প্রতিনিধি ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:২০:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মাজহারুল ইসলাম।।বিএনপি’র এই সমীকরণ কমবেশ ঠিকই ছিলো,যদি এই সরকার জামাত গাইডেড সরকার না হয়ে নিতান্তই নিরপেক্ষ ইন্টেরিম সরকার হতো।নিরপেক্ষ সরকার হলে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়ে ৬-৯ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে দেয়াটা স্বাভাবিক ছিলো।আর সেক্ষেত্রে বিএনপি’র সমীকরণ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী ছিলো।কিন্তু সংস্কারের জটিল সমীকরণের অন্তরালে জামাতি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নর এজেন্ডা বিএনপির এন্টেনা ক্যাচ করে নাই।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপি একটি সহজ সমীকরণে আটকে গেছে।সমীকরণের হিসেবটা এমন যে, পরবর্তী নির্বাচনে তারা ৮০ শতাংশ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে,জামাত বিরোধী দলে থাকবে এবং তার পরের নির্বাচনে ৬০ শতাংশ আসনে জয়ী হয়ে তারা সরকারে থাকবে,আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে আসবে।
বিএনপি সবসময়ই মাথা মোটা দল।তারা বুঝে নাই যে,এত এত দাগী আসামী মুক্তি পাচ্ছে,অথচ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফিরার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না কেন! আওয়ামী সরকারের পতনে তারা খুশীতে এতই গদগদ ছিলো যে,মাইনাস-২ ফরমুলার জনককেই মাথায় তুলে নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে।এখন ঠেলা সামলাও। এক/এগারোতে উনার পাশে কেবল সেনাবাহিনী ছিলো,রাজনৈতিক দল ছিলো না। নিজে রাজনৈতিক দল করতে যেয়েও পারে নাই। কিন্তু সেই অভাব এবার নেই।ডানে জামাত,বামে হিজবুত তাহেরীর, পেছনে হেফাজতসহ অন্যান্য ইসলামী দল আর সামনে সেনাবাহিনী।
ইতিমধ্যে প্রশাসনে সংস্কারের নামে শতভাগ জামাত বসানো হচ্ছে,এই খবর মাথামোটা বিএনপি রাখে না,তারা ব্যস্ত ছিলো লুটপাটে।এখন বিএনপি’র কোনও কথা প্রশাসন শোনে না। যৌথ অভিযানে পিঠ বাঁচাতে প্রশাসনিক সহায়তার জন্য উপজেলাগুলোতে তারা বাধ্য হয়ে জামাতের দ্বারস্থ হচ্ছে।
অন্যদিকে,খালি ফিল্ডে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় জামাত তাদের সাংগঠনিক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে মহাসমারোহে।মিডিয়াগুলোতে এসব আবার ব্যাপক লীড পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জামাতি মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছর পর বিএনপি আর জামাতের জমসমর্থন অদলবদল হতে দেখলেও আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।
আরেকটু ক্লিয়ার করি।এদেশে মূলত: দু’টি সেন্টিমেন্ট বিরাজমান ছিলো।আওয়ামী লীগ এবং এন্টি-আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট।এই এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে জিয়াউর রহমান বিএনপি সৃষ্টি করেছিলো।প্রশ্ন আসতে পারে, জামাতও তখন এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্টে ছিলো।তাকে ডিঙিয়ে বিএনপি কেন এত বড় দল হয়ে গেল!এতে দু’টি ফ্যাক্টর একসাথে কাজ করেছিলো- ১. জামাতের গায়ে তখনও স্বাধীনতা-বিরোধীতার গন্ধ তাজা ছিল,২. বিএনপি’র মাথার উপর ক্ষমতার ছাতা ছিলো। আর বর্তমানে এই দু’টি ফ্যাক্টরই জামাতের পক্ষে- তাদের গায়ে বিপ্লবের তাজা সুগন্ধি আছে এবং মাথার উপর ক্ষমতার ছাতাও আছে।সুতরাং এই ফাঁকা ফিল্ডে কালক্রমে এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্ট বিএনপি থেকে জামাতে শিফট হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
এন্টি-আওয়ামী সেন্টিমেন্টের এই আভ্যন্তরীণ রূপান্তরে এককভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি,লাভবান হবে জামাত। আওয়ামী লীগের এতে কিছু আসবে যাবে না,বরং তারা দল গোছাতে যথেষ্ট সময় পাবে।
কিন্তু জামাতি এই মাস্টারপ্ল্যান দেশের জন্য ঘোরতর অন্ধকার বয়ে আনবে।আগামী পাঁচ বছর তারা সংস্কারের অজুহাতে দেশ শাসনের আড়ালে দলকে নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রস্তুত করবে এবং পরের পাঁচ বছর নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসনের এটেম্পট নিবে।জামাতি শাসনে এদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তানের পথেই হাটবে নিশ্চিত!এদের প্রতিহত করতেই হবে।আওয়ামী লীগ যেহেতু মাঠে নেই,এ দায়িত্ব এখন এককভাবে বিএনপির।
বিএনপি’র হাতে এখন দু’টি অল্টারনেটিভ আছে-
৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে এ সরকারকে বাধ্য করা, অথবা অনতিবিলম্বে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরায়ে আনতে সরকারকে বাধ্য করা।
সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করলেও যদি তারেক জিয়া দেশে এসে জনসংযোগ চলমান রাখে,জামাত ফাঁকা মাঠে খেলার সুযোগ পাবে না।এতে নির্বাচন ত্বরান্বিত হবে, বিএনপি’র সমর্থকরাও চাঙা থাকবে।
কিন্তু,বিএনপি কি পারবে এই জামাত গাইডেড সরকারকে চাপ দিতে,আন্দোলন করতে? এত বছর জামাতের কাঁধে ভর করে চলতে চলতে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে।ফলে জামাত সরে যাবার পর এখন ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তারা কাঙালের মত এ সরকারের করুনার জন্য বসে আছে।
তবে বিএনপি’র বোঝা উচিত,নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে যে কোন মুভমেন্টে তারা মাঠে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। প্রয়োজনে জামাতি ষড়যন্ত্র রুখতে নব্বইয়ের মত আবার লীগ বিএনপি এক হবে।















