় তিনি জেলে থাকা বিরোধী দলের হাজারও নেতাকর্মীর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ঢাকা এখনো ওয়াশিংটনের মূল্যায়নভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে ‘টেস্ট কেস’ হিসেবে রয়ে গেছে।তবে এ নিয়ে পরীক্ষা বর্তমানে কম কঠোরতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে।সরকারি চাপ নয়,সম্পর্কের সুর ও বার্তা জোরালোভাবে ইতিবাচক ও কার্যকর মনে হচ্ছে।শেষ পর্যন্ত এতে এটাই প্রতিফলিত হয় যে,আপাতত যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে- কৌশলগত গুরুত্ব হলো বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি মসৃণ সম্পর্ক বজায় রাখা।

আরও খবর

Sponsered content