অপরাধ-আইন-আদালত

দিনমজুর থেকে কোটিপতি হয়ে দেউলিয়া বাবু!

  প্রতিনিধি ১৭ জুন ২০২৩ , ১:৪৫:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।একজন প্রভাবশালী নিকটাত্মীয়ের নাম ভাঙিয়ে তিনি এলাকায় নিজের এমন অবস্থান তৈরি করেন। ফলে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না।সংবাদ প্রকাশের জেরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আলোচনায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু।

এই চেয়ারম্যানই খুনের হোতা বলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।ঘটনার পর পরই তিনি পালিয়ে পঞ্চগড়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করেন।পরে শনিবার ভোরে তাকে আটক করে র‌্যাব।

সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে তিনি পর পর দুবার নৌকার মনোনয়ন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

তবে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর শুক্রবার তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন ‘নির্মাণ শ্রমিক’ থেকে বাবু ধাপে ধাপে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন।হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।

নাদিমের পরিবারের অভিযোগ,চেয়ারম্যান বাবুর বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন নাদিম।এর পর থেকেই হুমকি পাচ্ছিলেন এই সাংবাদিক। তিনিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান; যদিও সেই মামলা খারিজ করে দেয় আদালত।

মামলা খারিজের পরই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক আল মোজাহিদ বাবু।নাদিমের বিরুদ্ধে করা মামলায় মোজাহিদকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছিল।

মোজাহিদ বলেন,চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে রিফাত ছিল, রিফাত ইট দিয়ে নাদিম মামার মাথায় আঘাত করে।বাবু চেয়ারম্যান পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।

বাবু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানা ও আদালতে দুটি মামলা রয়েছে।এ দুটি মামলার বাদী সাবিনা ইয়াসমীন নামে এক নারী।মামলায় তিনি নিজেকে বাবু চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছেন; যদিও সেই স্বীকৃতি তিনি পাননি বলে জানান।

সাবিনার দাবি,বাবু তাকে দুইবার বিয়ে করেন।দ্বিতীয়বার বিয়ের পর তাদের একটি সন্তান হয়।কিন্তু তিনি বিয়ে ও সন্তানকে অস্বীকার করেছেন।

বাবুর সম্পর্কে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন,মাহমুদুল আলম বাবু একসময় সাধুরপাড়া ইউনিয়নের নিজ গ্রামে ছোট্ট মুদির দোকান চালাত।অগ্নিকাণ্ডে দোকান পুড়ে গেলে এরপর চাচাত এক ভাইয়ের সহযোগিতায় বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার নির্মাণ কাজে রাজমিস্ত্রির কাজ করে।

সাবিনা বলেন,ছাত্রজীবনে জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ করলেও পরে বিএনপিতে ভিড়েছিলেন বাবু। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ভোল পাল্টে রাজনীতি ছেড়ে নিরপেক্ষতার ভান ধরেন।২০১১ সালে আওয়ামী লীগে যুক্ত হন বাবু।আওয়ামী লীগে ভিড়েই সাধুরপাড়া ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়।

সাবিনা ইয়াসমীন বলেন,নির্বাচনে ফেল করার পর ২০১৪ সালে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেয়।২০১৬ ও ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।এরপর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হয় বাবু।

বাবুর ক্ষমতার উৎস নিয়ে সাবিনা বলেন,আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক এক বড় কর্মকর্তা তার আত্মীয়।সেটাকে ব্যবহার করে সব জায়গায় নিজের ক্ষমতা দেখাতে থাকে। সাধুরপাড়া ইউনিয়নে অঘোষিত সম্রাট বনে যায়।

সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কয়েকজন জানান,বাবুর নানা ধরনের বৈধ-অবৈধ ব্যবসা আছে।মাদক ব্যবসা,চাঁদাবাজি,চাকরির দালালি সবই তিনি করেন।তবে ক্ষমতার দাপটে কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস করে না।

আরও খবর

Sponsered content