বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

ফ্রিল্যান্সার কাজ করে মাসে গড়ে ১৫ লাখ টাকা আয়

  প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২৩ , ১:৪৮:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।কুষ্টিয়ার মো. মাহফুজুর রহমান।মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে প্রথম কাজে আয় করেন ১৫ মার্কিন ডলার।এখন ৩২ জনের একটি দল নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।গড়ে মাসিক আয় ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার,বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।এখন পর্যন্ত মাহফুজুর রহমান মোট আয় করেছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

চাকরি করতেন একটি শিল্পগোষ্ঠীতে (গ্রুপ অব কোম্পানিজ)। চাকরিতে বেশ ভালো করছিলেন।দক্ষতা দেখিয়ে পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি দুই-ই হচ্ছিল সমানতালে।সেই ভালো বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন।শুরু করেন তথ্যপ্রযুক্তির ফ্রিল্যান্সিং।প্রথম কাজ পেতে বেশি সময় না লাগলেও,একটি ভুলের জন্য গ্রাহককে ২ থেকে ৩ মাস প্রতিদিন ৫–৬ ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে দিতে হয়েছে। কিন্তু দমে যাননি

ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক মাহফুজুর চলতি বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে ঢাকা বিভাগ থেকে সেরা ফ্রিল্যান্সারের সম্মাননা পেয়েছেন।

শিখতে শিখতে দক্ষ:-

মো. মাহফুজুর রহমান ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন ২০১৮ সালে। তিনি বলেন,আমি পূর্ণাঙ্গ একটা দিকনির্দেশনা নিয়ে কাজ শুরু করি।শুরুতেই ডিজিটাল বিপণন বিষয়ে একটা পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ কোর্স করি।ধীরে ধীরে ডিজিটাল বিপণনের বিভিন্ন অংশ যেমন এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করি।’

২০১৯ সালে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ শেখা শুরু করেন মাহফুজুর রহমান।এরপর বিদেশে গ্রাহকদের ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন তিনি।নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ফলে অনলাইনে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভআর ডটকমে ‘লেভেল ২ সেলার’ হন মাহফুজুর।

মাহফুজুর বলেন,আমার কাছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল।কারণ,একজন গ্রাহক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে চলে যেতেন।আর আমাকে প্রতি মাসে নতুন গ্রাহক খুঁজতে হতো।এ জন্য ওয়েব ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি ই-কর্মাস খাত নিয়ে কাজ শুরু করি। ২০২০ সালে পূর্ণসময় ই-কর্মাস সাইটের জন্য বিভিন্ন সেবা দিতে থাকি।এতে দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহক পেতে থাকি।’

দিনে দিনে কাজ বাড়তে থাকে মাহফুজুর রহমানের।একার পক্ষে সব কাজ সামলানো সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান,প্রজেক্ট অনুসারে ১/২ জন করে টিমে লোক বাড়াতে থাকি।আমার মূল লক্ষ্যই ছিল গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং ভালো মানের কাজ দেওয়া। আমার দীর্ঘমেয়াদি গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।সঙ্গে সঙ্গে দলও বড় হতে থাকে।’ বর্তমানে রাজধানীর আদাবরে গ্লিজটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর।যেখানে পূর্ণকালীন চাকরি করেন ৩২ জন।খণ্ডকালীন কর্মীর সংখ্যা আরও বেশি।

প্রথম কাজেই ধাক্কা:-

বর্তমানে সফল ফ্রিল্যান্সার হলেও,প্রথম কাজেই ধাক্কা খেয়েছিলেন মাহফুজুর রহমান।তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে কাজের জন্য ফাইভআরে অ্যাকাউন্ট খুলি।তখন আমি একেবারেই নতুন।প্রথম কাজের গ্রাহক নির্বাচনে ভুল করি। কাজটা করার পর গ্রাহক আমাকে একটা তারকা (ওয়ান স্টার) ফিডব্যাক দেন।এই একটা তারকা আমার ফ্রিল্যান্সিং অ্যাকাউন্টের ক্ষতি করে।নতুন কাজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। একটা তারকার কারণে আমি চাইলেও অন্য মার্কেটপ্লেসে বা ফাইভআরে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতাম না।তখন আমার হাতে একটাই উপায়—গ্রাহককে সন্তুষ্ট করা।যেন গ্রাহক আগের ফিডব্যাক সরিয়ে নেন।তাই আমি সেই গ্রাহকের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করতে থাকি।একপর্যায়ে তাঁকে রাজি করাতে পারি। শর্ত ছিল যে পরের দুই–তিন মাস পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর কাজ করে দেব।আমি রাজি হই।সেই অ্যাকাউন্ট দিয়েই আমি এখন পর্যন্ত কাজ করছি।আমার দলের জন্যও কাজ জোগাড় করছি।’

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা:-

স্নাতক পড়ার সময় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলেন মাহফুজুর রহমান।তাঁর মা–বাবা অবশ্য চাচ্ছিলেন ছেলে যেন ফ্রিল্যান্সিং না করে।তাই মা–বাবার জোড়াজুড়িতে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজে চাকরি শুরু করি।বেতন ও পেশাজীবন ভালো হওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিই।কেননা সব সময় আমার ইচ্ছা ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার।’ ১০ মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।এরপর আবার ফ্রিল্যান্সিং করেন।

এগিয়ে চলা:-

স্থানীয় কোনো গ্রাহকের কাজ করেননি মাহফুজুর রহমান। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আন্তর্জাতিক গ্রাহক এবং ১০টি আন্তর্জাতিক এজেন্সির সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।বর্তমানে মাহফুজুর রহমানের গ্রাহক তালিকায় আছে বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজান,ওয়ালমার্ট,ইবে।সব মিলিয়ে ১০৮ গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।

মাহফুজুর বলেন,একটা ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য যা যা প্রয়োজন,তার সঠিক ব্যবস্থাপনার সব কাজ আমাদের দল করে থাকে।আমাদের দল বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র,কানাডার ওয়্যারহাউস পরিচালনা, প্রডাক্ট সোর্সিং, লিস্টিং—সব কাজ পরিচালনা করে থাকে।’

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পরিবারের সহায়তার কথা জানান মাহফুজুর।তাঁর ইচ্ছা দেশের পণ্য অ্যামাজন,ওয়ালমার্ট,ইবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিক্রি করা।

আরও খবর

Sponsered content