সারাদেশের খবর

সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির খাবারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়েছে!

  প্রতিনিধি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১:১৫:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নওগাঁ প্রতিনিধি।।নওগাঁয় সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির খাবারের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়েছে।এতে কেজিপ্রতি মুরগির দরও প্রকারভেদে বেড়েছে ৮০ টাকা পর্যন্ত।খামারিদের অভিযোগ, ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে ৫০ কেজি মুরগির ফিডের দর বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কম মূলধনে অধিক মুনাফা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় দেশের বহুমাত্রিক শিল্পগুলোর অন্যতম পোল্ট্রি শিল্প।গত কয়েক বছরে দ্রত ডানা মেলতে থাকা এ শিল্পে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে এগিয়ে আসেন অনেক তরুণ উদ্যোক্তা।প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মুরগি নিয়ে গড়ে তোলা নওগাঁর বদলগাছীর পারভেজের মতো অনেক খামারির এখন বুকে হতাশা; মুরগির খাবারের দাম বাড়ায়।

পারভেজ বলেন,এখন থেকে ৬ মাস আগে ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকা ছিল।যার দাম এখন বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় ঠেকেছে।আর সোনালি ফিডের দাম ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা; সেটির দাম এখন বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।ফিড মিলাররা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আজ বলছেন ডলার সংকট,তো কাল বলছেন সয়াবিন বা ভুট্টার দাম বেশি।সরকার যদি তাদের তদারকি করেন তাহলে দাম এতটা বাড়বে না।’

চলতি সপ্তাহে ৫০ কেজির ফিডের দর বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।এর মধ্যে নাওরিশ ফিডের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৩ হাজার ৩৫০ টাকা,যা চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪৮০ টাকায়।প্রভিটা ফিডের দাম আগে ছিল ৩ হাজার ৪৫০ টাকা,যা ঠেকেছে ৩ হাজার ৫৮০ টাকায়।হক ফিডের দাম ছিল ২ হাজার ৮৫০ টাকা,এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়।ন্যাচার ফিডের দাম ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা, বর্তমানে এর প্রতি বস্তা ৩ হাজার ৪০০ টাকা।গত সপ্তাহে প্যারাগন ফিড বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ টাকায়,এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫৮০ টাকায়।আর ভিটামিন ১ লিটারের দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা,এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকায়।

ফিডের দাম এত বেশি বাড়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে এক খামারি বলেন,মিল মালিকরা বলছেন যে কাঁচামালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে ও খাদ্যের উৎপাদন খরচ বেশি।পর্যায়ক্রমে খাবারের দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে বাড়ছে না।এর জন্য আমরা পর্যাপ্ত লোকসানে রয়েছি।কাজেই অদূর ভবিষ্যতে আমরাও টিকে থাকতে পারবো কি না জানি না!

আরেকজন খামারি বলেন,এভাবে দাম বাড়লে তো আমরা বাঁচব না।আমরা কৃষক মানুষ।আমরা দিন দিন ধ্বংসের পথেই যাচ্ছি।আমরা তো প্রত্যেক ফিড মিলারের কাছে লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা ঋণের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।আমরা এ ঋণ শোধ করব কী করে?’

এদিকে,মুরগির ফিডের দাম বাড়ার অজুহাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দর বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।এতে নাভিশ্বাস নিম্ন আয়ের মানুষের।এক ক্রেতা বলেন,গরিবের খাবার হচ্ছে পোল্ট্রি মুরগি।তবে সেটির দাম যদি ১০০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় ঠেকে,তাহলে আমরা কীভাবে খাব। আমাদের জন্য বেশ কষ্টকর হয়ে উঠেছে।খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।’

আরেকজেন ক্রেতা বলেন,আয় ও ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। এর জন্য আমরা গরিব মানুষ মুরগি কিনে খেতে পারছি না। এখন মুরগির দাম ২২০ টাকা কেজি।দুই কেজি কিনতে গেলে প্রায় ৫০০ টাকারও বেশি খরচ পড়ছে।যারা মধ্যবিত্ত বা কাজ করে খায় তাদের মুরগি কেনার মতো সামর্থ্য নেই।’

মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে এক বিক্রেতা বলেন,মিলাররা মুরগির ফিড মজুত করে রেখে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।এতে খামারির কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে।আগে যে মুরগি ৯৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে কিনতাম,তা এখন ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের তো এখানে কোনো দোষ নেই।আমরা বেশি দামেই কিনছি।’

এদিকে,খামারের মুরগির খাবারের দর বাড়ানোর নানা অজুহাত দিচ্ছেন ফিড মালিকরা।জয়পুরহাটের মা গোল্ড ফিড ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক সওদাগর বাবু বলেন, ‘আমাদের মূল উপাদান সয়াবিন ভুসি ও ভুট্টা। আগে ৭৪ টাকা দরে সয়াবিন কিনেছি।এখন তা ৮২ টাকায় কিনতে হচ্ছে।এর কারণে ফিডের দাম বাধ্য হয়ে ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে হয়েছে।’

তবে বাজার তদারকির মাধ্যমে অসাধু কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মহির উদ্দিন।তিনি বলেন,সংশ্লিষ্ট সবাই ‍যদি এটি তদারকি করি, তাহলে আশা করি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য,জেলায় ছোট বড় মিলে সাড়ে ৭০০ পোল্ট্রি খামার রয়েছে।যেখানে লালনপালন হচ্ছে প্রায় ৩৫ লাখ মুরগি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে,জেলায় প্রাণিজ ও আমিষের বার্ষিক চাহিদা ৯৮ হাজার ৩০০ টন।যার ৩৫ শতাংশের জোগানই আসে ব্রয়লার মুরগি থেকে।

আরও খবর

Sponsered content