স্বাস্হ্য ও জীবন পরিচর্যা

বরিশালে জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:০৭:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল প্রতিনিধি।।বরিশালের প্রাচীন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা কেন্দ্র (সদর) জেনারেল হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। হাসপাতালের সব জায়গাতেই রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, বহির্বিভাগ সার্বক্ষণিক এসব দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণে থাকছে।

মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু-একটা অভিযান হলেও অভিযানের পর আবার সবকিছু চলে যায় দালালদের দখলে। হাসপাতালের সামনে দালাল-নির্ভর ডায়াগনস্টিকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,এখানে এ হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিত্সকসহ অন্যদের আশ্রয়-প্রশয়েই চলে এসব কার্যক্রম। কেননা হাসপাতালের সামনের অধিকাংশ ডায়াগনস্টিকগুলোতে জেনারেল হাসপাতালে কর্মরতদের নামে-বেনামে মালিকানা রয়েছে।এছাড়া চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সকলেই এসব ডায়াগনস্টিক থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পেয়ে থাকেন।বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এবং নাম সর্বস্ব ওষুধ কোম্পানির ওষুধ বিক্রির মোটা অঙ্কের কমিশন পেয়ে হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টরা সবাই জড়িয়ে পড়েছেন এ অনৈতিক কাজে।

ডায়াগনস্টিক ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে সিন্ডিকেট করে দৈনিক এ হাসপাতালে আন্ত ও বহির্বিভাগের ছয় থেকে সাত শতাধিক রোগীর সঙ্গে চলছে প্রতারণা।

আর দৈনিক এ সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গরিব অসহায় রোগীদের কাছ থেকে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে কাজ করে তিন শ্রেণির দালালচক্র।একটি চক্রের কাজই হচ্ছে রোগী দেখা মাত্র হুমড়ি খেয়ে পড়া।সরকারি হাসপাতালের নানান অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা বলে বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়া।আরেকটি চক্রের কাজ হচ্ছে বহির্বিভাগের ডাক্তারদের রুমের সামনে অবস্থান নেওয়া অর্থাৎ ডাক্তার দেখিয়ে রোগী বের হওয়া মাত্র ব্যবস্থাপত্র নেওয়া এবং তাতে কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছে তা দেখে রোগীকে কম খরচে করিয়ে দেবে বলে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া।

ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বড় মাপের একটা কমিশন পায় এ দালালচক্র।আরেকটি দালাল চক্র রয়েছে,যারা হাসপাতালে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তারা আয়া ও ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।তারা তাদের নির্দিষ্ট কাজ বাদ দিয়ে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে অবস্থান নিয়ে রোগীদের যে কোনো ওষুধের জন্য তারা নিয়ে যায় তাদের নির্ধারিত ফার্মেসিতে।সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে দেয় রোগীকে। রোগী যদি টাকার কথা বলে তখন এ দালাল বলে সব টাকা দিয়েন একসঙ্গে।এতে করে রোগী বাকিতে ওষুধ আনার সুযোগ পায়। এতে অনেক রোগী বুঝতেই পারে না তাদেরকে নিম্নমানের ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা নগরীর গোরস্থান রোডের বাসিন্দা নাজমা আক্তার কয়েক দিন ধরে বুকে ব্যথা অনুভব করায় ডাক্তার দেখাতে আসেন বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে।দেখা মাত্র ডাক্তার তাকে এক্সরে ও ইসিজি করতে দেন। এক মহিলা এসে জানান,তিনি কম খরচে এ পরীক্ষাগুলো করিয়ে দেবেন।এই কথা বলে নিয়ে যান হাসপাতালের অপর পাশে। পরীক্ষা বাবদ সেখানে খরচ ধরা হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা। যদি এ পরীক্ষা হাসপাতালেই করা হতো তাহলে খরচ লাগতো তিন ভাগের এক ভাগ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন জানায়,‘এনালগ এক্সরে মেশিনে মাঝে মাঝে এক্সরে করা হয়।আর ডিজিটাল মেশিন ‘নষ্ট’ বলে সবসময়ই। আলট্রাসনো মেশিনও বলে নষ্ট।আসলে এগুলো সবই সচল রয়েছে।শুধু ডাক্তারদের পকেট ভারি করার জন্য এসব রোগীদের বাইরে পাঠায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে।’

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান,হাসপাতালের সামনেই গড়ে উঠেছে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসি। দালালদের দৌরাত্ম্যের বিষয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলার সভাগুলোতে উল্লেখ করা হয় এবং প্রায়ই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হয়। এছাড়া ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেল হাসপাতাল ক্যাম্পাসে না রাখার জন্য এবং সপ্তাহে শনি ও বুধবার দুপুর দেড়টার পর হাসপাতাল পরিদর্শনের জন্য বলা হয়েছে।তিনি বলেন,জনবল না থাকা ও যান্ত্রিক ত্রুটি থাকায় ডিজিটাল এক্সরে,ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম সহ প্যাথলজিরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ইত্তেফাককে জানান,তিনি সদ্য যোগদান করলেও বিষয়টি জানতে পেরেছেন। জেনারেল হাসপাতালের দালালদের বিরুদ্ধে দ্রুত জেলা প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হবে।

আরও খবর

Sponsered content