সারাদেশ

তিনটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তদারকি ও সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

  প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ , ১২:১২:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা প্রতিনিধি।।খুলনার কয়রা উপজেলায় কপোতাক্ষ নদ ও কয়রা নদীর চরে ছয় কোটি ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তদারকি ও সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।সেখানে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা,চলাচলের রাস্তা,বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। ধসে পড়েছে ঘরের মাটি। এত সংকট নিয়ে সেখানে থাকতে চান না উপকারভোগীরা। ফলে অনেকে ইতিমধ্যে ঘরে চলে গেছে। কেউ কেউ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অসহায় ও ভূমিহীন উপকারভোগীদের জন্য গড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো অপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করায় অধিকাংশ ঘর এখন ফাঁকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারী রোকেয়া বেগম বলেন, অনেক দূর থেকে খাবার পানি আনতে হয়।বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ট্যাংক থাকলেও তার নিচে ছিদ্র হয়ে পানি পড়ে যায়।দীর্ঘদিন জোয়ারের পানি ওঠানামা করায় ঘরের মাটি ধুয়ে নদীতে চলে গেছে।যাঁরা এখন বসবাস করছেন, তাঁরাও ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য স্থানে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কয়রা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় বিভিন্ন দুর্যোগে গৃহহীন মানুষের একটি ঠিকানার জন্য কয়রার তিনটি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের চর ভরাট করে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ২২০টি ঘর।মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের কয়রা নদীর চর ভরাট করে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ১৭০টি ঘর।উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের শেওড়াপাড়া গ্রামের কপোতাক্ষ নদের চর ভরাট করে ১ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ৬০টি ঘর।

বাগালী ইউনিয়নের শেওড়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী বিলকিস বেগম বলেন, বাঁধের পশ্চিম ও উত্তর পাশ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জোয়ারের পানি উঠে ঘরের আঙিনা ডুবে যায়। খাওয়ার পানির ব্যবস্থা না থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। ঘরের মাটি ও রাস্তা ধসে যাওয়ায় ভ্যান এবং অটোরিকশা চালিয়ে যাঁরা জীবনযাপন করেন,তাঁরা ঘর ফেলে অন্য স্থানে চলে গেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭০ ঘরের ১১০টি ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে।বাগালী ইউনিয়নের শেওড়াপাড়া গ্রামের ৬০টি ঘরের মধ্যে ৪৫টি ঘরের মানুষ অন্য স্থানে চলে গেছেন।কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২০টি ঘরের ১০০টি ঘরেই কেউ বসবাস করেন না।নদী তীরে নির্মাণ করা এই তিন আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমস্যা একই ধরনের।একটিতেও নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সব নলকূপ নষ্ট হয়ে গেছে।বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার থাকলেও নেই বিদ্যুৎ–সংযোগ।নাজুক অবস্থায় রয়েছে নদীর পানি রক্ষার বাঁধ।নদীর জোয়ারের পানিতে অধিকাংশ ঘর থেকে মাটি সরে গেছে।নেই যোগাযোগের রাস্তা।ফলে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে উপকারভোগী বাসিন্দাদের।নাগরিক সুবিধা না থাকায় ইতিমধ্যে ঘর ছেড়ে অন্য স্থানে চলে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ।দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানের দাবি করে এলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের চরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী ও মো. মোস্তফা জানান,তাঁরা সবাই কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এই আবাসনে এসে আশ্রয় নেন।কিন্তু এখানকার ঘরগুলোতে আলোর ব্যবস্থা নেই।শৌচাগারও ভেঙে গেছে।নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই ঘরগুলো প্লাবিত হয়।তাঁদের থাকার অন্য কোনো জায়গা নেই বলেই এখানে বাধ্য হয়ে থাকছেন।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান বলেন,তিনি উপজেলায় নতুন যোগদান করেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে বসবাসরত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।শিগগির ঘরগুলো বসবাস উপযোগী করতে তিনি তদারক শুরু করবেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ফাঁকা পড়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন,আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সাবেক চেয়ারম্যানের আমলে করা।অপরিকল্পিতভাবে নদীর চরে হওয়ায় সেখানে কেউ থাকতে চান না।যেখানে মৌলিক অধিকার ও নাগরিক সুবিধা পাওয়া যাবে না,সেখানে তো কেউ থাকতে চাইবে না।

আরও খবর

Sponsered content