ইসলাম ও জীবন

মাহে রমজানে যেভাবে আমলে সময় দিবেন

  প্রতিনিধি ৩০ মার্চ ২০২৪ , ৫:৪৬:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।মাহে রমজানে যেভাবে আমলে সময় দিবেন‌।ইহুদিরা আল আকসার জায়গায় থার্ড টেম্পল নির্মাণ করতে চায় কেনো?

দীন ইসলামের পাঁচটি রোকনের একটি হলো রোজা।প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য বছরে একবার রমজান মাসে ত্রিশ রোজা রাখা ফরজ।বছর ঘুরে আবার আমাদের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সেই মাহে রমজান।

এগারোটা মাস আমরা আকুল হয়ে অপেক্ষা করি পবিত্র এই রমজান মাসের জন্য।এই মাস রহমত বরকত নাজাতের মাস। মাগফিরাতের মাস।গুনাহ মাফের মাস।আমলনামা নেকির মাধ্যমে ভারি করার মাস।এই মাস ইবাদতবন্দেগী করার মাস। তাসবিহ তাহলিল জিকির আজকার করার মাস।

রোজা শুধু আমরাই রাখি না,আমাদের পূর্ববর্তী লোকেরাও রেখেছেন।এই মাস সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআন পাকে বলেন,হে ঈমানদারগণ!তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে,যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর,যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (আল বাকারা – ১৮৩) ।

রমজান আসে মুমিন মুসলমানকে আরো দীনদার পরহেজগার বানাতে।আল্লাহমুখী করতে।এগারো মাসের জমানো পাপকালি মোচন করতে। হেদায়েতের আলো ছড়াতে।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।(বুখারি-১২৬৮)

রমজান এলে বেড়ে যায় ইবাদত বন্দেগি।রমজান মাসের অবশ্য করণীয় কিছু আমল আছে। কিছু আমল আছে করলে সওয়াব,না করলে গোনাহ নাই।এ মাসে শয়তানকে বন্দি করা হয়।জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়।নফল আদায় করলে সুন্নাতের সওয়াব পাওয়া যায়।সুন্নাত আদায় করলে ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

আর ফরজের সওয়াব তো আল্লাহ অগণিত দান করবেন। তাই আল্লাহর মুমিন বান্দারা এই রমজান মাস পেয়ে নেকি করার প্রতিযোগিতায় নামেন।সারাবছর ধরে যারা মসজিদমুখী হয় না,তারাও নামাজ পড়তে মসজিদে আসেন।জিকির আজকার করেন।মাথায় টুপি,পাঞ্জাবী পড়েন।রোজা রাখেন। আলহামদুলিল্লাহ।সবাই কমবেশি আল্লাহকে ভয় করেন।

তবে দেখা যায়,হাটে-বাজারে হোটেলগুলোতে পর্দা দিয়ে চলে খানাপিনা।এমন একটা ভাব যেন পর্দা দিলে কেউ দেখতে পায় না।কিন্তু সবাই বুঝতে পারে এখানে দিনের বেলা খানাপিনা চলছে।এটা নিষিদ্ধ রমজান মাসের জন্য।স্বয়ং আল্লাহ নিষেধ করেছেন।আল্লাহর নিষেধ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন চলে এই নিষিদ্ধ কাজ দিনের বেলা রান্না ও খানাপিনা।আল্লাহ এই রমজানে এদের হেদায়েত দান করুন। বিরত রাখুন নিষিদ্ধ কাজ থেকে।

আল্লাহপাক বলেন,গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে,অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে।আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়,তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে।যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্মকরে,তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।আর যদি রোজা রাখ,তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর,যদি তোমরা তা বুঝতে পার।’ (আল বাকারা – ১৮৪)

রমজানে প্রথম ও প্রধান আমল এবং করণীয় কাজ হচ্ছে রোজা রাখা।সুবহে সাদিকের আগে সেহেরি খেয়ে ইফতার অর্থ্যাৎ মাগরিবের আজান পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে খানাপিনা,স্ত্রী সহবাস ও নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করাকে রোজা বলে।

রোজা পরিপূর্ণ করার জন্য অনেকগুলো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।রোজাকে সুন্দর ও নেকিতে পরিপূর্ণ করার জন্য কিছু কাজ করতে হবে।রোজার শর্তগুলো ঠিকঠাক আদায় করলেই কেবল রোজা পূর্ণ হবে।

মিথ্যা,গীবত বা পরনিন্দা থেকে বিরত থাকতে হবে।রোজা রেখে কোনো অবস্থায় মিথ্যা বলা যাবে না।ঝগড়া বিবাদ করা যাবে না। কোনো কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না।অন্যায় অশ্লীল ও গর্হিত কাজ করা যাবে না।

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে পারল না, তবে এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (বুখারি-১৭৭০)

রমজানে করণীয় কিছু কাজ

১. সেহরির সময় একটু আগে উঠুন।অজু করে তাহাজ্জুদ পড়ুন। অন্য সময় যেহেতু উঠা হয় না,আলসেমি লাগে। উঠার জন্য মনে চাইলেও তাহাজ্জুদ পড়া হয় না।তাই মাহে রমজানের এই সুযোগ লুফে নিন।মনপ্রাণ উজার করে আল্লাহর কাছে সঁপে দিন।মোনাজাতে চেয়ে নিন জীবনের সব চাওয়া।চোখের পানি ছাড়ুন।আল্লাহ খুশি হয়ে যাবেন।

২. সেহরিতে বাচ্চাদের ডেকে তুলুন।রোজা রাখুক,না রাখুক- সেহরি খাওয়ার অভ্যাস করুন।এতে করে রোজা সম্পর্কে বাচ্চারা আগ্রহী হবে।ছোট থেকে রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা গুরুজনের দায়িত্ব।

৩.সেহরি খেয়ে ঘুমাবেন না।বসে বসে কোরআন তেলাওয়াত করুন অথবা তাসবীহ জিকির করুন।
৪.আজান হলে ফজর পড়ুন।তারপর একটু কোরআন তেলাওয়াত করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
৫.ঘুম থেকে উঠে ব্যক্তিগত কাজ,সাংসারিক কাজ করুন।
৬.বাড়ির ও আশপাশের ছোটবড় কিছু লোকজন নিয়ে বসুন।নামাজের দোয়া কালাম ও রোজায় করণীয় কাজ নিয়ে আলোচনা করুন।যে যেমন কোরআন পড়তে পারেন তেমনি পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন।ইসলামিক গজল গান গাওয়াতে পারেন। এতে করে এই সময়টুকু আমলনামায় নেকি হিসেবে লেখা হবে।

৭.গোসল করুন।
৮.যোহরের সময় হলে যোহরের নামাজ পড়ুন।
৯.কোরআন তেলাওয়াত করুন।
১০.সাংসারিক ও ব্যক্তিগত কাজ করুন।

১১.আসরের সময় হলে আসরের নামাজ পড়ুন।
১২.আবারও কোরআন তেলাওয়াত করুন।
১৩.জিকির করুন।
১৪.ইফতার সামনে নিয়ে বসে আজানের অপেক্ষা করুন।
১৫.মাগরিবের নামাজ পড়ুন।
১৬.একটু বিশ্রাম নিয়ে তারাবির নামাজের জন্য তৈরি হউন।

১৭.যেমন ভাবে রোজা পরিপূর্ণ করেছেন তেমনিভাবে তারাবী নামাজ পরিপূর্ণ আদায় করুন বিশ রাকাত।
১৮. কেউ ঝগড়াঝাটি করতে এলে তাকে বলুন আমি রোজাদার।কটুবাক্য শুনেও চুপ থাকুন।ইয়া রব্বুল আলামিন আমিসহ আমাদের সকলকে পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন।

তারাবি নামাজ পরিপূর্ণ আদায় করার তৌফিক দান করুন।রমজান মাসে বিশুদ্ধ আমল করার তৌফিক দান করুন।অশ্লীল ও গর্হীত কাজ থেকে বিরত রাখুন। শুদ্ধভাবে জেনে বুঝে কোরআন তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন কোরআন নাজিলের এই পবিত্র মাসে। আমিন ইয়া রব্বুল আলামিন।

আরও খবর

Sponsered content