বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

সুমাইয়া ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয়

  প্রতিনিধি ৮ মার্চ ২০২৩ , ২:৫০:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ।চাকরি ছেড়ে দিলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ সুমাইয়া এখন প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করেন।বেসরকারি একটি ব্যাংকের লেনদেন সেবা বিভাগে কাজ করতেন সুমাইয়া ইরা।পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরও করছেন তিনি।নিজে থেকে কিছু করার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিল সুমাইয়ার।

গতানুগতিক চাকরির বদলে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা থেকেই ২০১৮ সালে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে সুমাইয়ার।কিন্তু শুরুতে ফ্রিল্যান্সিং শেখার মতো ভালোমানের কোনো প্রতিষ্ঠানের খোঁজও পাননি তিনি।হঠাৎই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান নকরেক আইটির কথা।অনলাইনে প্রতিষ্ঠানটির কাজের ধরন ও প্রশিক্ষণার্থীদের সাফল্য জানার পর সেখানে ওয়েবসাইট ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন সুমাইয়া।এরপর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর নকরেকের পরামর্শে ফ্রিল্যান্সারদের উপযোগী গ্রাফিকস ডিজাইন এবং ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির প্রশিক্ষণ নেন।সফলভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ২০১৯ সালে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফাইবার ও আপওয়ার্কে কাজ শুরু করেন।বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার কাজ করে ফাইবারে প্রথম ৬০ ডলার আয় করেন সুমাইয়া।

সুমাইয়া বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি ভাবতাম,আমি ডিজাইনের কাজ কখনোই করতে পারব না।কারণ,আমার মনে হতো,অনলাইনে এত প্রতিযোগিতার মধ্যে কীভাবে সফল হওয়া সম্ভব?আর এসব কারণে প্রথম দিকে কিছুটা অবহেলা করেছিলাম,যেটার আক্ষেপ আমার আজীবনের।আর এই অবহেলার জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্র,কানাডার অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া চাকরির প্রস্তাব হাতছাড়া করেছি।পুরোদমে কাজ শুরুর পরপরই আমি অনলাইনে দুটি কাজ করে ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে টিপস পাওয়ার পাশাপাশি ভালো মতামতও পাই।সব মিলিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে উৎসাহ বেড়ে যায়।’

২০২১ সালের ৩ অক্টোবর বেসরকারি একটি ব্যাংকের লেনদেন সেবা বিভাগে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন সুমাইয়া। বাসা থেকে সুমাইয়ার অফিস ছিল ১৯ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে।বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য থাকায় প্রায় সময়ই বাসে বসে বসে ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করতে হতো সুমাইয়াকে,কখনো আবার অফিস চলাকালেও ফোন কল আসত।অফিসের কাজ এবং মার্কেটপ্লেসের ক্লায়েন্টদের চাপে বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হতো সুমাইয়ার।সে সময়ের কথা স্মরণ করে সুমাইয়া বলেন,আমার পরিবার সব সময়ই আমার পাশে ছিল।আমার মা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিতেন, এমনকি ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার আগে মা বলেছিলেন, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে তোমার তো বেশ ভালো উপার্জন হয়, তাহলে ব্যাংকে চাকরি করা কি খুব দরকার?তারপরও সমাজের সেই তথাকথিত নিয়মে নিজেকেও জড়িয়ে নিয়েছিলাম।আমি বলব না যে ব্যাংকের কাজ খুব আরামের, যথেষ্ট কঠিন একটা কাজ।এর তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং করা বেশ সহজ।আর তাই ২০২২ সালের আগস্টে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করা শুরু করলাম।’

পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর পর পরিবারের সবার সমর্থন পেলেও পরিচিত অনেকের কাছ থেকেই কটুকথা শুনতে হয়েছে সুমাইয়াকে।অনেকে এটাও বলেছেন,কেন এই পেশা বেছে নিলে।তবে মানুষের কথায় দমে যাননি সুমাইয়া।এ বিষয়ে তিনি বলেন,এখন বেশ ভালো আছি,অন্তত ব্যাংকে কাজ করার সময়কার সেই মানসিক চাপটা নেই আমার।এখন নিজেকে স্বাধীন লাগে,কখনো কোথায় যেতে ইচ্ছা করলেই যেতে পারি,নিজেকে সময় দিতে চাইলেও দিতে পারি।এই পেশায় নির্দিষ্ট সময় কাজ সম্পন্ন করার চাপ থাকলেও ব্যক্তিস্বাধীনতা রয়েছে, যা আমি সব সময়ই চেয়েছিলাম।’

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দুটি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন সুমাইয়া।এ ছাড়া মার্কেটপ্লেসে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,অস্ট্রেলিয়া,জার্মানি,দুবাই,বেলজিয়াম,সার্বিয়াসহ আরও বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের কাজ নিয়মিত করছেন তিনি।এসব কাজ করে মাসে কমবেশি এক লাখ টাকা আয় হয় তাঁর।একবার এক মাসে মার্কেটপ্লেস ও বাইরের অন্যান্য ক্লায়েন্টদের কাজ করে প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেছিলেন তিনি।

ধৈর্য ধরলে সফলতা আসবেই:-ফ্রিল্যান্সিং করা সহজ নয়, আবার কঠিনও নয় উল্লেখ করে সুমাইয়া বলেন,অনেকে ভাবেন ফ্রিল্যাংসিংয়ের কাজ শুরু করলেই দ্রুত আয় করা যায়।আসলে একদমই তা নয়।ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজে দক্ষতার পাশাপাশি অনেক ধৈর্য দরকার।শুধু তাই নয়,নিজের দক্ষতাও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হয়।’

আরও খবর

Sponsered content