সম্পাদকীয়

বিসিএস সিলেবাসঃ বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো?!

  প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২২ , ৪:১৩:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

একটি দেশ পরিচালনায় অর্থনৈতিক জ্ঞানের প্রয়োজনীতা বোঝার জন্য সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হল শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বাংলাদেশে যে বাছাই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশ পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাই করা হয়, যারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, সচিবালয়,এনবিআর, সিজিএ অফিসসহ বাংলাদেশের সব নীতিনির্ধারকেরা যে পরীক্ষার মাধ্যমে আসে সেই পরীক্ষার লিখিত সিলেবাসের ৯০০ নম্বরের বিশাল সিলেবাসের মধ্যে নেই অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং ইত্যাদির মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি!

অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং এর জ্ঞান এবং ক্যাপিটাল মার্কেট, মানি মার্কেট, কর ব্যবস্থাপনা, মুদ্রাস্ফীতি, ফরেইন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, রেমিট্যান্স, আমদানি রপ্তানির সাথে মুদ্রাস্ফীতির সম্পর্ক, আয় ব্যয় হিসাব, কস্ট অব ক্যাপিটাল, কস্ট অব ডেট, বাজেট ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি দেশ পরিচালনায় কোন কাজেই না লাগে তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হোক।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং মর্যাদাপূর্ণ চাকরি হল বিসিএস ক্যাডার। বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগকৃত ২৬ টি ক্যাডার অফিসারগণ দেশ পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এর মাধ্যমে তিনটি ধাপে হয়ে থাকে যার নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক। প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক (MCQ), লিখিততে ৯০০ নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার এই ১১০০ নম্বরের মধ্যে যারা এগিয়ে থাকে তারাই ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকে। প্রিলিমিনারির নম্বর চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতিতে বিবেচনায় আসে না।

বিসিএস পরীক্ষার ক্যাডার নির্ধারণকারী হল রিটেন পরীক্ষা। রিটেনের ৯০০ নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫০ (৫০%) নম্বর পেলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মোট ৬ টি বিষয়ে যথা- বাংলা ১ম ও ২য় পত্রে মোট ২০০ নম্বর, ইংরেজিতে ২০০, গণিত ও মানসিক দক্ষতা ১০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ১০০ ও সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১০০ নম্বর। এই ৯০০ নম্বরের মধ্যে অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং এর ব্যাসিক নলেজ এর চেয়ে কম প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ (ট্রান্সফরমার এর গঠন প্রনালী,ভোল্টেজ স্টাবিলাইজার ইত্যাদি) যেমন রয়েছে তেমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার কোন কোন বিষয়ে অতিরিক্ত মানবণ্টণ ও রয়েছে(যেমন- সারাংশে ২০ নম্বর, ইংরেজি প্রবন্ধে ৫০ নম্বর) তাই সিলেবাসের যৌক্তিক সংস্কার এর মাধ্যমে এসব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি।

তাছাড়া বর্তমানে ২৬ টি ক্যাডার এর মধ্যে কর, অডিট এন্ড একাউন্টস এবং কাস্টমস ক্যাডার রয়েছে সাধারণ ক্যাটাগরিতে। অথচ এই ক্যাডারে নিয়োগের পর যে কাজ করতে হয় তা সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল এবং তা বিজনেস স্টাডিজ স্টুডেন্টদের সাথে সরাসরি জড়িত। যেমন একজন মানবিক বা বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট দের পক্ষে কি চার্টার্ড একাউন্টট্যান্টদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট এর ভুল ধরা আদোও সম্ভব? আর সম্ভব না হলে ট্যাক্স ফাঁকি কিভাবে ধরবে?

তাই ট্যাক্স, অডিট আর কাস্টমস ক্যাডার কে টেকনিক্যাল ক্যাডার ঘোষনা করে (মৎস,কৃষি ক্যাডারের মত) এখানে শুধুমাত্র বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের নিলে এসব সেক্টরের দক্ষতা বহুগুনে বাড়ানো সম্ভব।

সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির প্রাথমিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক কিন্তু ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল এর জটিল কলকব্জা আর সূত্র (Please see the syllabus in attached photo ) জানা কি ব্যাসিক অর্থনীতি, মুদ্রা বাজার, অর্থবাজার, ব্যাংকি সিস্টেম, কর ব্যবস্থা ইত্যাদির চেয়ে বেশী প্রয়োজনীয়? মোটেও না। অথচ সিলেবাস এ এসব কম প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থাকলেও নেই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতির অতি প্রয়োজনীয় এসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি!

তাই বিসিএস রিটেন সিলেবাসে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অত্যবশ্যকীয় এসব বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি। আর অর্থনীতি, বানিজ্য, বিনিয়োগ, মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেট সহ এ সম্পর্কিত বিষয়গুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা শ্রীলঙ্কাসহ বর্তমান বিশ্বের চিত্র দেখে সহজেই অনুধাবন করতে পারি।

সিলেবাসে যেসব সংস্কার আনা যেতে পারেঃ

১। কর,অডিট ও কাস্টমস ক্যাডার কে টেকনিক্যাল ক্যাডার ঘোষনা করা যেতে পারে।

২। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল এর এডভান্সড বিষয়সমূহ বাদ দেয়া যেতে পারে।

৩। ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধে ৯০ নম্বরের পরিবর্তে ৫০ করা যেতে পারে ও বাংলা ভাবসসম্প্রসারণ ও সারাংশ তে ৪০ এর পরিবর্তে ২০ করা যেতে পারে।

৪। অর্থনীতি, হিসাববিজ্ঞান, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, ব্যাংকিং এর ব্যাসিক নলেজ সম্পর্কিত অন্তত ১০০ নম্বর সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

লিখেছেনঃ
মোঃ ফারুক হোসেন
প্রভাষক( হিসাববিজ্ঞান)
৩৮ তম বিসিএস

আরও খবর

Sponsered content