ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

নিজেদের পণ্যের নিরাপত্তার জন্য হলেও ব্যবসায়ীদের ইন্স্যুরেন্স থাকা প্রয়োজন

  প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৩ , ৪:৩৭:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ঈদের আগে বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুনের কারণে এখন নিঃস্ব সেখানকার ব্যবসায়ীরা।কম দামে কাপড় কেনার জন্য রাজধানীর বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেট ছিল নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের অন্যতম পছন্দের জায়গা।লগ্নি করা টাকা এবং পুঁজি হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন এসব ব্যবসায়ী।বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতি পোষানোর জন্য অনেকে ইন্স্যুরেন্স করলেও বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই প্রবণতা ছিল অনেক কম।হাতেগোনা দুই একজনকে খুঁজে পাওয়াও খুবই দুরূহ। ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলেও তারা কোনও ইন্স্যুরেন্স করেননি বলে জানান।

যখনই মার্কেটকেন্দ্রিক কোনও দুর্যোগের ঘটনা ঘটে তখনই আলোচনায় উঠে আসে ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি।এছাড়া আর কোনও সময় ব্যবসায়ীরা ইন্স্যুরেন্স নিয়ে মাথা ঘামান না। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন,ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি নিয়ে এখন থেকে কাজ করবেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,নিজেদের পণ্যের নিরাপত্তার জন্য হলেও ব্যবসায়ীদের ইন্স্যুরেন্স থাকা প্রয়োজন।যেকোনও ধরনের দুর্যোগে ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিয়ে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান করা যায়।ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই লাভের বিষয়টি চিন্তা করতে গিয়ে ইন্স্যুরেন্সকে সেভাবে গুরুত্ব দেন না।যদিও সম্প্রতি দেখা গেছে,বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি।

শনিবার ১৫ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেটে আগুন লাগার পর নিজেদের দোকান থেকে যে যার মতো কাপড় বের করার চেষ্টা করতে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের।বিক্রির জন্য দোকানে থরে থরে সাজানো কাপড় আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারা।

ইন্স্যুরেন্সে আগ্রহ ছিল না নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের
সালাউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন,নিউ সুপার মার্কেটের কোনও ব্যবসায়ীর জীবন বিমা বা ইন্স্যুরেন্স করা নেই বলে জানি।কারও কারও ব্যক্তিগত বীমা থাকতে পারে সেটা ভিন্ন বিষয়।ব্যবসায়ীরা সমিতি থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করতেন। ঈদের আগে বেশি লোন দেওয়া হতো সমিতির পক্ষ থেকে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মিজান বলেন,আমার ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এরমধ্যে লোন করে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল দোকানে উঠিয়েছি।দোকান ভাড়া খরচসহ বিভিন্ন খরচের পর আর ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি মাথায় আসেনি।এখন যা ক্ষতি হয়েছে তা আমারই হয়েছে,বুঝতে পারছি না কী করবো।

রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন,যদি কোনও ব্যবসায়ীর ইন্স্যুরেন্স করা থাকে, তারা যদি সেই ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানে ক্লেম করে থাকেন তাদের ক্ষতিপূরণ পাবার জন্য আমরা সহায়তা করবো।এছাড়া যেকোনও ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিটি ব্যবসায়ীকে ইন্স্যুরেন্স করানোর বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করবো।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ বলেন,অগ্নিকাণ্ডের কারণে ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ইন্স্যুরেন্স পলিসি থাকা বাধ্যতামূলক।তবে অনেক ব্যবসায়ীই সেটি করেন না।

তিনি মনে করেন,যে মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা বিবেচনা করে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তাদের সেবা দিতে পারে।সেসব ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কেটের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তাদের প্রিমিয়াম নির্ধারণ করতে পারে।তার ফলে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত প্রিমিয়াম জমা দিয়ে ইন্স্যুরেন্স পলিসি সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন,অগ্নি ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকিতে যে কেউ ইন্স্যুরেন্স করতে পারেন।তবে ইন্স্যুরেন্স করার আগে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা মার্কেটে অগ্নি প্রতিরোধে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে,কতগুলো এক্সিট গেট রয়েছে এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়,ব্যবসায়ীরা ইন্স্যুরেন্স করতে চান না।তারা মনে করেন প্রতি বছর বছর কিংবা ত্রৈমাসিক,মাসিকভাবে ইন্স্যুরেন্সের টাকা দিতে হচ্ছে আর কখন কী দুর্যোগ আসবে সে বিষয়গুলো তারা আমলে নেন না।তবে ইন্স্যুরেন্স করানোর বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।তাহলে যে কোনও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।

আরও খবর

Sponsered content