অপরাধ-আইন-আদালত

সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের ক্যানটিনের ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা,যা বললেন মেট্রোরেল ব্যবস্থাপক

  প্রতিনিধি ১৭ মার্চ ২০২৪ , ৪:৫৭:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক‌।।রাজধানীর ঢাকার বুকে ৭ হাজার ৫৮০ বর্গফুট জায়গার বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য মাসিক ভাড়া মাত্র এক হাজার টাকা!চোখ কপালে ওঠার কথা বটে। কিন্তু এই বাস্তব ঘটনা ঘটেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডে (ডিএমটিসিএল)।মেট্রোরেল ডিপোর স্টাফ ক্যানটিন পরিচালনার জন্য এত বড় জায়গায় নামমাত্র মূল্যের ভাড়া ধরেছে ডিএমটিসিএল।এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে।তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে,
দরপত্র ডেকেও সাড়া না পেয়ে বাধ্য হয়ে ‘নামমাত্র মূল্যে’ ক্যানটিন ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ও প্রকিউরমেন্ট) মো. নজরুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,ভাড়া হিসাবে মাসিক এক হাজার টাকা হারে এক বছরের জন্য ভ্যাট ও আয়কর ছাড়া মোট টাকা ১২ হাজার টাকায় এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা ডিপোতে অবস্থিত ৭ হাজার ৫৮০ বর্গফুট স্টাফ ক্যানটিন পরিচালনার জন্য ১ জানুয়ারি দাখিল করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খন্দকার এন্টারপ্রাইজের দরপত্রটি গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছে।

তিন বছরের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে সম্মত রয়েছেন মর্মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ জারি করার সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে।জামানত হিসাবে ২৮ মার্চের মধ্যে ৩ লাখ টাকার পে অর্ডার/ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে দাখিল করতে হবে।

চুক্তির শর্ত হিসেবে এক বছরের জন্য মোট ১২ হাজার টাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এবং সমুদয় ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ৪ এপ্রিলের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।তবে আর্থিক দরপ্রস্তাবে উল্লিখিত খাদ্যতালিকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা মেনে ক্যানটিন পরিচালনা করতে হবে।

এদিকে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নামমাত্র মূল্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশাল জায়গা ভাড়া দেওয়ার ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নাগরিকেরা।ওই পোস্টে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জার কমিউনিটি গ্রুপে মো. সুজান নামের আইডি থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়, ‘মাসে এক হাজার টাকা ভাড়া,একটু বেশিই অমানবিক হয়ে গেল না?’ মো. আকতারউজজামান নামে আরেকজন কমেন্টে লেখেন,সমস্যা নাই, পকেট কাটার জন্য সাধারণ জনগণের পকেট তো রয়েছে।’

হোসেন মোহাম্মদ শিশির লিখেছেনে,এই যে সবে চুরি শুরু হচ্ছে।এরপর প্রতিটি স্টেশনের ফুড কর্নার এভাবে ইজারা দেওয়া হবে।তারপর ধীরে ধীরে অন্যান্য বিভাগ। ২০ বছর পর মেট্রোরেল থাকবে লসে।বিমান,রেল,ব্যাংকসহ সরকারি বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও এইভাবে লোকসানি খাত হইছে।’

শাহ কামাল লিখেছেন,এই টেন্ডার আগেও একবার হয়েছিল, তখন কোনো পক্ষ নিতে আসেনি—কেননা, এটা শুধুমাত্র স্টাফ ক্যানটিন।এই স্টাফ ক্যানটিনে খাবার খাবে শুধুমাত্র যারা ডিপোতে থাকবেন। আবার যারা ডিপোতে থাকবেন,তারা সকলেই যে খাবে তা কিন্তু না। কেননা ম্যাক্সিমাম কর্মকর্তাকর্মচারী নিজ বাসা থেকে দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে আসেন।যারা মেট্রোরেল স্টেশনে কর্মরত,তারা কিন্তু ডিপোতে এসে খেতে পারবেন না দায়িত্বের জন্য।তাই স্টাফ ক্যানটিন যারা চালাবে,এমনও হতে পারে তারা লসে থাকবে। ধএটা নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে চাহিদার ভিত্তিতে ভাড়াও বাড়বে।’

মেট্রোরেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এই ঠিকাদার নিয়োগ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর একই বিজ্ঞপ্তি দিলেও কোনো সাড়া পায়নি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।ক্যানটিনে খাবারের দাম কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে এবং ক্যানটিনের মধ্যে কোনো কিছু রান্না করা যাবে না, কাটারিং সার্ভিস দিতে হবে এমন সব শর্তে কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ক্যানটিনের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিল না।তাই দীর্ঘদিনেও ক্যানটিন চালু করা সম্ভব হয়নি।পরবর্তীকালে আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

‘নামমাত্র মূল্যে’ ক্যানটিন ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে যে নিয়মে চলে,আমরাও সেইভাবে দিয়েছি।আমরা দুই বছর ধরে চেষ্টা করছি,এই ক্যানটিন দেওয়ার জন্য, কিন্তু পাচ্ছিলাম না। যেহেতু বাইরের কোনো লোক খাবে না। ষআমাদের লিমিটেড স্টাফ এতে কেউ আগ্রহ পাচ্ছে না। এটা দ্বিতীয়বার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।গত বছর সেপ্টেম্বর আবার এ বছর দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো ভর্তুকির ক্যানটিন,এটা মানুষের জন্য না।এখানে বাইরের লোকের কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে শুধু স্টাফরা খাবে এবং সেটাও ভর্তুকির ভিত্তিতে খাবে। এর জন্য দরপত্র দাখিলই করে না,ঞআগ্রহ নাই। যেহেতু ভর্তুকি দিয়ে খাওয়াতে হবে,সেটা ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় হবে।এখানে এক হাজার টাকার যে কথা বলা হয়েছে,তার সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।এখানে একটা প্যাকেজ থাকবে।সেটা সাতটা বা চারটা হতে পারে।ঢাকায় আরও এমন স্টাফ ক্যানটিন আছে,সেটা যেভাবে পরিচালিত হয়—এটাও সেভাবে হবে।সেখানে যেভাবে পরিচালিত হয়,সেখানে কতগুলো প্যাকেজ দেয়।যেমন ৫০ টাকা দিয়ে এই তিনটা তরকারি খেতে পারবে। ৬০ টাকা দিয়ে এই কটা তরকারি খেতে পারবেন।এটা ভর্তুকির ভিত্তিতে হয়ে থাকে।’

সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা অস্বাভাবিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ের একটা দৃষ্টান্ত। এখানে কোনো অনিয়ম কাজ করেছে কি না খতিয়ে দেখা দরকার।’

আরও খবর

Sponsered content